• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

জঙ্গি দমনে অনেকখানি এগিয়েছে বাংলাদেশ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২১  

গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের কাছে নয় জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি জঙ্গিদের তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেন। ‘নব দিগন্তে প্রত্যাবর্তন’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইসলামী স্কলার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা।

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। এজন্যই আমরা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় অনেকখানি এগিয়ে গেছি। জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে না পারলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমরা জঙ্গি দমনে অনেকখানি এগিয়ে গেছি। আমরা যে সব সময় কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করি বিষয়টি তেমন নয়, আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনছি।’

আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে রাইসা (১৮)। বিভিন্ন মাধ্যমে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হওয়ার পর ফেসবুকে পরিচয় হয় আনসার আল ইসলামের এক সদস্যের সঙ্গে। এরপর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। পরিবারকে না জানিয়ে ২০১৮ সালে তারা বিয়ে করেন। এইচএসসি পাস করেন তিনি ২০১৯ সালে। বিদেশে পড়তে যান দুজনই। কিন্তু ছয় মাসের মাথায় দেশে ফিরে আসেন তারা। এরপর জঙ্গিবাদে সক্রিয় হন। কিন্তু ফেরার জীবন তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। পরিচিতদের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছা জানান আবিদা। সহযোগিতার হাত বাড়ায় র‌্যাব।

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানের ভয়াবহ হামলার পর পাল্টে যায় দেশের জঙ্গিবাদের সব হিসাব-নিকাশ। গত পাঁচ বছরে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় নিজেদের কঠোর অবস্থান জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়া নয় সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে র‌্যাব। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এই জঙ্গিদের মধ্যে অন্যতম হলেন আবিদা জান্নাত আসমা।

দেশের তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি, আমি ভুলপথে ছিলাম। আমি চাই না আমার মতো আর  কেউ ভুল করুক। প্রত্যেকের নিজের প্রতি নিজের জাজমেন্ট থাকা উচিত।  কোনো কিছু অন্ধভাবে বিশ্বাস করা ঠিক  নয়’।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, যারা এখনো ওই পথে আছো, তোমারা ফিরে এসো। কারণ তোমরা কখনো বিজয়ী হবে না। যারা সমাজের মূলধারায় ফিরে এসেছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘তোমরা আলোর পথের অভিযাত্রী, এটা দুঃসাহসিক কাজ। এজন্য তোমাদের অভিনন্দন।’

র‌্যাব জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারী নয়জনের মধ্যে ছয়জন জেএমবি ও তিনজন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুনর্বাসনের ব্যাপারে র‌্যাবের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। র‌্যাব বিনা শর্তে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা ‘আত্মসমর্পণ’ করেন।

র‌্যাব বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জঙ্গিদের সঠিক প্রক্রিয়ায় ডি-রেডিক্যালাইজেশন করে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছেন তারা। দীর্ঘ সময় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের উগ্র আদর্শকে ধ্বংস করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে আছেন জেএমবির ছয়জন এবং আনসার আল ইসলামের তিনজন সদস্য।

এরা হলেন- শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪), ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯), আসমা ওরফে রাইসা (১৮),  মোহাম্মদ হোসেন হাসান গাজী (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩১), মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬), মো. সাইদুর রহমান (২২), আবদুর রহমান সোহেল (২৮)। এদের মধ্যে প্রকৌশলী ও চিকিৎসকও রয়েছেন।

আইজিপি বলেন, ওই ককটেল, জর্দার কৌটা বা এ জাতীয় জিনিসপত্র দিয়ে তোমরা কারও বিরুদ্ধেই বিজয়ী হতে পারবে না। বরং ওই পথে গিয়ে তোমরা পরিবার-সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছো। এই অন্ধকার জগৎ তোমার নিজেকে, পরিবারকে এবং রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে। তবে শতভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগেরও বেশি ঘটনা শুরুতেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি।

সভাপতির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যারা আজ সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদেরকে এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়। ‘তুই জঙ্গি’ বলে যেন তাকে আবারও নেতিবাচক পথের দিকে ঠেলে দেওয়া না হয়।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা, এটা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। র‌্যাব জানায়, শাওন সিলেটের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে হিযবুত তাহরীরে যুক্ত হন। ২০০৯ সালে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ  দেন। ২০১১ সালে মেডিকেল শিক্ষার্থী নুসরাতকে বিয়ে করেন। নুসরাতও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরে সংগঠনের নির্দেশনায় তারা ঢাকায় চলে আসেন। জঙ্গিবাদে জড়ানোয় শাওন ও নুসরাতের সঙ্গে তাদের স্বজনদের দূরত্ব তৈরি হয়। পারিবারিক জীবনে অশান্তি আসে। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘আত্মসমর্পণ’ করেন। সোহেল জেএমবির সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করেন। ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তিনি র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মোহাম্মদ হোসেন ২০১২ সালে ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। সাইফুল্লাহর মাধ্যমে তিনি জেএমবিতে যুক্ত হন। পরে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত  নেন। মাদরাসা শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সহপাঠীর মাধ্যমে জেএমবিতে যুক্ত হন। তার কিছু সঙ্গী গ্রেফতার হলে তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস সাইফুল শিক্ষার্থী অবস্থায় জেএমবিতে যোগ  দেন। তিনি নিজ এলাকা ঝিনাইদহে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালান। নিজেদের কয়েকজন সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। মামুন ও সাইদুর জঙ্গিবাদের ভিডিও দেখে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মুখে তাদের অনেক সঙ্গী আত্মগোপনে চলে যান। সঙ্গীদের থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরিবার থেকেও দূরে চলে যান। এক পর্যায়ে তারা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।