• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হোক আরেকবার

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২০  

রক্ত-জীবন-সম্ভ্রম দিয়ে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ নামের যে দেশটি আমরা অর্জন করেছিলাম, তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে। সেদিন রমনার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে। ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’’ এই মূলমন্ত্রেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল জাতি।

৪৯ বছর পর সেই স্বাধীনতার মাসেই বাঙালি জানলো; অপরিচিত, অদৃশ্য এক শত্রু আক্রমণ করেছে বাংলাদেশে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ঠিক পরের দিনই সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশের তিনজন মানুষ।

সেই থেকে শুরু। এরপর পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেরও আক্রান্তের সংখ্যাও যেমন আস্তে আস্তে বাড়ছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এরই মধ্যে সারাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মতো নানা আশঙ্কায় টানা ১০ দিন সব ধরনের অফিস-আদালত-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

এ যেন নতুন আরেকটি যুদ্ধের শুরু। তাই দেশে এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও স্বীকার করেছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলাও একটি যুদ্ধ। বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাই তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধে আপনাদের দায়িত্ব ঘরে থাকা। সকলের প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই।

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী জাতিকে সাহস জুগিয়েছেন এই বলে, ‘যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সঙ্কটময় মুহূর্ত আসে। জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে। এমনকি প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মত মহামারিও মানুষ প্রতিরোধ করেছে।’

তবে অস্বীকার করার উপায় বহু বছর আগের সেইসব মহামারির সময় আর এখনকার করোনা মহামারির সময় এবং প্রেক্ষাপট অনেক অনেক ভিন্ন। বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ মুহূর্তের মধ্যেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাচ্ছে। মিশে যাচ্ছে অন্যদের সাথে। যে কারণে মাত্র তিন মাস আগে চীনের একটা শহর থেকে জন্ম নেওয়া করোনা ভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে গেছে প্রায় সারা বিশ্বে। একুশ শতকের উন্নত প্রযুক্তি, চিকিৎসা ব্যবস্থা কোনো কিছু দিয়েই তাকে ঠেকানো যায়নি।

আর যে কারণে এই ভাইরাসকে ঠেকানো যায়নি, ঠিক একই কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিকেও বাঁচানো যায়নি। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে ধরনের আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তারচেয়েও বেশি মন্দায় গ্রাস করতে পারে বিশ্ব অর্থনীতিকে। সেই সতর্কবাণী এরই মধ্যে সত্যি হতে চলেছে। বাংলাদেশেসহ বহু দেশের পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাকখাত এবং প্রবাসী শ্রমিকদের আয়েও টান পড়েছে। আর রাজধানী ঢাকায় কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। যদিও সরকার বলছে, তাদেরকে নানাভাবে আর্থিক সহায়তা দেবে। কিন্তু আপাতত বেঁচে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ মানুষের জন্য। তাদের জন্য অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো চিকিৎসাসেবা। বিভিন্ন গণমাধ্যম এরই মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, বিভিন্ন এলাকায় করোনা চিকিৎসায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সরঞ্জাম নেই বা ঘাটতি আছে। অতিদ্রুততার সাথে সেই ঘাটতি পূরণ করা যাবে কিনা- তা বলা কঠিন। কিন্তু হলেও আর কোনো উপায় নেই। আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। কারোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কোনো ফাঁক রাখা যাবে না।

স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ও এমন অনেক কিছুরই ঘাটতি ছিল। ছিল হাজারো প্রতিকূলতা। তা পেরিয়েও পাকিস্তানের মতো একটি দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছে বাঙালির সাহস আর বীরত্বের কাছে। আরও আশার কথা, এই ৪৯ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। সেই সুবিধা নিয়ে অনেকক্ষেত্রেই এখন এগিয়ে থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। যা আমাদের হাতে নেই। প্রতিটি মুহূর্তই এখন দামি। তা নষ্ট করা মানেই পুরো জাতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া। নিশ্চয়ই সরকার বা অন্য কেউ তা চান না।

করোনার বিরুদ্ধে নতুন এই যুদ্ধ কোনো দেশ-জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তা এখন বৈশ্বিক অতিমহামারি। বিষয়টা এমন, মানুষ বাঁচলে তবেই পৃথিবী বাঁচবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই এই যুদ্ধে মানব জাতি জয়লাভ করবে। তবে সবার আগে জরুরি যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা।