• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

উপমহাদেশের মানচিত্র বদলের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২০  

পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতির উল্লেখযোগ্য গৌরবময় স্মরণীয় কিছু অহংকারের দিক থাকে। এক্ষেত্রে বাঙ্গালীর গৌরব ও অহংকারের পাল্লা ভারী। আমাদের আছে ২১ ফেব্রুয়ারি (ভাষা আন্দোলন), ২৬ শে মার্চ (স্বাধীনতা দিবস) , ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) - এর মত গৌরবময় কিছু দিবস। এগুলোর প্রত্যেকটির পিছনে আছে বাঙ্গালীর রক্তঝরা ইতিহাস।  বাঙ্গালী জাতি, বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ একই সূতোয় গাঁথা। স্বাধীনতা একদিকে যেমন গৌরবের, ঠিক তেমনি এই গৌরব অর্জন করতে অনেক বিষাদময় রাত পার করতে হয়েছে।। এই স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আবার স্বাধীনতা অর্জন করেছি বলেই, পৃথিবীর মানচিত্র জায়গা পেয়েছে আমাদের এই ছোট্ট সোনার বাংলা।  মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে দাঁড়িয়ে বলতে পারি ‘আমি বাঙ্গালী, আমি বাংলাদেশী’।

বাংলাদেশের এই স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সারাজীবন নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির দিশারী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ তাঁর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গনজাগরণের তিনিই প্রাণপুরুষ। ভারতের মহাত্মা গান্ধী, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মাও সেতুং, ভিয়েতনামের হো চি মিন, কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো, সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিন, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোর মত, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, তার পাশে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে তাঁর অসাধারন নেতৃত্বের গুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন উপমহাদেশের মানচিত্র বদলের মহান নায়ক।

‘ভাইয়েরা আমার, আজ দু:খ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ সাতই মার্চের ভাষণে এভাবেই বক্তৃতা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যে এই মহান নেতার যথাযথ সম্মান আমরা দিতে পারিনি। তৎকালীন সময়ে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির জন্য জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দেওয়ার কথা যিনি ভেবেছেন, সেই মহান নেতাকেই প্রাণ দিতে হয়েছিল জাতির কিছু কুলাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে। তাঁর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে হতবাক হয়েছিল পুরো পৃথিবী। ১৯৭৫ সালের ১৬ ই আগস্ট লন্ডনের ‘দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ উচ্চারণ করেছিল- ‘এই করুন মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে অবধারিত ছিল, তাহলে বাংলাদেশ জন্মের মোটেই প্রয়োজন ছিল না।’ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্যারিসের বিখ্যাত ‘লা মঁদে’ পত্রিকায় খ্যাতিমান সাংবাদিক রবার্ট এসকারপি মন্তব্য করেন- ‘বড় নেতা সেই হয়, যে সময়ের সাথে সাথে আরও বড় হতে থাকে। তাকে খুন করে সমাজ থেকে নির্বাসিত করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান সেই মাপের নেতা।’

বঙ্গবন্ধু তাঁর মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছিলেন। টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট খোকা থেকে তিনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন একজন ছাত্রনেতা হিসেবে, কৃষকদের কাছে তিনি ছিলেন মুজিব ভাই। এরপর প্রাদেশিক নেতা, রাষ্ট্রনেতা, সর্বোপরি বাঙ্গালী জাতির নেতা হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি লাভ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৮ আগস্ট ‘দি লিসনার’ পত্রিকায় বিবিসির ব্রায়ান ব্যারন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে- ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে উচ্চতর আসনেই অবস্থান করবেন। তার বুলেট বিক্ষত বাসগৃহটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারকচিহ্ন এবং কবরস্থানটি পূণ্যতীর্থে পরিণত হবে।’ তাঁর সেই বাণী আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নামে এই দেশটি যতদিন থাকবে, বঙ্গবন্ধু রয়ে যাবেন সাধারণ বাংলাদেশীদের অন্তরে। চিরকাল তাঁর নামটি উচ্চারিত হবে পরম শ্রদ্ধায়, ভালবাসায়।