• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

জেনে নিন মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২০  

ধারাবাহিকভাবে মাসনুন দোয়ার আলোচনা চলেছে। গত লেখার বিষয় ছিল মসজিদে প্রবেশ করার দোয়া ও এর মর্মার্থ। আজ এ আলোচনায় উল্লেখ করছি মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া- 
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পড়ার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যে দোয়াটি সাব্যস্ত আছে তা হলো এই, 

بسم الله والصلوة والسلام على رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم انى اسئلك من فضلك
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’।


অর্থ : আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল মের ওপর। আয় আল্লাহ আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। (মুসলিম, নাসায়ী, মুসান্নামে ইবনে আবি শায়ব ১/২৯৮। হিসনে হাসীন। যাদুল মাআদ ২/৩৭৬)।

বাম পা দিয়ে বের হওয়া: মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বের করা সুন্নত। আসলে এটি খুবই মামুলি ও সাধারণ একটি বিষয় যে, ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা এবং বাম পা দিয়ে বের হওয়া। কিন্তু এই হালকা ও মামুলি কাজটিই আমরা যখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের ইত্তেবা ও আনুগত্যের ভিত্তিতে করব তখন এই সাধারণ আমলটুকু আল্লাহ তায়ালার মহবক্ষত ও ভালবাসা লাভের সোপান হিসেবে কাজ করবে। 

কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হয়েছে, আপনি লোকজনকে বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালবেসে থাক, তা হলে আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে ভালবাসবেন। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৩২)।

তাই যেসব কাজ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও আনুগত্য মনে করে সম্পাদন করা হয়, সেগুলো মানুষকে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজন বানায়, হোক সেই আমল খুব ছোট্ট ও সাধারণ।

সেই ব্যক্তি ফজিলত থেকে বিরত থাকবে: ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে এবং বাম পা দিয়ে বের হতে তেমন কোনো কষ্ট করতে হয় না এবং বাড়তি কোনো সময় ও নষ্ট হয় না, কোনো পয়সাও খরচা যায় না, কিন্তু কেউ যদি এব্যাপারে যত্নবান হয়ে খেয়াল করে তা হলে সে ইত্তেবায়ে সুন্নতের মহা ফজিলত হাসিল করবে, অন্যদিকে কেউ যদি বেখেয়ালে ডান পা দিয়ে বের হয় তা হলে তার গুনাহ হবে না ঠিক, কিন্তু ইত্তেবায়ে সুন্নতে মহা ফজিলত থেকে সে মাহরুম ও বিরত থাকবে। সুতরাং একে অভ্যাসে পরিণত করে নেয়া দরকার যে, যখনোই মসজিদে প্রবেশ করবে ডান পা দিয়ে করবে এবং যখন বাইরে বেরুবে বাম পা দিয়ে বেরুবে।

প্রবেশ করার এবং বের হওয়ার দোয়ার মধ্যে পার্থক্য: তারপর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় এই সংক্ষিপ্ত দোয়াটি পড়বে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক’ অর্থ : আয় আল্লাহ আমি আপনার নিকট আপনার ফজল প্রার্থনা করছি। খেয়াল করুন, যখন মসজিদে প্রবেশ করেছিলে তখন এই দোয়া পড়েছিলে, ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক’। অর্থ : আয় আল্লাহ আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। আর যখন বাইরে বেরুলে তখন প্রার্থনা করলে, আয় আল্লাহ আমি আপনার ফজল প্রার্থনা করছি। মসজিদে প্রবেশ করার সময় আল্লাহ তায়ালার রহমত প্রার্থনা করা হয়েছে, আর বের হওয়ার সময় প্রার্থনা করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার ফজল। রহমত ও ফজলের মাঝখানে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। তবে কোরআন হাদিসের পরিভাষায় প্রতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে শব্দ দুটোর মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।

রহমত দ্বারা দীনী নেয়ামত উদ্দেশ্য: কোরআনে কারিমে এবং হাদিসে রাসূলে যখনোই আল্লাহ তায়ালার রহমত শব্দ আসবে, এদদ্বারা তখন আল্লাহ তায়ালার দ্বীনি নেয়ামত উদ্দেশ্য নেয়া হবে। যেমন সঠিক পদ্ধতিতে ইবাদত করার তাওফিক হাসিল হওয়া আল্লাহ তায়ালার একটি রহমত। অনুরূপভাবে ইবাদতের মধ্যে ইখলাস ও ইত্তেবায়ে সুন্নতের তাওফিক হাসিল হওয়াও আল্লাহ তায়ালার রহমত। এগুলো দ্বীনি রহমত। মানুষ ইবাদত করার উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করে। তাই প্রবেশ করার সময় এই প্রার্থনা করবে, আয় আল্লাহ আমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিন অর্থাৎ আমার জন্য দ্বীনি নেয়ামতের দরজা খুলে দিন, যাতে মসজিদে প্রবেশ করার পর সঠিক পদ্ধতিতে ইবাদত আনজাম দিতে পারি। যাতে সহীহ তরিকায় নামাজ আদায় করতে পারি এবং ইখলাসের সঙ্গে আপনার সকল ইবাদত পালন করতে পারি। অন্যথায় এমনও হতে পারে যে, মানুষ মসজিদে প্রবেশ করার পর অনর্থক আলাপচারিতায় মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলবে, অথবা এমন কাজের মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করবে যার কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

