• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

আজ হিলি হানাদারমুক্ত দিবস

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯  

দেখতে দেখতে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেল। সারাদেশের মতো হিলির স্বাধীনতাকামী মানুষগুলোও চরম সাহসিকতা নিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। হানাদার বাহিনী থেমে থেমে মেতে উঠেছিল নির্মম হত্যাযজ্ঞে। আক্রমণ চালিয়েছিল নিরীহ হিলি সীমান্তবাসীর ওপর। প্রায় এক কিলোমিটার সুরঙ্গ করে সন্মুখ যুদ্ধে মেতেছিল হানাদারেরা।

হিলি হানাদার মুক্ত দিবস আজ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে হাকিমপুরের বোয়ালদাড় গ্রামের মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরুদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।

মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৭১ সালে দেশে যখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল সে অবস্থায় সারাদেশের সঙ্গে হিলি এলাকার নেতাদের আহবানে সমাজসেবক খলিলুর রহমান ও ডা. আবুল কাশেমকে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। স্কুল কলেজের উৎসাহী যুবক, আনসার ও মুজাহিদদের সমন্বয়ে বাংলা হিলি বালিকা বিদ্যালয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হয়।

২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বর্বর হামলায় ঢাকা আক্রমণের পর পাক বাহিনীরা যাতে হাকিমপুরে প্রবেশ করতে না পারে সেই লক্ষ্যে হিলির সেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকেই সড়কে গাছ কেটে ও সড়ক খনন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে থানা ও ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ক্যাম্প থেকে সেচ্ছাসেবক বাহিনীর কাছে ৩০৩টি রাইফেল হস্তান্তর করা হয়। 

এ সময় তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর নিজাম উদ্দিন ১৭টি গাড়িবহরসহ বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফুলবাড়িতে এসে অবস্থান নেন এবং ওই সেচ্ছাসেবক দলকে হিলি ইপিআর ক্যাম্পের সুবেদার শুকুর আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন ইপিআরকে বিহারী অধ্যুষিত পার্বতীপুরের হাবড়ায় পাকসেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য পাঠায়। 

এসময় সেখানে সেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে পাকহানাদারদের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। শেলিং ও বিভিন্ন ধরনের গোলার আঘাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নয় যোদ্ধা সেসময় শহীদ হন। নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১১ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতা ও মুক্তিবাহিনীর বীরত্বে হিলি শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে হিলিতে ঘটে যাওয়া পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ আর সম্ভ্রমহানির মতো ঘট আজও কাঁদিয়ে তোলে দিনাজপুরের হিলিবাসীকে। প্রতি বছর মিত্রবাহিনীসহ সব শহীদের স্মরণে ১১ডিসেম্বর দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করে পালন করা হয়। হিলি মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনগুলোর আয়োজনে সকাল থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনায় মিত্র বাহিনীসহ সব শহীদের স্মরণে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তভম্ভ ‘সম্মুখ সমর’।

সহকারী কমান্ডার আলহা শামসুর আলম মণ্ডল জানান, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর হিলির মুহাড়াপাড়ায় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন ৭নম্বর সেক্টরের ক্যাম্পের আনোয়ারসহ ৩৪৫ জন মুক্তি সেনা। আহত হয়েছিলেন আরো ১৪শ’ জন।

দু’দিনের তোড়ের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। তাদের সাথে গা ঢাকা দিলো রাজাকার, আলবদর, আল শামস। আজকের এ দিনে আনন্দ উলাসে লাল সবুজের পাতাকা উড়িয়ে দিলো এলাকাবাসী।