• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আসামের এনআরসি-র ইতিবৃত্ত

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০১৯  

১৯৫১ সালের পর পরিচালিত প্রথম আদম শুমারির মধ্য দিয়ে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের জুনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে কোটি ৮৯ লাখকে সংশোধিত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। রয়টার্স নিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সে সময় জানিয়েছিল, রাজ্যের ৪০ লাখ, হাজার ৭০৭ মানুষ তালিকায় স্থান পায়নি। এদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী কিংবা মুসলমান হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বছর জুনে তালিকায় আরেক দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০১৮ সালে সংশোধিত তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে থেকে লাখেরও বেশি মানুষকে বহিষ্কার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সবমিলে বাদ পড়া ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনটিকে ঘিরে উদ্বিগ্ন ছিলেন। বাদ পড়াদের মধ্যে ৩৬ লাখ মানুষ নাগরিক তালিকায় স্থান পাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আর খসড়া তালিকায় স্থান পাওয়া কোটি ৮৯ লাখ মানুষের মধ্যে লাখের স্থান পাওয়া নিয়ে আপত্তি উঠেছিল।

এনআরসি থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙালি হিন্দুদের বাদ পড়ায় কয়েকজন বিজেপি নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে আসামের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র সরকার নতুন আইনের কথা বিবেচনা করছে। যার ফলে তালিকায় স্থান পাওয়া বিদেশিদের বাদ দেওয়া যায় এবং বাদ পড়া সত্যিকার নাগরিকদের অন্তর্ভূক্ত করা যায়।

শুক্রবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল জানিয়েছেন, এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া বাসিন্দারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন। তিনি বলেন, আসাম সরকার বাদ পড়াদের দেখভাল করবে এবং যাতে করে করে অপ্রয়োজনীয় হয়রানির শিকার হতে না হয় তা নিশ্চিত করবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যতক্ষণ আপিল চলবে ততক্ষণ কাউকে বিদেশি বলা যাবে না। কারণ কাউকে বিদেশি বলার এখতিয়ার শুধু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বিদেশি ঘোষণা করা যাবে না সব আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। বাদ পড়া ব্যক্তি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন এবং আবেদনের সময়সীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।

নিরাপত্তার চাদরে পুরো রাজ্য

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ঘিরে রাজ্য জুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। গুয়াহাটিসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৫১ কোম্পানি সেনা মোতায়েন করেছে আসাম সরকার। মোতায়েন করা হয়েছে ৬০ হাজার পুলিশ সদস্য এবং কেন্দ্র থেকে আসামে পাঠানো হয়েছে আরও ২০ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য।

শুক্রবার আসাম পুলিশের মহাপরিদর্শক কুলাধান শৈকিয়া জানিয়েছেন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ সামনে রেখে রাজ্যে সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের (সিএপিএফ) অতিরিক্ত ৫১ কোম্পানি সেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি জানান অতিরিক্ত এসব সেনা বর্তমানে রাজ্যে নিয়োজিত ১৬৭ কোম্পানি সিএপিএফ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চালানো হচ্ছে বলেও জানান এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

এনআরসি-তে বাদ পড়াদের কী হবে?

অনলাইনে প্রকাশ-করা বা সেবাকেন্দ্রে ঝুলিয়ে দেওয়া তালিকায় যাদের নাম থাকবে না, তাদের অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশিদের জন্য বন্দী শিবিরে (ডিটেনশন সেন্টার) পুরে দেওয়া হবে কিংবা বাংলাদেশেপুশব্যাককরা হবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। আসাম সরকার জানাচ্ছে, নানা নথিপত্র পেশ করেও যারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি, তাদেরফরেনার্স ট্রাইব্যুনালেআবেদন করার সুযোগ থাকবে। আসাম জুড়ে এই ধরনের প্রায় একশোটি ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যেই কাজ করছেআগামী এক সপ্তাহের ভেতর চালু করা হবে আরও একশোটি। মাস কয়েকের ভেতর মোট হাজারখানেক ট্রাইব্যুনালে এইচিহ্নিতবিদেশিদের আবেদনের শুনানি হবে। ট্রাইব্যুনালেও আবেদন ব্যর্থ হলে তাদের সুযোগ থাকবে উচ্চতর আদালতেঅর্থাৎ হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার। রাজ্যের যে সব গরিব প্রান্তিক মানুষজন এতদিনেও ঠিকমতো কাগজপত্র দিতে পারেননি, বা প্রতি বছরের বন্যায় যাদের ঘরের সর্বস্ব ভেসে যায়তারা ট্রাইব্যুনালে বা হাইকোর্টে গিয়ে নতুন নথিপত্র পেশ করে এনআরসি- রায় উল্টে দিতে পারবেন এমনটা কেউই আশা করছেন না বলা চলে।