• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

চৈত্রের খরায় পানিতে টইটম্বুর তিস্তা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০২১  

চৈত্রের খরতাপ চলছে। বৃষ্টির দেখা নেই। অথচ বর্ষাকালের রূপ নিয়েছে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট দিয়ে উজানের স্রোতধারায় পানি প্রবেশ করছে হু হু করে, যা দ্রুত তিস্তা ব্যারাজ অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে ভাটির দিকে।

গত কয়েক দিন আগেও নদীর বুকে যে ধু-ধু বালুচর দেখা গিয়েছিল, তা যেন নিমিষেই নদীর পানিতে চাপা পড়ে গেছে। সেচ ক্যানেলগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়েছে। ভরা তিস্তায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বৈরালি মাছ। গত দুই বছর থেকে জেলেদের জালে বৈরালি মাছ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছিলেন তিস্তার পাড়ের জেলেরা।

চলতি বোরো আবাদে তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকার নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর জেলার ১১ উপজেলায় ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ চলমান রয়েছে। তিস্তার সেচ ক্যানেলগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর।

শনিবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, উজান থেকে পানিপ্রবাহ নদীজুড়ে বয়ে চলছে।

ডালিয়ার তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক অফিস বলছে, দুদিনে উজানের ঢলে তিস্তায় এখন প্রায় ১৫ হাজার কিউসেকের মতো পানিপ্রবাহ চলছে। এর আগে পানিপ্রবাহ ছিল মাত্র এক হাজার ৮০০ কিউসেক।

তিস্তাপাড়ের বাইশপুকুর চরের জেলে রমজান আলী জানান, নদীর পানি কমে যাওয়ায় মাছও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিল না। দুদিন ধরে উজানের জোয়ারে নদী এখন পানিতে ভরে গেছে। মাছও পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার তিস্তার পানিপ্রবাহ ছিল ৪৯ দশমিক ৭০ মিটার। পরদিন শুক্রবার ১০০ সেন্টিমিটার বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৭০ মিটারে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত আরও ৬৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে পানিপ্রবাহ দাঁড়ায় ৫১ দশমিক ৩৫ মিটারে। পাশাপাশি উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে শুকিয়ে যাওয়া নদী।

তিস্তা পাড়ের আবুল কাশেম জানান, তিস্তা নদীকে যখন দেখি শুকিয়ে যায়, তখন হারিয়ে যাওয়া জমি জিরাত বালুর চরে চোখে পড়ে।

পূর্ব ছাতনাই গ্রামের হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ শুনতে পাই তিস্তা নদী থেকে স্রোতের শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে। অবাক হয়ে ছুটে যাই নদীর পাড়ে। দেখতে পাই উজান থেকে তিস্তার পানি শো শো শব্দে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। চৈত্র মাসের খরার সময় বর্ষাকালের মতো তিস্তা নদী দেখে খুব ভালো লাগছে।’

তিস্তা পাড়ের ভাষানীর চরের মাঝি মফিজার রহমান বলেন, ‘ভারত হয় তো তাদের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় পানির জোয়ার বেড়ে গেছে।’

তিস্তা কমান্ড এলাকার সেচ সুবিধাভোগী কৃষক নজির উদ্দিন (৪০) বলেন, ‘তিস্তা নদীতে উজানের পানির জোয়ার বিগত বছরের চেয়ে এবার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরা ল) জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভালোর দিক বলে মনে করছি আমরা।

তিনি আরও জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্প কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির তৃণমূল পর্যায়ে সেচের পানি পৌঁছে দিতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি আর টারসিয়ারি সেচ ক্যানেল নির্মাণে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ আরও জানান, প্রকল্পটি একনেকে পাস হলেই সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেলগুলোতে করা হবে সিসি লাইনিং আর টারসিয়ারি ক্যানেলগুলোতে দেয়া হবে আরসিসি ঢালাই। এতে পানির অপচয় ছাড়াই দ্রুত পানি পৌঁছে যাবে জমিতে।