• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

আল কোরআনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০১৯  

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে মানব জাতি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেই মানুষকে ছেড়ে দেননি বরং তাকে সঠিক ও অন্ধকার থেকে আলোর পথে পরিচালনা করার জন্য  জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন।

আর নবী-রাসূলগণ সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনিত, সুতরাং তারা যে নবী একথা প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ প্রত্যেক নবীর সঙ্গে মুজিযা প্রেরণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর নবুওয়াতকে প্রমাণ করবার জন্য আল্লাহ অসংখ্য মুজিযা প্রেরণ করেছেন। তার ভেতরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য হলো আল কোরআন।

আর তাই এই কোরআনের রয়েছে কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, যার কারণে সে সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযার দাবিদার। আমরা আল কোরআনের সেই বিষ্ময়কর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!

(১) আল-কোরআন সর্বোশ্রেষ্ট আসমানী কিতাব: পবিত্র কোরআন স্বয়ং আল্লাহর তায়ালার বাণী যা সর্বোশেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর ওপর নাজিল করা হয়েছে। আল-কোরআন আসমানী কিতাবসমূহের সর্বোশেষ কিতাব। এর পর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো কিতাব নাজিল হবে না। তাই কিয়ামত পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান সম্বলিত আল-কোরআনই সর্বোশেষ ও সর্বোশ্রেষ্ট আসমানী কিতাব। কোরআনে আল্লাহ বলেন: আলিফ-লাম-রা!এ কিতাব; যা আপনার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে আপনি বিশ্বমানবতাকে তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অন্দকারাছন্ন জীবন থেকে বের করে আনতে পারেন আলোকোজ্জল রাজপথে। যিনি মহাপরাক্রমশালী, সুপ্রশংসিত। (সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ১)।

(২) আল-কোরআন বিশ্বজনীন গ্রন্থ: আল-কোরআন নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, দেশ বা কালকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়নি। বরং সর্বোকালের সমগ্র বিশ্বমানবতার হিদায়াতের সওগাত নিয়ে নাজিল হয়েছে। তাই এটা চিরন্তন ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ। আল্লাহ তায়ালা বলেন: রমজানের মাস, এ মাসেই কোরআন নাজিল করা হয়েছে , যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। (সূরা: আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন: প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব নাজিল করেছেন এবং এর মধ্যে কোনো বক্রতা রাখেননি৷ (সূরা: কাহাফ, আয়াত-১)।

(৩) আল কোরআন নির্ভুল ও অতীব বিশুদ্ধ গ্রন্থ: মহান আল্লাহর নাজিলকৃত জীবন বিধান কোরআন নিরভুল ও অতীব বিশুদ্ধ গ্রন্থ। এর মধ্যে কোনো সন্দেহের লেশমাত্র নেই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই । (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১)।

(হে নবী!) আমি সব মানুষের জন্য এ সত্য (বিধানসহ) কিতাব নাজিল করছি৷ (সূরা: আয-যুমার, আয়াত: ৪১)।

হে নবী! তোমার রবের কিতাবের মধ্য থেকে যাকিছু তোমার ওপর অহী করা হয়েছে তা (হুবহু) শুনিয়ে দাও৷ তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই। (সূরা: কাহাফ, আয়াত: ২৭)।

হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, নিজের পক্ষ থেকে এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন করা আমার কাজ নয়৷ আমি তো শুধুমাত্র আমার কাছে যে অহী পাঠানো হয়, তার অনুসারী৷ (সূরা: ইউনুস, আয়াত: ১৫)।

 (৪) আল-কোরআন পরিপূর্ণ জীবন বিধান: মহাগ্রন্থ আল-কোরআন হচ্ছে সর্বোশেষ পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এতে মানব জাতীর পরিপূর্ণ সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। এরপর কোনো আসমানী কিতাব নাজিলের প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ এ গ্রন্থে মানব জীবনের ইহকালিন ও পরকালীন সমস্ত বিষয় উল্লেখ রয়েছে: আমি এ কিতাব তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যা সব জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে এবং যা সঠিক পথনির্দেশনা, রহমত ও সুসংবাদ বহন করে তাদের জন্য যারা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে৷ (সূরা: আন-নাহল, আয়াত: ৮৯)।

আর ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি। (সূরা: আল-মায়েদা, আয়াত: ৩)।

