• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

‘খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকেই কৃষকদের আর কোনো কষ্ট নেই। কারণ কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে, যেন তারা অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে চলমান উৎপাদনকে দুই থেকে তিনগুণ বাড়ানোর জন্যে কৃষকদের পাশে আছে সরকার।

কৃষকলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার রাতে দেয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রায় পৌনে ৮ মিনিটের ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ এর সময় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সব কৃষক-কৃষাণীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্গাচাষিরা যেন বিনা জামানতে ঋণ পান সেই ব্যবস্থাও আমরা করেছি। বর্তমানে তারা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ঋণ পাচ্ছেন। বিএনপির আমলে সারের দাম ছিল ৯০ টাকা, আজ আমরা ১২ টাকায় নামিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, আমরা গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ সরবরাহ করছি। আমরা চাই, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার ওপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। গবেষণার ফলে আরো নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করার জন্যে ব্যাপকভাবে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি।

এর ফলে আজ কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন, ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া এসব পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করে দিচ্ছি- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল। কৃষিখাতে আমরা ৭০ শতাংশের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি, যেন আমাদের কৃষকরা আরো অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহসহ প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন নিশ্চিত হয় এর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। বর্তমানে সেচ কাজে সোলার-প্যানেল ব্যবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

সরকারপ্রধান বলেন, ফসলের ন্যায্যমূল্য যেন আমাদের কৃষকরা পান, এর জন্য আমরা যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যেন খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যের কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাও হাতে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সে ধরনের সহযোগিতা পাবেন- এর জন্য একটা থোক বরাদ্দ রাখছি। আমাদের দেশে উৎপাদন যেন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- এর জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সেই ধরনের কৃষি তথ্য যেন তারা পেতে পারেন সে তথ্যকেন্দ্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সবার হাতে হাতে তুলে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ থেকে শুরু করে সবাই মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র সরকার ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কৃষিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষিভত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রফতানি করতে পারি এর ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি কৃষকলীগকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই দিনে আমার দুঃখ একটাই- করোনাভাইরাসের কারণে আমি নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সবার সঙ্গে দেখাও হলো না।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করল এবং এ দেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল এবং যাদের গুলিতে সার চাইতে গিয়ে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হলো- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী করোনার সম্পর্কে পুনরায় সতর্ক করে বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। গার্গল করা, ভাপ নেয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো দিয়েছি- অবশ্যই সেগুলো মেনে নিজেকে ও অপরকে সুরক্ষিত করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়- এর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করেন- বাংলাদেশ এই মহাদুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।