• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

`গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা ও প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান`

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

*আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের ভিতর শু’দ্ধি অভি’যান শুরু করেছেন। টানা দশ বছরের বেশি সময় ক্ষ’মতায় থাকা আওয়ামী লীগে দুর্নী’তিবাজ, সন্ত্রা’সী, ক্যা’ডার এবং অনৈ’তিক কর্ম’কাণ্ডের সঙ্গে জড়ি’ত নেতাকর্মীদের বি’রুদ্ধে রীতিমতো যু’দ্ধ ঘো’ষণা করেছেন তিনি।

*গত শনিবার তিনি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘো’ষণা দিয়েছিলেন দলের কার্যনির্বাহী সভায়। দলের সভায় তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সামনে বলেছিলেন, আমার দলে কোন সন্ত্রা’সী- ক্যা’ডার দরকার নেই। দলের ছত্রছায়ায় যারা অপ’কর্ম করবে তাদের প্র’শ্রয় দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা যা বলেন সেটা যে করেন তা আরেকবার প্রমাণ করলেন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইনপ্র’য়োগকারী সং’স্থা ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের তত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাসি’নোগুলোতে সাড়া’শি অভি’যান শুরু করে।

*একদিনের অভি’যানেই ঢাকা শহরের সব অ’বৈধ ক্যা’সিনো ব’ন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ৪টি ক্যা’সিনোতে সিল’গালা লাগিয়েছে আইন’শৃঙ্খলা বা’হিনী। সং’শ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধুমাত্র ক্যাসি’নো ব’ন্ধই নয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে ৫ শতাধিক ব্যক্তির একটি তা’লিকা হাতে এসে পৌঁছেছে যারা চাঁদা’বাজি, সন্ত্রা’স, টেন্ডা’রবাজিসহ বিভিন্ন অনৈ’তিক কর্মকা’ণ্ডের সঙ্গে জ’ড়িত। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের ব্যা’পারে জি’রো টলা’রেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। তাদের বি’রুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আই’নপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সুনির্দিষ্টভাবে নি’র্দেশ দিয়েছেন।

*রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন, কেন শেখ হাসিনা এই কঠো’র অব’স্থানে গেলেন? হঠাৎ কেন তিনি দলের ভিতর শু’দ্ধি অভি’যান শুরু করলেন? অনেকেই মনে করছে যে, এর ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভু’ল বার্তা যাবে। বিরো’ধী দল আ’ঙ্গুল তোলা’র সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় যতদিন ধরে অনি’য়ম চাঁদা’বাজি, সন্ত্রা’স হয়েছে সেটা বলার একটা প্ল্যা’টফর্ম পাবে বি’রোধী দলগুলো। কিন্তু এর বিপরীত মতামতও রয়েছে।

*রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে শেখ হাসিনা যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর দা’য়িত্ব পালন করছে ততক্ষণ তিনি দেশের মঙ্গল কামনা করবেন। জনগণের পাশে থাকবেন তিনি। এটা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষম’তায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় প্লা’স পয়ে’ন্ট হিসেবে দাঁ’ড়াবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মতবি’রোধের আ’ড়ালে আমরা বুঝতে পারি শেখ হাসিনা কেন হঠাৎ করে এত ক’ঠোর হলেন। কি কারণে তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিরু’দ্ধে ক’ঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেন। এর উত্তর খুঁ’জতে গিয়ে অনু’সন্ধানে পাওয়া গেছে কয়েকটি কারণ। এর মধ্যে রয়েছে-

*১. গো’য়েন্দা সংস্থাগুলোর সত’র্কবার্তা: বিভিন্ন গো’য়েন্দা সংস্থা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষ’মতায় আসার পর থেকেই দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী, সহযোগি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের লাগামহীন স্বেচ্ছা’চারিতার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে স’তর্ক করেছেন। শুধু সত’র্কই করেননি, বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নাম ভা’ঙ্গিয়ে যারা বিভিন্ন ধরনের অপ’কর্ম করছে সেই সমস্ত অপ’কর্মের তথ্য প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তা’ন্তর করেছে। তথ্য প্রমাণ এবং ছবি স’ম্বলিত এসব প্রতি’বেদনে শেখ হাসিনা অত্য’ন্ত ক্ষু’ব্ধ হয়েছেন এবং তিনি মনে করছেন ‘এনা’ফ ই’জ এনা’ফ’। এসব অপ’কর্ম আর বাড়তে দেওয়া যায় না। এসব অপ’কর্ম আর বাড়তে দেয়া যায় না। এসব যদি বাড়তে দেওয়া হয় তাহলে তারা লাগাম’হীন হয়ে পড়বে। এর ফলে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতি’পক্ষ হয়ে দাঁ’ড়াবে। একারণেই তিনি কঠো’র অবস্থা’নে গেছেন।

