• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

‘ঈদ’ যে কারণে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২০  

‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। বছরে দুবার ঈদ আসে। প্রথমে ঈদুল ফিতর। পরে ঈদুল আজহা। প্রথমটি দান করার উৎসব। দ্বিতীয়টি ত্যাগ করার উৎসব।  এ দুটি ঈদ উৎসব আমাদের মনে এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে আমরা এ দিন সবকিছু ভুলে যাই। শত্রু-মিত্র, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকে না। ঈদের খুশি সবার সঙ্গে ভাগ করে নেই। যে কারণে সব খানে সব ক্ষণে দুই ঈদই রূপ নেয় আনন্দ উৎসবে।

মহান পুণ্যময় এই দিবসটি উদযাপন শুরু হয়েছিল হিজরি ২য় সালে। অর্থাৎ প্রায় ১৫০০ বছর আগে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মদিনায় হিজরতের পরেই ঈদুল ফিতর উৎসব পালন শুরু হয়। অর্থাৎ বদরের যুদ্ধে ‘চূড়ান্ত মীমাংসাকারী’ বিজয় সে বছরেই অর্জিত হয়েছিল। 

হজরত আনাস (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী করিম (সা.) মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী বছরে দুটি দিবসে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। মহানবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দিবস দুটি কী? ওরা বলল, নওরোজ ও মিহিরজান। শরতের পূর্ণিমায় পালিত হয় নওরোজ উৎসব। আর বসন্তের পূর্ণিমায় পালিত হয় মিহিরজান উৎসব। জাহেলি যুগ থেকেই এই দুটি দিবসে আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়েই পালিত হয়ে আসছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের উক্ত দিবস দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস দান করেছেন। তা হলো ঈদুল আজহার দিন এবং ঈদুল ফিতরের দিন।’

কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) জানতেন নওরোজ ও মিহিরজান এই উৎসব দুটির রীতি-নীতি, আচার অনুষ্ঠান ছিল সম্পূর্ণরূপে ইসলামের আদর্শ পরিপন্থী। জরথুস্ত্র প্রবর্তিত নওরোজ ছিল নববর্ষের উৎসব। ছয় দিনব্যাপী এই উৎসবের মধ্যে মাত্র একদিন ছিল সাধারণ মানুষের জন্য নির্দিষ্ট। বাকি পাঁচ দিন ছিল সম্ভ্রান্ত বা ধনী শ্রেণীর মানুষের জন্য নির্ধারিত। এজন্য গরিব শ্রেণীর মানুষ পাঁচ দিন আনন্দ অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো। ঠিক সেভাবেই ছয় দিনব্যাপী মিহিরজান উৎসবেও শুধুমাত্র একদিন সাধারণ দরিদ্র মানুষেরা উপভোগ করতে পারত। সুতরাং শ্রেণী বৈষম্য, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য এবং অশালীনতায় ভরা ছিল ওই উৎসব দুটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কথা মতো আরববাসীরা নওরোজ ও মিহিরজান উৎসব বাদ দিয়ে বছরে দুটি ঈদ উৎসব পালন শুরু করে। এর ফলে জন্ম নেয় শ্রেণী বৈষম্যহীন, সাম্য মৈত্রি ও অশালীনতামুক্ত আরব সমাজ।

ঈদ উৎসব পালনের আরো একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। তা হলো- আরবের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে নানারকম উৎসবের প্রচলিন ছিল। উকাজের মেলা ছিল এ ধরনের একটি বর্ণাঢ্য আয়োজন। এসব উৎসব প্রায়শই নানা অশ্লীল ও রুচিহীন আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ থাকত। অন্য দিকে মুসলমানদের জন্য তখন পর্যন্ত কোনো উৎসবের প্রচলন হয়নি। তাদের নিষ্কলুষ বিনোদনের বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেন। এবং হিজরির ২য় সাল থেকেই রমজান শেষে ঈদ-উল-ফিতর উৎসব উদযাপনের সূচনা হয়। তারপর শুরু হয় ঈদ-উল-আজহা উদযাপন। এভাবেই শুরু হলো বছরে দুটি ঈদ উদযাপন। এর ফলে জন্ম নেয় শ্রেণী বৈষম্য বিবর্জিত সার্বজনীন আনন্দ উৎসবের।

মুসলিমদের উৎসবের বৈশিষ্ট্য: 

মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে এবাদাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই বিষয়টি বুঝতে হলে ইসলামের সার্বিকতাটাকে বুঝতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠান এর সমষ্টি নয়, বরং এটা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের গোটা উদ্দেশ্যেই হচ্ছে এবাদাত, যেমনটি কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছ্ন,

‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। অর্থাৎ ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা: যারিয়াতম, আয়াত: ৫৬)।

সেজন্য মুসলিম জীবনের আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ ও অশ্লীলতা নয়। বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে। কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। তাই মুসলিমের জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাত এর প্রতি তাদের বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি তাদের ভয় ও ভালোবাসা।

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ সাওম পালন করার পর পরই মুসলিমরা পালন করে ঈদুল ফিতর। কেননা এই দিনটি আল্লাহর আদেশ পালনের পর আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার ও ক্ষমার ঘোষণা পাওয়ার দিন বিধায় এটি সাওম পালনকারির জন্য বাস্তবিকই উৎসবের দিন।