(৫) আল-কোরআন চিরন্তর চ্যালেঞ্জের মুকাবিলায় নাজিলকৃত গ্রন্থ: যখন এ গ্রন্থ হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট নাজিল হয় তখন আরবের লোকেরা কোরআনের ভাষার বিশুদ্ধতা, ভাষা অলংকার, রচনাশৈলী, বলিষ্ট যুক্তিধারা, অনুপম বিন্যাস ও ভাষার মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে ইসলামের দিকে ধাবিত হতে শুরু করে। কিন্তু কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী কপট মুনাফিক জিদের বশবতী হয়ে একে কবিতা, যাদু বলে নানা অপবাদ রটাতে থাকে। আল্লাহ তায়ালা তাদের লক্ষ্য করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, যদি তোমরা সত্যি ইহা কোনো মানুষের রচনা হয়ে থাকে তা হলে অনুরূপ একটি বাক্য রচনা করে দেখাও। কোরআনে বলা হয়েছে: আর যে কিতাবটি আমি আমার বান্দার ওপর নাজিল করেছি সেটি আমার কিনা- এ ব্যাপারে যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করে থাকো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত সমর্থক গোষ্ঠীকে ডেকে আনো এক আল্লাহকে ছাড়া আর যার যার চাও তার সাহায্য নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে এ কাজটি করে দেখাও ৷ (সূরা: আল-বাকারা, আয়াত :২৩)। বলে দাও, যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কোরআনের মতো কোনো একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়ে গেলেও৷ (সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৮৮) এই চ্যালেঞ্জ মুকাবিলায় সে যুগেই নয় আজকের বিজ্ঞানের যুগে ও কেউ সফল হয়নি। এবং কোনো দিন হবেও না। সকলেই এক বাক্যে পুরানো সে কথাই বলতে বাধ্য হচ্ছে: না- এটা কোন মানুষের বাণী নয়।

(৬) আল-কোরআন মুক্তির একমাত্র পথ: আল-কোরআন অনুসরণেই পথহারা জাতির পথের দিশা পেতে পারে। কোরআন হচ্ছে মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে- এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সর্তকবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ। (সূরা: আলে-ইমরান, আয়াত: ১৩৮)।

আগের রাসূলদেরকেও আমি উজ্জ্বল নিদর্শন ও কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছিলাম এবং এখন এ বাণী তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে তুমি লোকদের সামনে সেই শিক্ষার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে যেতে থাকো। যা তাদের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যাতে লোকেরা (নিজেরাও) চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা: আন-নাহল, আয়াত: ৪৪)।

(৭) আল-কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব: আল-কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব ব্যাপক যে, ইহা যদি পাহাড়ের নাজিল করা হতো তা হলে পাহাড়ও আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে যেত: অথচ মানুষের মতো চেতনা শক্তি নেই। কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ চিন্তা-শক্তিসম্পন্ন জীবন হয়েও আল-কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করে না এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ কোরআনে বলেন: আমি যদি এই কোরআনকে কোনো পাহাড়ের ওপর নাজিল করতাম, তাহলে তুমি দেখতে পেতে তা আল্লাহর ভয়ে ধসে পড়ছে এবং ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে ৷ আমি মানুষের সামনে এসব উদাহরণ এ জন্য পেশ করি যাতে তারা (নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে) ভেবে দেখে। (সূরা: আল-হাশর, আয়াত: ২১)।

(৮) আল-কোরআনের বিধান অমান্য করার পরিণতি: যারা আল্লাহর নাজিল করা বিধান অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করে না তারাই কাফের। (সূরা: আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪)।

আমার স্পষ্ট বয়ান সম্বলিত আয়াতসমূহ নাজিল করেছি। অস্বীকারকারীদের জন্য অপমানকর আযাব। (সূরা: সূরা আল মুজাদালাহ, আয়াত: ৫)।

(৯) আল-কোরআন মুখস্থকারীর সংখ্যা অগণিত: এটি হচ্ছে পবিত্র কোরআনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যে, এই পৃথিবীতে গোটা কোরআনকে মুখস্ত করেছে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি পৃথিবীতে অন্যান্য বইয়ের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে, সে সমস্ত বইয়ের বিশেষ বিশেষ অধ্যায় কিছু মানুষের মুখস্ত থাকে কিস্তু শুধু মাত্র কোরআনের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্তকারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ রয়েছে, অথচ কোরআনটা কতো বড় একটু লক্ষ করুন এ কোরআনের রয়েছে-

