• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

উদ্বোধনের অপেক্ষায় নীলফামারীতে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা কেন্দ্র

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২০  

বাঁশ-বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?- কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী’র কাজলা দিদি কবিতাটি এখনো মনে করিয়ে দেয় কালের আবর্তে হারানো বাঁশ বাগানের কথা। সেই বাঁশ বাগানের ঐতিহ্য ফেরাতে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় স্থাপিত হয়েছে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম ওই কেন্দ্রটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষার দিন গুনছে। 

আঞ্চলিক ওই গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, কাঠের আসবাবপত্র তৈরীতে বন ধ্বংসের হার ব্যাপক। বনের গাছ বাঁচাতে বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরী করা হলে গাছ রক্ষা পাবে। একটি বাঁশঝাড়ের ৩০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা থাকে। বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র দর্শণীয় ও পরিবেশ বান্ধব। এর স্থায়িত্ব প্রায় ২৫ বছর, দামও অর্ধেক। একটি সেগুন গাছ পরিপক্ক হতে সময় লাগে অন্তত ৪০ বছর। আর একটি বাঁশ পরিপক্ক হতে সময় লাগে তিন থেকে চার বছর।

আমরা জানি এক সময়ে গ্রামীণ জনপদে বাঁশ বাগানের সংখ্যাও ছিল অধিক। সে সময়ে গৃহস্থালী, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরী পণ্যের আধিক্য ছিল। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের বাড়ি-ঘর তৈরী হতো বাঁশ দিয়েই। সৌখিন আসবাব পত্র তৈরীর কাজেও বাঁশের ব্যবহার ঘিরে ক্ষুদ্রাকারে গড়ে উঠেছিল শিল্প। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাঁশ চাষের সঠিক উদ্ভাবন না পৌঁছায় কমেছে উৎপান। অনেকে নিরুৎসাহিত হয়ে বাঁশ বাগানের জমি এখন ব্যবহার করছেন কৃষিকাজে। বাঁশের এসব ঐতিহ্য ফেরানোর কাজ হাতে নিয়েছে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে উৎপাদন ও ব্যহার বাড়িয়ে চাষীদের আর্থিকভাবে লাভবান করা কেন্দ্রটির প্রধান উদ্দেশ্য ।

বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। একসময় গ্রামের ঘরে ঘরে বাঁশ শিল্পের দেখা মিললেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক পণ্য। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতায় বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ শিল্পের ঠিকানা এখন জাদুঘরে।
তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাঁশের তৈরী জিনিষপত্রের এখনও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে এখনও কিছু কিছু বাঁশের তৈরী জিনিষপত্র দেখা যায়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও অনেক পরিবার বাঁশ দিয়ে হাতের তৈরী ডালা, চালা, কুলা, পাখা, মাছ ধরার দোয়ারি, খালুই, পলো, কোচ, জুতি, টুকরি, টোপা, তালাই, ধানের গোলা, ডোল, পাখির নানা আকৃতির খাঁচা, লাঠি, ঝাড়সহ আরো অনেক গৃহকর্মের জিনিসপত্র বানিয়ে তা বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ-বেতের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ বাঁশ-বেতের কারিগররা। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।

ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের বাঁশ-বেতের কারিগর আশরাফ আলী(৬৫) বলেন, একসময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। 

সূত্র মতে, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সমাপ্তের পরিকল্পণা থাকলেও সেটি এখন অপেক্ষায় উদ্বোধনের। রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলার আধুনিক পদ্ধত্তিতে বাঁশ চাষের পরিকল্পণা রয়েছে কেন্দ্রটির।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ৩৩ জাতের বাঁশ রয়েছে। রংপুর অঞ্চলের সাধারত মোথা থেকে বাঁশের চাষ হয়। উন্নত পদ্ধত্তি কঞ্চি কলম থেকে বাঁশ চাষে উৎপাদন বেশী হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করবে কেন্দ্রটি। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে ওই বাঁশ থেকে সৌখিন আসবাবপত্র সহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের বিভিন্ন উপকরণ তৈরীর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বানিজ্যিক উৎপাদনের সেটির দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা হবে।

আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র রিসার্স অফিসার আনিসুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নির্দেশনায় ওই গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হলে এ অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ গুণ বাঁশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। প্রক্রিয়া করণের প্রশিক্ষণ প্রদান করে চার থেকে পাঁচ গুণ বাঁশের আয়ু বাড়ানো হবে। তিনি জানান, বর্তমানে ১৪জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন কেন্দ্রটিতে। ডোমার বনবিভাগের পাশে মনোরম পরিবেশে দুই একর জমির উপর নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি ২৬জন জনবল নিয়ে শিগগিরই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।