• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

করোনা ভাইরাস: জরুরি অবস্থা ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বৈশ্বিক আতঙ্কে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাস দ্রুতগতিতে মহামারী রূপ নিতে যাচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা তার আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার পযর্ন্ত এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৭৬৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে তারা এখনই ‘প্যানডেমিক’ তকমা দিচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি যাতে সেদিকে না যায়, সেজন্য সব দেশকেই জোর প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও সিএনএন। কোনো সংক্রামক ব্যাধি যখন মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়, রোগতত্ত্বের ভাষায় তখন তাকে বলে প্যানডেমিক।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা দিয়ে সংস্থাটি আরো বলছে, এক সপ্তাহ আগে চীনের মধ্যেই ভাইরাসটির প্রকোপ বেশি ছিল। তবে কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া ৩০টিরও বেশি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঠিক কীভাবে এ ভাইরাস মানুষের দেহে এসেছে- সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। এ রোগের কোনো প্রতিষেধকও মানুষের জানা নেই। এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুর হার রয়েছে দুই শতাংশের নিচে, যা সার্সের চেয়ে কম।

জানা গেছে, চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছেছে এবং এরমধ্যে আটজন মারা গেছে। ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে ২২০ জন। মারা গেছেন ১১ জন। ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ জন। মারা গেছেন ১৫ জন। মঙ্গলবার ইরানি গণমাধ্যম ইতেজাঅনলাইন এ তথ্য জানায়। এদিকে ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ও একজন এমপিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

তবে দেশটির কওমের একজন সংসদ সদস্য দাবি করেছেন, কোম শহরেই করোনায় ৫০ জন মারা গেছেন। সরকার অবশ্য এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও আর্মেনিয়া। বিমান যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকটি দেশ। আফগানিস্তানে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হেরাতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। এরপর সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ওই প্রদেশটি ইরান সীমান্তসংলগ্ন। জাপানে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪০ জন। বাহরাইনও এ ভাইরাসে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। যাদের মধ্যে চারজন সৌদি আরবের নাগরিক।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য ৩৮০ জন বিদেশিকে কোয়ারেন্টাইন করেছে উত্তর কোরিয়া। এই বিদেশিদের অধিকাংশই রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে অবস্থানরত কূটনীতিক। উত্তর কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০০ বিদেশিকে ৩০ দিন ধরে তাদের নিজেদের কম্পাউন্ডে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এখন কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ ফের বাড়িয়েছে। যদিও উত্তর কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে কারও আক্রান্তের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে চীনের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় আছে দেশটি। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা যাওয়ায় বর্তমানে চীনের সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উত্তর প্রিয়ংগন প্রদেশের প্রায় তিন হাজার লোককে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া ইতালিতে ১১, জাপানে চার, হংকংয়ে দুই এবং ফিলিপাইন, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন এ ভাইরাসে মারা গেছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের ধাক্কা এবার জোরালোভাবে পড়তে শুরু করেছে অর্থনীতিতেও। মঙ্গলবার বিশ্বের বহু দেশের শেয়ারবাজারে সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছে। ইউরোপের বেশিরভাগ শেয়ারবাজারের সূচক ৩ শতাংশ পড়ে গেছে। ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বহু দেশের পর্যটন শিল্পে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার সূচক ৩ শতাংশ কমেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার সূচক পড়ে গেছে ৪ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার সূচক ২ শতাংশ এবং হংকংয়ের সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ইতালির শেয়ার সূচক কমেছে ৪ শতাংশ। কমতে শুরু করেছে অশোধিত তেলের  দামও।

তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব অর্থনীতির এই থমকে যাওয়া সাময়িক। তারা আশা করছেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকের পর ভাইরাসের প্রকোপ কমতে শুরু করলে ব্যবসা-বাণিজ্যও দ্রুত স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।