• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

অভিশাপ দেয়ার আগে একবার ভাবুন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২০  

আমরা অনেক সময় রাগের কারণে অপছন্দের লোকের প্রতি আল্লাহর গজব নেমে আসার অপেক্ষায় থাকি। তার যেকোনো ধরনের ক্ষতি বা ধ্বংস কামনা করি। এমন গর্হিত কাজ সমাজের কিছু মানুষের অভ্যাসেও পরিণত হয়ে গেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব সম্পূর্ণ হারাম ও অনুচিত। অনেক সময় আমাদের এসব অভিশাপ হিতেবিপরীত হয়, এটা হাদিস শরিফে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

এক মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে অভিশাপ দেয়া সর্বাবস্থায় হারাম। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো অমুসলিমকেও লানত করা যাবে না, যতক্ষণ না কুফরি অবস্থায় তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হবে।

হাদিসে বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। ’ (তিরমিজি: ২৬২৭; আবু দাউদ : ২৪৮১)।

অপর মুসলমান কষ্ট পেতে পারে এমন কাজ করা কোনো মুসলমানের জন্য শোভা পায় না। কখনো অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে, বোঝার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে মাফ চেয়ে নেয়া উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তেমনিভাবে কারো কাছ থেকে কোনো জুলুমের শিকার হলেও তাকে ক্ষমা করে দেয়াই মহৎ চরিত্রের পরিচায়ক।

হাদিসে এসেছে, ‘রাসূল (সা.) বলেছেন, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে তুষ্ট করো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার (ক্ষমা) করো। (মুসনাদে আহমদ: ১৭৩৩৪)।

তেমনিভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়াও কোনো মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০৮৮)।

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর আল্লাহর লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)।

অভিসম্পাতকারী আখেরাতেও মান-মর্যাদা পাবে না। রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৯৮)।

এসব হাদিস দ্বারা এ কথা সহজেই বোঝা যায় যে- অন্যায়ভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রিয় নবী (সা.) অভিশাপ ও অভিশাপকারীকে পছন্দ করেননি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে  নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়, অতঃপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো  উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯০৭)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর বাতাসকে লানত (অভিশাপ) দিল, তখন নবীজি (সা.) বললেন, বাতাসকে লানত দিও না, কেননা এ তো আল্লাহরপক্ষ থেকে নির্দেশিত। কেউ যদি কোনো বস্তুকে লানত বা অভিশাপ দেয়, আর সে যদি ওই লানতের পাত্র না হয়, তাহলে সেই লানত লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। (তিরমিজি: ১৯৭৮; আবু দাউদ: ২/২৭৬)।

রাসূলের (সা.) হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, যে লানত বা অভিশাপ দেবে সে যদি অভিশাপের উপযুক্ত না হয়, তাহলে এই অভিশাপ তার দিকে যায় না। বরং অভিশাপকারীর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। এ জন্য অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া চাই।