১১৪ টি সূরা, ৩০ পারা, ৭ টি মনজিল, ৫৬১ টি রুকু, ৮৬৪৩০ টি শব্দ, ৫৩২৪৩ টি যবর, ৩৯৫৮২ টি যের,৮৮০৪ টি পেশ, ১২৫৩ টি তাশদীদ, এবং ১০৫৬৮১ টি নুক্তা রয়েছে। এত বড় বিশাল গ্রন্থ মুখস্ত করা সহজ ব্যাপার নয় তাও আবার মুখস্ত করে ১০ থেকে ১২ বছরের ছেলে মেয়েরা। সত্যিই বড় অবাক হতে হয়। যদি কখনো কাফির, মুশরিকেরা গোটা পৃথিবীর কোরআনকে জালিয়ে দেয় তবুও এ কোরআনকে আল্লাহ হাফেজদের মাধ্যমে হেফাযত করবেন।

(১০) আল-কোরআনের কোনো আয়াত প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বিপরীত নয়: পবিত্র কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এই কোরআনের অসংখ্য আয়াতে বিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনায় এসেছে। অথচ কোরআনের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, আধুনিক প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল। তবে মনে রাখতে হবে বিজ্ঞানের যে তত্ত্বটি এখনো প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে যেমন প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব মতে ছায়া পথগুলো গঠনের পূর্বে ব্যাপক গ্যাসিয় বস্তু বা মেঘমালা বিদ্যমান ছিল প্রাথমিক স্তরের সৌর, বস্তুগুলোর বর্ণনার ক্ষেত্রে বাষ্প শব্দটি অধিকতর ব্যবহার হয়েছে এবার দেখুন এ সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেন, ﻂﺎﺌﻌﻴﻥ.........ﺜﻢﺍﺴﺘﻮﻯﺇﻠﻰﺍﻠﺴﻤﺎﺀ অর্থাৎ, অতঃপর তিনি আকাশ রাজ্যের দিকে লক্ষ্য করলেন। তখন তা ছিল শুধুই ধোয়া তিনি এটাকে এবং জমিনকে উদ্দেশ্য করে বল্লেন অস্তিত্ব ধারণ কর ইচ্ছাই হোক বা অনিচ্ছাই হোক তারা উভয়েই বলল আমরা স্বেচ্ছাই অনুগতদের মতো অস্তিত্ব ধারণ করলাম। (আল-কোরআন)

আর একটা উদাহরণ দেয়া যাক অণু হচ্ছে কোনো বস্তুর ক্ষুদ্রতম অংশ কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলেছে অণুকেও ভাঙ্গা সম্ভব অণু বিভাজ্য হতে পারে এবার দেখুন কোরআন কী বলে, কাফিররা বলে আমাদের ওপর কিয়ামত আসবে না বলুন কেন আসবে না আমার পালনকর্তার শপথ অবশ্যই আসবে যিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত নভমন্ডল এবং ভুমন্ডল অণু পরিমান কোনো কিছু তার অজ্ঞাত নয়, না তার থেকে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ বরং এক সুস্পষ্ট কিতাবে তা সংরক্ষিত (আল কোরআন)।

প্রিয় পাঠক অতঃএব প্রমানিত হলো যে পবিত্র কোরআনের সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বর্তমান প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল। এমনিভাবে আল্লাহ পাক ভূ-বিদ্যা, সমুদ্র বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণী বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বিষদ ভাবে আলোচনা করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রতিটি তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল।

(১১) আল-কোরআনের আলোচনায় কোন সীমাবদ্ধতা নেই: আমরা জানি যে কেউ যখন কোনো বিষয়ে চিন্তা করে বা কোনো কথা বলে বা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন তার সেই কথা বলা চিন্তা-চেতনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বিশেষ সময় স্থান কাল পাত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। শুধু তাই নয় এই সকল কর্মকান্ড ব্যক্তি স্বার্থ বা হীনমন্যতার ঊর্ধ্বে খুব কমই উঠতে পারে। এই সকল কর্মকান্ড সম্পাদনকারিগণ যদি পুরুষ অথবা নারী  হয়ে থাকে তাহলে তার কথা বলা বা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা পুরুষ অথবা নারী কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। যদি সে হয়ে থাকে শ্বেতাঙ্গ অথবা কৃষ্ণাঙ্গ তাহলে তার কথা বার্তা বা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা  শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে।

