• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

কোভিড-১৯: শিক্ষা ও করণীয়

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২০  

গোলাম মোস্তফা

মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে এত বিস্তৃত পরিসরে মহামারির তথ্য জানা যায়নি। বিশ্বের প্রায় সব দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতোই আমরা করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করছি।
করোনা আক্রান্ত রোধে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকার মানুষকে ঘরে থাকতে বলেছে। মানুষ যাতে ঘরে থাকে এবং জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব (স্বাস্থ্যবিধী অনুযায়ী তিন ফুট) বজায় রাখে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে।

এ পর্যন্ত মানুষ ঘরেই থাকছে এবং সরকারের উদ্দেশ্য সফল বলা যায়। কিন্তু সাধারণ ছুটির চারদিনের মাথায় নিম্নআয়ের মানুষ যারা দিনে আনে দিনে খায়, তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সারাদেশ কার্যত বন্ধ, স্বাভাবিকভাবেই এসব মানুষের কাজ নেই, আয় নেই, ফলে খাবার কেনার টাকাও নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসব মানুষকে সরকারের পক্ষ থেকে ছয় মাসের খাবার ও নগদ অর্থ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এসব করতে কিছু সময় দরকার এবং প্রশাসনকে মাঠে গিয়ে কাজ করতে হবে। এখন তো লকডাউন অবস্থা। মানুষের চলাচল একেবারেই সীমিত, তাই এই কাজটি করা একটু কঠিন। কিন্তু এর মধ্যেই প্রশাসন, ব্যক্তি ও সামাজিক উদ্যোগে সারাদেশে কিছু অভাবী মানুষকে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

আমরা বাংলাদেশিরা বীরের জাতি। আমরা অবশ্যই এই বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করতে পারবো। জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ কে পরাজিত করতে পারবো। তবে করোনাসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকের কোনো বিকল্প নেই। করোনা ভাইরাস আজ সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদেরও শিক্ষা দিয়েছে। তাই করোনা মোকাবিলায় করণীয় ও শিক্ষার বিষয়ে কিছু যুক্তি ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।

১. কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় আমাদের দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষের জন্য তিনটি সুবিধা রয়েছে। গরম আবহাওয়া, যা করোনা বিস্তারকে কিছুটা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং করোনা রোগীদের সুস্থ হতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে হাসপাতাগুলোতে বাড়তি চাপ কমায়। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের নিচে,  ফলে এসব মানুষ আক্রান্ত হলে দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশের মানুষ নানা ধরনের ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করে থাকে। তাই আমাদের মাধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) তুলনামূলক ভালো। তাই আমরা কিছুটা সহজেই করোনা মোকাবিলা করতে পারবো বলে আশা করি।

২. অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ছোট দেশ। আমাদের প্রশিক্ষিত রেজিমেন্ট বাহিনী তৈরি করা যেতে পারে। দেশের মানুষকে মিলিটারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে তা করা যেতে পারে। তাহলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা সহজ হবে। দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও ইসরাইল খুব ভালোভাবে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হলো তাদের ব্যাপক প্রস্তুতি। তারা কিন্তু ছোট দেশ। সিঙ্গাপুরে প্রতিদিনই ৪০ জনের বেশি নতুন আক্রান্ত চিহ্নিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০’র বেশি মানুষ সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তারা লকডাউন করেনি। অফিস-আদালত সব চলছে। তারা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছে এবং মানুষ মেনে চলছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের চিকিৎসা দিচ্ছে। তাদের অর্থনীতি এবং করোনা মোকাবিলা একসঙ্গে চলবে। সিঙ্গাপুরের সব নাগরিকের জন্য মিলিটারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। জরুরি পরিস্থিতিতে তারা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন। কারণ সবাই জরুরি পরিস্থিতিতে সব ধরনের কাজ জানেন।

আজকে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দুই কোটি মানুষেরও মিলিটারি প্রশিক্ষণ থাকলে আমাদের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা অনেক সহজ হতো। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে, যা আমাদের অনেক বড় কাজে আসে।
 
আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তেমন কোনো প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নেই। এখন সময় এসেছে সারাদেশের মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমরা যদি আমাদের গার্মেন্টসের ৪১ লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষিত করতে পারি তাহলে তারা হবে আমাদের অনেক বড় সম্পদ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত সনদ নেওয়ার আগে মিলিটারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এতে একসময় কোটি মানুষ আমাদের স্বেচ্ছাসেবক তৈরি হবে। সরকারি যেকোনো চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মিলিটারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিএনসিসি, স্কাউট এবং গার্লস গাইডের মাধ্যমেও তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষিত করা যায়। এতে তাদের চরিত্র গঠন হবে, মাদক থেকে দূরে থাকবে এবং নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা গড়ে উঠবে। এসব স্বেচ্ছাসেবকের কারণে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা সহজেই মোকাবিলা করতে পারবো। আরেকটি বিষয় হলো- বুদ্ধিমান লোক শিক্ষা নেয় অন্যের ভুল থেকে। আর বোকা লোক শিক্ষা নেয় নিজের ভুল থেকে। আমরা বুদ্ধিমান হতে চাই।
আজকে বলা হচ্ছে- ইতালি, স্পেনসহ ব্যাপকভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর সব ধরনের সিস্টেম ভেঙে পড়ছে। আমেরিকায় খাবার দেওয়ার লোক নেই। মূলত তাদের স্বেচ্ছাসেবকের অভাব। মানুষকে হাসপাতালে নেওয়ার লোক নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কেউ নেই। প্রশিক্ষিত জনবল থাকলে এসব তারা সহজেই মোকাবিলা করতে পারতেন। করোনা পরীক্ষার র‌্যাপিড কিট (দ্রুত পরীক্ষার সরঞ্জাম) দিয়ে বাসায় গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা পরীক্ষা করে দিতে পারতেন, কাজটা সহজ হতো। তাই যেকোনো জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রশিক্ষিত হওয়া জরুরি।  

ভারত ও পাকিস্তানে পঙ্গপাল ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশেও এই পঙ্গপালের আক্রমণ হতে পারে। বর্ষা আসছে। ইতোমধ্যেই ডেঙ্গুর আক্রমণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ হিমালয়ের পাদদেশের দেশ। আমরা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছি। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন।

৩. করোনায় ব্যাপকভাবে আক্রান্ত বেশিরভাগ দেশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে আক্রান্ত তুলনামূলক অনেক কম। চীন (উহান, সাংহাই ও বেইজিং) ইরান, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়াসহ বেশি আক্রান্ত দেশগুলো উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস থেকে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে অর্থাৎ ঠাণ্ডা আবহাওয়া। এই আবহাওয়ার কারণে বয়স্ক মানুষেরা এমনিতেই বেশি ভুগছেন। তার সঙ্গে কোভিড-১৯ তাদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন সাধারণ তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। আজকের ( ৩০ মার্চ)  তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের জন্য আরেকটি আশীর্বাদ হলো- এখন মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। ইউরোপ, আমেরিকার যে আবহাওয়ার কারণে  করোনা মোকবিলায় তারা হিমশিম খাচ্ছে, সেই আবহাওয়ার রূঢ়তা থেকে আল্লাহ আমাদের নিরাপদ রেখেছেন।

তাই আমাদের মাস্ক, ডাক্তারদের সুরক্ষার পিপিই এবং পরীক্ষার জন্য কিটস হাসপাতাল এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ শুরু করা যেতে পারে। রোগীদের চিকিৎসায় এসব খুবই জরুরি দরকার।

৪. করোনা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। টেলিফোন কোম্পানিগুলো, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপকে হট লাইন চালু করতে হবে। তারা মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিতে পারবে। যেমন- কোনো বাড়িতে হৃদরোগ বা ডায়েবেটিস বা অন্যকোনো রোগের রোগীর ক্ষেত্রে। কিন্তু সবাই বয়স্ক হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে যাদের বাজারে যাওয়ার বা ওষুধ কেনার কোনো মানুষ নেই, এসব হটলাইনে ফোন করে তারা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া হটলাইন থেকে চিকিৎসাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে পারবেন। এতে করে সরকারি হটলাইনের ওপর চাপ কমবে। আর করোনা আক্রান্ত বেড়ে গেলে সরকারি হটলাইনে চাপ বাড়লে, তখন হটলাইন সেবা ডাউন হয়ে যেতে পারে। তাই বেসরকারিভাবেও হটলাইন চালু করা যেতে পারে। 

৫. প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবহারের জন্য কিটস এবং প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সরঞ্জাম  আমরা চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করতে পারি। বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ না থাকলেও বাংলাদেশ সরকার চীন সরকারকে বিশেষ উড়োজাহাজের মাধ্যমে এসব  সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতে পারে। পরীক্ষার কিট, ভেন্টিলেটর, পিপিইসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা উপকরণ আমরা এখন আনতে পারি।

৬. কোভিড-১৯ এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু হাসাপাতাল প্রস্তুত করতে হবে। করোনা ছাড়া এসব হাসপাতালে অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা হবে না। অন্যান্য রোগের জন্য অলাদা হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা থাকবে। চিকিৎসার জন্য স্টেডিয়াম, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, কনভেনশন সেন্টার, সরকারি ভবনকে প্রস্তুত করা যেতে পারে।

