• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

কৃষকের কাছে আশীর্বাদ এখন তিস্তা সেচ প্রকল্প

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২১  

দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ ভাগ জমির ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষকরা।

প্রকল্পের আওতায় এবারই প্রথম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্ষেতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারায় হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন হয়েছে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মেট্রিক টন। ফলে উত্তরের রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চলতি রবি মৌসুমের বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের খরা মোকাবেলায় কৃষকের কাছে আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে এই সেচ প্রকল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেচ প্রকল্পের আওতায় ৪৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রকল্পের কমান্ড এলাকার মধ্যে রয়েছে নীলফামারী সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ ও সৈয়দপুর, রংপুর জেলার সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলা। এসব এলাকার প্রায় ছয় লাখ কৃষক বোরো চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

এবার সেচ সুবিধা পেতে তিন জেলার ১২ উপজেলার সুবিধাভোগী কৃষকের মধ্যে ২৭০টি পানি ব্যবস্থাপনা দল গড়ে গঠন করা হয়। এসব দল মূলত কৃষকের সুবিধার্থে পানি বণ্টনের কাজটি করে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় পানি সমবণ্টন ও সেচ প্রদান সহজে করা যায়। গত বছর শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল গড়ে দুই হাজার কিউসেক। কিন্তু চলতি বছর একই সময়ে পানির প্রবাহ চলছে ১০ হাজার কিউসেকে। ৭১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ক্যানেলজুড়ে সেচ প্রদান করা হয়। এতে নদীর পানি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে সরবরাহ করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি বলে সূত্র জানায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টির অভাবে অন্যান্য এলাকায় যখন সেচের পানির জন্য হাহাকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় তখন কম মূল্যে প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধা পেয়ে কৃষকরা বাম্পার ফলন উৎপাদন করেছেন। বর্তমানে চলছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই।

নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামের কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, 'এবার সেচ ক্যানেলের পানি দিয়া তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। প্রতিবিঘায় ২০ মণ ধান ফলছে'।

প্রতিবিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে উল্লেখ করে বোরো চাষিরা জানান, প্রকল্পের আওতায় বছরে তিন মৌসুমে (আউশ, আমন, বোরো) একরপ্রতি জমির সেচ খরচ দিতে হয় ৪৮০ টাকা। সে হিসেবে শুধু বোরো মৌসুমে এক একর জমিতে সেচ দিতে হয় মাত্র ১৬০ টাকা। প্রকল্পের বাইরে যেখানে গুনতে হয় সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা। প্রকল্পের সেচের পানিতে ধান চাষে কম খরচে লাভ বেশি বলে জানান কৃষকরা।

তিস্তা সেচ ক্যানেল পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, 'প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে উত্তরাঞ্চল যখন মরুভূমিতে পরিণত হতে বসেছে, তখন তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি বোরো, ভুট্টাসহ রবি ফসলের ব্যাপক সাফল্য বয়ে এনে দিয়েছে'। চলতি বছর সেচের পানির কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকায় কৃষকরা কম খরচে আশানুরূপ ফসল উৎপাদন করতে পেরেছে বলে জানান তিনি।

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সমপ্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, 'করোনাকালেও আমরা প্রতিটি কমান্ড এলাকার বোরো চাষিদের চাহিদামতো সেচ প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। তিন জেলার ১২ উপজেলায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে রোটেশন পদ্ধতিতে সম্পূরক সেচ প্রদান করা হয়েছে। ফলে সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। যা এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে'।

পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতিপ্রসাদ ঘোষ জানান, তিস্তা কমান্ড এলাকায় চলতি বছর ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হলেও এর পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

'তিস্তা সেচ প্রকল্প উত্তরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির তৃণমূল পর্যায়ে সেচের পানি পৌঁছে দিতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি আর টারসিয়ারি সেচ ক্যানেল নির্মাণে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। ফলে বছরে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন ধানের উত্পাদন বাড়বে।

একই সঙ্গে অন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। যার বর্তমান বাজারমূল্য এক হাজার কোটি টাকা। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অধিকতর উন্নীতকরণ, পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত ৩০ লাখ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। ২০২৪ সালের জুন মেয়াদ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।