এটা মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আর এ জন্যই মানুষের চিন্তা-চেতনা প্রসূত কোনো মতবাদ দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে স্থায়ী শান্তি দেয়া সম্ভব নয়। কারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা বিশেষ সীমাবদ্ধতার বেড়াই আবদ্ধ থাকে কিন্তু যেহেতু এ কোরআন কোনো মানুষের পক্ষ থেকে নাজিল হয়নি বরং এ কোরআন নাজিল হয়েছে এমন এক জন স্রষ্টার পক্ষ থেকে, যিনি সকল প্রকার ব্যক্তি স্বার্থপরতা বা হীনমন্যতা থেকে পবিত্র তার কাছে রয়েছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পুংখানুপুঙ্খ জ্ঞান।

এ কারণেই পবিত্র কোরআনের আলোচনায় পাওয়া যাবে না কোনো সীমাবদ্ধতা বরং তার আলোচনায় পাওয়া যাবে এক বিশাল প্রশস্ততা, এ কোরআনের আলোচনায় বিশেষ কোনো দেশ, জাতি, সময় বা স্থানকে সম্বোধন করা হয়নি, সুতরাং কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র।

(১২) একটি আয়াতের সঙ্গে আর একটি আয়াতের কোনো বৈপরীত্ব নেই: পবিত্র কোরআন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাজিল হয়েছে, অথচ একটি আয়াতের সঙ্গে আর একটি আয়াতের কোনো বৈপরীত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ﻛﺛﻴﺭﺍ..........ﺍﻓﻼﻳﺗﺪﺒﺭﻭﻥ তারা কী উপলব্ধি করে না? যে এ কোরআন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে নাজিল  হতো তাহলে তোমরা এর মধ্যে অনেক বৈপরীত্ব দেখতে পেতে। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৮২)।

প্রিয় পাঠক একটি বিষয় লক্ষ্য করুন মানুষের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনশীল মানুষের ভেতরে যারা লেখক আছেন তারা ১০ বছর আগে যে বিষয়টি লিখেছেন, দেখা যায় ১০ বছর পরে লিখেছেন তার সম্পুর্ণ বিপরীত কথা অথবা মানুষ তাদের মনের অজান্তেই এমন কথা বলেন বা লেখেন যা তার পূর্বের অনেক লেখা বা কথার বিপরীত  সুতরাং এ কোরআন যদি কোনো মানুষের রচনা করা হত তাহলে অবশ্যই এ কোরআনে বিপরীত ধরনের কথা-বার্তা পাওয়া যেতো, কিন্তু যেহেতু এ কোরআন নাজিল হয়েছে মহান স্রষ্টার কাছ থেকে, সেই জন্যই এ কোরআনের ভেতরে কোনো ধরনের বৈপরীত্ব পাওয়া যায় না।

(১৩) বারংবার পড়লেও খারাপ লাগেনা: মহাগ্রন্থ আল কোরআনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এ কোরআন যতবারই পড়া হবে ততবারই ভালো লাগবে। প্রিয় পাঠক লক্ষ করুন একটা খুব জনপ্রিয় গান সেই গানটি কয়েক বার শোনার পর স্বাভাবিক ভাবেই আর ভাল লাগে না। কিন্তু এ কোরআনকে আপনি যতবার পড়বেন ততবার মনে হবে এই মাত্র জিব্রাইল (আ.) নাজিল করলেন, কারণ কোরআন কখনো পুরাতন হবে না রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআন কোনো দিন পুরাতন বা জীর্ণ হবে না, এর আশ্চর্য ধরনের বিশ্বয়কারীতা কখনো শেষ হবে না। কোরআন হচ্ছে হেদায়েতের মশাল এবং এই কিতাব জ্ঞান ও বিজ্ঞানের এক কূল কিনারা হীন অগাধ জলধি। (তাফসীরে সাইদী)।

সূরা ফাতিহা আমরা দিন রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে শুধুমাত্র ফরজ নামাজেই ১৭ বার পাঠ করি এছাড়াও সুন্নত ও নফল নামাজে অগনিত বার পড়ে থাকি। কিন্তু আজো কারো মুখে শুনিনি যে সূরা ফাতেহা পড়তে বা শুনতে ভালো লাগে না।

আসুন আমরা বেশি বেশি কোরআন অধ্যয়ন করি। এবং কোরআনকে একমাত্র জীবন বিধান মনে করে তার আলোকে জীবন গড়ি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।