৭. জরুরি অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুবকদের কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছায় কাজ করতে আগ্রহী যুবকদের তালিকা করতে হবে। ছাত্র, শিক্ষক ও স্কাউটের সদস্যরা হতে পারেন এই স্বেচ্ছাসেবী। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সদ্স্যরা এবং বিভিন্ন এনজিও যেমন- ব্র্যাক, আশা, আরডিআরএস, টিএমএসএস প্রভৃতি কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে পারেন। ইতোমধ্যেই ব্র্যাকসহ কয়েকটি এনজিও এবং সামাজিক সংগঠন করোনা মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। তবে এর পরিধি ব্যাপক করা যেতে পারে। এসব স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় একটি জায়গায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৮. আমাদের জেলখানাগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কয়েদি রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। সেখানেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। কারণ অনেক মানুষ একই কক্ষে থাকলে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে কিছু কয়েদিকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে সরকারকে বিষয়টি চিন্তা করতে হবে।
 
৯. আমরা পোলিওকে জয় করেছি। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন। এখন সময় এসেছে আমাদের ফ্লু ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করা। সাধারণ মানুষ ফ্লু ভ্যাকসিন দিলে আমরা ফ্লু জাতীয় ভাইরাসকে সহজে মোকাবিলা করতে পারবো।
 
১০. করোনা ভাইরাসে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের ঘরে থাকতে হবে। আর কারও সর্দি-কাশি হলে প্রচুর পরিমাণে তরল ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে। তরল খাবার ফ্লু জাতীয় রোগ মোকাবিলায় অনেক সহযোগিতা করে। আমাদের স্থানীয় অনেক ফল রয়েছে। লেবু, শসা, পেঁপে, আনারস এসব ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আমরা এসব ফল জুস করে খেতে পারি। এ ছাড়া ফল পাওয়া না গেলে গরম পানিতে মধু দিয়ে খেলেও সর্দি, কাশি ও জ্বরে উপকার পাওয়া যায়।
১১. সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বরে বাসায় থেকেই কি ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন বা কি ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করতে হবে তা টেলিভিশনে ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে  নাক, কান - গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে প্রচারণা চালানো যেতে পারে।

১২. সামনে থেকে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার ও নার্সদের পিপিইসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দিতে হবে। তাদের বিশ্রামের জন্য হাসপাতালেই থাকার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। তাতে করে সময় বাঁচবে। যেসব ডাক্তার এবং নার্স সরাসরি করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিবেন, তাদের হাসপাতালেই বা হাসপাতালের পাশেই থাকার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। প্রতিদিন পরিবারের কাছে তাদের যাওয়া ঠিক হবে না। বিভিন্ন দেশে তাই করা হচ্ছে।

১৩. আমাদের কিছু মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে প্রস্তুত রাখলে ভালো হয়। যারা পালা করে সপ্তাহে সাতদিনে ২৪ ঘণ্টাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়া করোনা রোগীদের কাউন্সিলিং করবেন।

১৪. সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। টেলিভিশন এবং অনলাইনে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই জরুরি। যদি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয় তাহলে তাদের ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানাগুলোতেও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মেনে চলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

১৫. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশেষ করে সুপার মার্কেট, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যেতে পারে। এ ছাড়া গণপরিবহনের ড্রাইভার, হেলপার এবং সুপারভাইসারকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যার যে ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার, তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

১৬. বর্তমান জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে পণ্য সরবরাহ করতে হবে, সে বিষয়ে অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ছাড়া যারা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে খাবার সরবরাহ করে তাদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনলে উপকার হবে।
 
১৭. জরুরি পরিস্থিতিতে শান্ত থেকে নাগরিকদের সেবায় কাজ করতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে এবং কিছু মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারেন।
১৮. বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। তাই পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং নদীর পাশের মানুষদের জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিলে ভালো হয়।

১৯. আমাদের বন্দরগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে পরিচালিত হবে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দ্রুত কাজ করা যায় সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

২০. প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহের বিষয়ে একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। একইভাবে জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো যেমন: বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, টেলিফোন, গ্যাস এবং  বেসামরিক প্রশাসনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ভালো হয়। সব বিভাগকে করোনা মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। গণমাধ্যমকেও এর আওতায় আনলে ভালো হয়।

সবশেষে বলতে চাই-এসব বিষয় শুধু কোভিড-১৯ এর জন্য নয়। একটি জাতির সংকটপূর্ণ সময়ের জন্য একটি গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন। যে গাইডলাইনের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলায় সবাই একযোগে কাজ করতে পারবে।

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। তেমনি বতর্মানে করোনা ভাইরাস আক্রমনের এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অথবা ভবিষ্যতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে রক্ষা পেতে দলমত, জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক: চেয়ারম্যান, দেশবন্ধু গ্রুপ।