• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জলঢাকার একমাত্র বধ্যভূমি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

৪৭ বছর পেরিয়ে গেলে স্বাধীনতার  আজও আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি নীলফামারী জেলার বৃহৎ জলঢাকা উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক কালীগঞ্জ বধ্যভূমির। ১৯৭১সালে ২৭ এপ্রিল পাক সেনাদের গুলিতে যেখানে প্রাণ দিয়েছিলেন ৪ শতাধিক হিন্দু পরিবারের নিরহ মানুষ। বধ্যভূমির ফলকে ৭৮ জন শহীদের নাম জানা গেলেও বাকি শহীদদের নাম আজও রয়েছে অজানা। অজানা শহীদদের নাম উদ্ঘাটনসহ বধ্যভূমিটির আধুনিকায়নের জোড় দাবি জানিয়েছেন শহীদদের স্বজনসহ এলাকাবাসী।

জলঢাকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বাজারে অবস্থিত এই বধ্যভূমিটি,দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘদিন পর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আবদুর রউফ এমপি হয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ নির্বাচিত হয়ে সেই সময় তাঁর প্রচেষ্টায় বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছুদিন পর থেকে স্মৃতিস্তম্ভটি অবহেলায় পরে আছে যা দেখার যেন কেউ নেই। প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসে এই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অনেক কথা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে বক্তব্য দেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ আগত অতিথিরা, কিন্তু দিবস চলে গেলে কারোই মনে থাকে না স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার বা আধুনিকায়নের কোন প্রক্রিয়া।

মহান বিজয় দিবসের ৩ দিন পূর্বে বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বধ্যভূমির চারপাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, মলমূত্রের দূর্গন্ধ ও স্মৃতিস্তম্ভের সীমানা প্রচীর ঘেঁসে মাছ-মাংস বিক্রির দোকানসহ বিভিন্ন দোকান পাঠ যা স্মৃতিস্তম্ভটিকে ঘিরে রেখেছে।

বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে বধ্যভূমিগুলো যখন খুঁজে বের করে সংস্কার, মেরামত এবং কমপ্লেক্য্র নির্মাণ করছে। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় এর ব্যতিক্রম। একমাত্র বধ্যভূমিটির মেরামত ও সংস্কারে নজর দিচ্ছে না কেহই। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন,“স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অনেক কথা এবং প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত এর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি,তবে আশা করছি বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলার একমাত্র বধ্যভূমিটি আধুনিকায়নে নজর দেবেন।’’ সেদিনের গণহত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ হেমন্ত শীলের ছেলে কমলাকান্ত শীল জানান, ‘‘যুদ্ধের সময় আমরা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বালাগ্রাম হতে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়ার পথে কালীগঞ্জে একত্রিত হই। কিন্তু সেখানে পাকসেনাদের ৭টি গাড়ি এসে আমাদের আটক করে এবং ছেলে বুড়ো, শিশু মহিলাদের আলাদা করে। তারপর বুড়ো ও যুবকদের একসঙ্গে সারিবদ্ধ করে দাড় করায় ও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সে সময় আমি শিশুদের দলে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছি।’’ সেই সময়ে যুবকদের দলের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া শহীদ অশ্বিনী কুমার অধিকারীর ছেলে অমর অধিকারী বলেন,‘‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সমবেদনা স্বরূপ ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি চিঠি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে প্রত্যেক শহীদ পরিবার মহকুমা প্রশাসকের নিকট হতে এক বান্ডিল টিন ও ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা করে চেক পাই। এই ছিল আমাদের শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। তবে এলাকাবাসীর দাবি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক সেনাদের হাতে নারকীয় হত্যাকান্ডের এই নির্মম ঐতিহাসিক স্থান কালীগঞ্জ বধ্যভূমির স্থানটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আধুনিক কমপ্লেক্য্র নির্মাণ করার।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজাউদ্দৌলা এ প্রতিবেদককে বলেন,''সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে আমি এই উপজেলার দায়িত্বে থাকলে স্মৃতিস্তম্ভটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাবো ইনশাআল্লাহ্।''