*২. নিজস্ব নেটও’য়ার্কের পাওয়া তথ্য: শুধু গো’য়েন্দা সংস্থার রি’পোর্টের উপর নির্ভর করে চলার মানুষ শেখ হাসিনা নন। টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়ি’ত্বপালন করা আওয়ামী লীগ সভাপতির রয়েছে নিজস্ব টীম। যাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাদের নেটওয়ার্ক সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত। শেখ হাসিনার নিজস্ব টীম সারাদেশ থেকে যে রি’পোর্ট পাঠাচ্ছিল সে রি’পোর্টও প্রধানমন্ত্রীর জন্য স্ব’স্তিদায়ক ছিল না।

*এই রিপোর্টে দেখা যায় তৃতীয়বারের মত ক্ষম’তায় আসার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই মনে করছে যে, এটাই শেষবারের মত ক্ষমতা। আমরা যা ইচ্ছা তাই করে নেই। এরকম মনোভাব দলের জন্য এবং দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গো’য়েন্দা সংস্থা এবং নিজস্ব নেটওয়ার্কের মধ্যে অদ্ভুত মিল পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে তিনি মনে করছেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। সরকারের মেয়াদ এখনও একবছর পূর্ণ হয়নি। এখন এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দল গুছানো অত্যন্ত সহজ হবে। যে কারণে তিনি এ ব্যবস্থা গ্রহণে কার্পণ্য করেননি।

*৩. আওয়ামী লীগের নিম্নগামী ইমেজ: ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। নানা কারণে আওয়ামী লীগকে নিয়ে জনমনে অস্বস্তি বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, ডেঙ্গু জ্বর, প্রিয়া সাহার ঘট’না, গু’জব সন্ত্রা’স ইত্যাদি নিয়ে এক বছর যেতে না যেতেই তৃতীয়বারের মত ক্ষ’মতায় আসা আওয়ামী লীগ ব্যা’কফুটে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নিম্নগামী ই’মেজ উ’দ্ধারের জন্য শেখ হাসিনার ক’ঠোর হওয়ার বি’কল্প ছিল না।

*রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে, একমাত্র শেখ হাসিনার ই’মেজ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য অ’ত্যন্ত খারাপ। এটা নিঃস’ন্দেহে বলা যায় যে, শেখ হাসিনা এখন দেশের সব’চেয়ে জনপ্রিয়তম ব্যক্তি। তাঁর ইমে’জেই আওয়ামী লীগ চলছে। একারণেই আওয়ামী লীগের ইমে’জ পুনরু’দ্ধারের জন্য এরকম ক’ঠোর অব’স্থানের বি’কল্প ছিল না বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

*৪. দৃষ্টা’ন্ত স্থা’পন করতে চান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বার দেশ পরিচালনার দা’য়িত্ব গ্রহণ করে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আর দেশ পরিচালনার দা’য়িত্ব গ্রহণ করবেন না। সেই হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই তাঁর শেষ মে’য়াদ। তাই তিনি একটি দৃষ্টা’ন্ত স্থা’পন করতে চান যেন দেশের জনগণ তাকে মনে রাখে। ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে প’রিণত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন, অগ্রগ’তিগুলো সারাবিশ্বের মানুষের কাছে একটা দৃষ্টা’ন্ত। আর এজন্যই শেখ হাসিনা চান না যে সব উন্নয়ন দুর্নী’তি এবং অপ’কর্ম খেয়ে নিক। এজন্যই তিনি যে দলের উর্ধ্বে, সবার আগে যে দেশ এবং জনগণ এই দৃ’ষ্টান্ত যে তিনি স্থা’পন করতে চান এবং এজন্যই তিনি এই কঠো’র অব’স্থান গ্রহণ করেছেন।

*৫. বি’রোধী দলকে কোণ’ঠাসা করা: কিছুদিন ধরেই রাজনীতিতে বি’রোধী দলগুলো নতুন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দা’বিতে আ’ন্দোলন বা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে বেকা’য়দায় ফেলার কৌ’শল খুঁ’জছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের শু’দ্ধি অভি’যানের ঘোষ’ণা দিয়ে বিরো’ধীদলকে ব্যা’কফুটে ঠে’লে দিয়েছেন। এর ফলে জনগণের কাছে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্য’তা অনেক বে’ড়েছে। বি’রোধী দল শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ই’স্যু নিয়ে আ’ন্দোলন করছে। শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কথা চি’ন্তা করছেন। দেশের উন্নয়নের কথা চি’ন্তা করছেন। এজন্য তিনি দলের মধ্যেও শু’দ্ধি অভি’যান করতে কা’র্পণ্য করছেন না। এই বার্তাটা স্প’ষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে বি’রোধী দলের আ’ন্দো’লন হালে পানি পাবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লে’ষকরা।

*শেখ হাসিনার এই ক’ঠোর অব’স্থান দলের মধ্যে অস্ব’স্তি তৈরী করলেও দেশের মানুষের মধ্যে একটি স্বস্তি এবং প্রশংসা কু’ড়াচ্ছে। আর এটাই হলো শেখ হাসিনার রাজনীতি। তিনি ক্ষুদ্র স্বা’র্থের ব’দলে বৃহত্তর স্বা’র্থকেই যে সবসময় বড় করে দেখেন এই ঘ’টনার মাধ্যম তিনি সেটাই প্রমাণ করেছেন।