• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

জুয়া সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০১৯  

সম্প্রতি সময়ের সবচে আলোচিত শব্দ ক্যাসিনো। ক্যাসিনো আসলে কী? এর সহজ ও সোজা উত্তর হলো জুয়া। আমাদের দেশে জুয়া দ্বারা যা বুঝা যায়; উন্নত দেশে ক্যাসিনো দিয়ে তাই বুঝায়।

আমাদের গ্রাম অঞ্চলে শীত মৌসুমে যাত্রা বা পালাগানের আসরে প্রসিদ্ধ একটি খেলা হলো ‘পাশা’। ক্যাসিনোকে সেই পাশার আধুনিক রূপ বলা যেতে পারে।

এই জুয়া খেলা আজকের ক্যাসিনো আমাদের সমাজে একটি ঘৃণিত গর্হিত ও অপরাধজনিত একটি কাজ। সকলের সামনে খেলা যায় না, বলা যায় না। আমাদের রাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ীও জুয়া বা ক্যাসিনো একটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ কাজ। এই ক্যাসিনো/ জুয়া মারাত্মক সামাজিক অপরাধ।

জুয়াড়ি মানে অসুখী মানুষের জীবনযাপন। জুয়াড়িরা কখনো সুখী হয় না। হতে পারে না। এই ব্যক্তি ও সমাজকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। এর দ্বারা একশ্রেণির মানুষ ওপরে উঠতেই থাকে আরেক শ্রেণি মানুষ সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পারে। অতঃপর অনোন্যপায় হয়ে চুরি ডাকাতি রাহাজানি ছিনতাইসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। একারণে ইসলামের দৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও হারাম। এ ব্যাপারে কোনো আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি।

বাংলায় জুয়ার আরবি প্রতিশব্দ মাইসির ও কিমার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সময় জন্মগ্রহণ করেন- সেই সময়টাতে পুরো দুনিয়াতে জুয়া খেলার প্রচলন ছিল। ওই জাহেলিয়াতের যুগে প্রধান খেলার নামই ছিল জুয়া। জুয়া সমাজে এতটাই ব্যাপক ছিল যে, এটাকে মানুষ অপরাধ মনে করতো না। প্রতিটি বাজারে প্রতিটি মেলাতে প্রথম প্রধান আসর ছিলো জুয়ার আসর। এই খেলার প্রতি তাদের এতটাই ঝোঁক ও শখ ছিল যে, জুয়ার বাজিতে কখনো নিজ ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীদের বাজি রাখতো (নাউযুবিল্লাহ)

জুয়া কাকে বলে? এর উত্তর লিখতে গিয়ে পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম মুহাম্মদ শফি (রহ.) লিখেন, যে চুক্তিতে কোনো সম্পদের মালিকানায় এমন সব শর্ত আরোপিত হয়, যাতে মালিক হওয়া না হওয়া উভয় সম্ভাবনাই সমানভাবে বিদ্যমান থাকে, এর ফলে পূর্ণ লাভ বা লোকসান উভয় দিকেই বজায় থাকে, এটিই হলো জুয়া।’ (ফাতাওয়া শামী : ৫/৩৫৫) এই সংজ্ঞাকে সামনে রাখলে- টাকা দিয়ে যত খেলা হয় সব হারাম। আরো সহজভাবে বলি নিন্মে বর্ণিত ৪টি বিষয় যে খেলা বা কর্মকান্ড পাওয়া যাবে তাকেই জুয়া বলে আখ্যায়িত করা হবে- (ক) কিমার বা জুয়া দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে সংঘটিত একটি ভারসাম্যহীন চুক্তি। (খ) সামান্য পরিমাণ সম্পদ বাজি ধরে অন্যের বিপুল পরিমাণ সম্পদ গ্রাস করা, (গ) এমন কোনো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়, যা হওয়া না হওয়া উভয় সম্ভাবনাই সমানভাবে বিদ্যমান থাকে, (ঘ) জুয়ায় দু’পক্ষের একপক্ষ সমূলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর অপরপক্ষ কোনোরূপ বিনিময় ছাড়াই প্রথম পক্ষের অর্থসম্পদ লুটে নেয়। ফলে একপক্ষ জিতে লাভবান হয়, আর অপরপক্ষ হেরে সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে চুক্তিতেই এ চারটি মৌলিক বিষয় পাওয়া যাবে, সেটি জুয়া হিসেবে পরিগণিত হবে।

সুতরাং বলা চলে লটারি, হাউজি, বাজিধরা, চাক্কি ঘোরানো, রিং নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ধরনের যা খেলার প্রচলন রয়েছে সব জুয়া। বর্তমানে খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী চলে এই অবৈধ জুয়াবাজি। কোন খেলায় কোন দল জিতবে কোন দল হারবে, সাধারণভাবে জুয়াবাজিকে হারাম জানলেও আমাদের সমাজের এগুলোকে হারাম মনে করে না। এবং খারাপও মনে করে না। তাই হারহামেশা এইগুলো হয়েই যাচ্ছে। বন্ধু-বান্ধব, রুমমেট কিংবা সহকর্মীদের মধ্যে হাসতে হাসতেই চলে এ জুয়া। এগুলো কখনো মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। জুয়ার যাবতীয় প্রক্রিয়াকে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ () إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ

অর্থাৎ, ‘হে ঈমানদারগণ!  মদ, জুয়া , প্রতিমা ও লটারি এসবই শয়তানের কাজ। তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাক। আশা করা যায়, তোমরা সফল হতে পারবে। নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে তোমাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকে। তাই তোমরা এসব জিনিস থেকে বিরত থাকবে কি?’ (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ১৯০-১৯১)  

এই থেকে আমরা বুঝলাম- জুয়ার দ্বারা সমাজে শত্রুতা বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহর যিকির থেকে মানুষ বিরত থাকে। কোরআনের এই  ঘোষণা কতটুকু বাস্তব  ভুক্তভুগী মানুষই জানে।  আজ শহরে শহরে অলিতে-গলিতে পাড়ায় পাড়ায় প্রকাশ্য জুয়ার আসর বসে।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ

অর্থাৎ, ‘হে নবী! তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, উভয়ের মধ্যেই রয়েছে মহাপাপ।’ (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২১৯)

জাহেলিয়াতের যুগে ঘোড়দৌড়েও জুয়ার প্রচলন ছিল। দুই ব্যক্তি ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নামত এবং পরস্পরে এ চুক্তিতে আবদ্ধ হতো, যে পরাজিত হবে সে বিজয়ীকে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একেও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত করে হারাম ঘোষণা করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ) এর থেকে বুঝা গেল আমাদের গ্রাম দেশে ষাড়ের লড়াই, গরুর লড়াই, দুই মোড়গের লড়াই সবই হারাম এবং জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু জুয়াকেই হারাম করেননি, বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশকেও গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার জন্য ডাকবে তাকেও গুনাহর প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার প্রতি আহ্বান করবে, তার উচিত কিছু সদকা করে দেয়া।’ (বুখারি শরিফ)

উল্লিখিত কোরআন হাদিসের দ্বারা এ কথা প্রমাণ হলো যে, আমাদের দেশে খেলাধুলায় যে পরিমাণ অর্থ বাজিধরা হয়, ক্যাসিনো খেলা হয়, পাশা খেলা হয়, যাত্রায় যেসব খেলা হয় সবগুলো জুয়া ও নিষিদ্ধ। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমান জেনে বুঝে সজ্ঞানে এই সবগুলো খেলায় মত্ত হতে পারে না।