ফজল দ্বারা উদ্দেশ্য পার্থিব নেয়ামত: অন্য দিকে কোরআন হাদিসের অধিকাংশ ফজল শব্দটি পার্থিব নেয়ামত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন উত্তম রিজিক, ভালো চাকরি, সুন্দর উপার্জন ব্যবস্থা, সুস্থতা, গৃহে আনন্দঘন পরিবেশ, এসব নেয়ামতকে ফজল শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়। কোরআনে কারিমে যেমন জুমার নামাজ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগন! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ। তারপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ তায়ালার ফজল অনুগ্রহ তালাশ কর। (সূরা: জুমআ, আয়াত: ৯-১০)। আল্লাহ তায়ালার ফজল তালাশ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পার্থিব নেয়ামতের, ব্যবসায় বাণিজ্য ও রুজি রোজগারের সব রকম উপায় উপকরণ তালাশ কর। এছাড়া কোরআনুল কারিমের অন্য আয়াতেও ব্যবসায় বাণিজ্য ও অর্থ সম্পদকে ফজল বলে অভিহিত করা হয়েছে।

মসজিদ থেকে বেরুবার পর ফজলের প্রয়োজন: ইবাদত শেষ করে মানুষ বাইরে বেরোয়। বাইরে তাকে বহু পার্থিব প্রয়োজনের মুখোমুখি হতে হয়। সেসব প্রয়োজন পুরা করা তার দায়িত্ব ও জিম্মাদারি, সুতরাং এই সময় এ প্রার্থনাই করবে, আয় আল্লাহ আমি কর্মব্যস্ত জীবনে প্রবেশ করেছি, আমি জীবন যুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছি। আয় আল্লাহ আমাকে আমার এই জীবন যুদ্ধে আপনার ফজল ও অনুগ্রহ দান করুন, আপনার পক্ষ হতে হালাল রিজিক উপার্জনের তাওফিক দান করুন, আমার সকল কর্মকাণ্ডে আপনি আমাকে বরকত দান করুন। আমার কাজের মধ্যে নুর দান করুন। আমাকে জায়েজ পন্থায় রিজিক উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। মসজিদের ভেতরে থাকা অবস্থা রহমতের প্রয়োজন ছিল। তাই সে সময় রহমত প্রার্থনা করেছি, মসজিদের বাইরে আসার পর এখন প্রয়োজন ফজল । এজন্য এখন আল্লাহ তায়ালার ফজল প্রার্থনা করছি। দেখুন কী প্রজ্ঞা ও বিচক্ষনতার সঙ্গে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে দোয়া ও প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন, যখন যা প্রয়োজন, সেদিকে বিবেচনা করেই তিনি উম্মতকে এই আদর্শ শিক্ষা প্রদান করেছেন।

যদি এসব দোয়া কবুল হয়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের শিখানো দোয়া সমূহের মধ্যে হতে যদি একটি দোয়াও কবুল হয়ে যায় তা হলে আর কোনো সমস্যাই থাকার কথা না। মসজিদে প্রবেশ করার সময় মানুষ যখন এই প্রার্থনা করবে, আয় আল্লাহ আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন। আর দোয়া যদি কবুল হয় এবং রহমতের দরজা যদি খুলে যায় তা হলে সর্ব প্রকার দ্বীনি নেয়ামত তখন সহজেই হাসিল হয়ে যাবে। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় যখন এই প্রার্থনা করবে, আয় আল্লাহ আমি আপনার কাছে ফজল প্রার্থনা করছি। তখন যদি এই দোয়া কবুল হয় এবং ফজল হাসিল হয় তা হলে পার্থিব সকল প্রয়োজন আল্লাহ তায়ালার ফজল ও করমে, দয়া ও অনুগ্রহে পূর্ণ হয়ে যাবে।

পার্থিব নেয়ামত আল্লাহর ফজল হয় কীভাবে: ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি, কোরআন হাদিসে উক্ত ফজল শব্দটি সাধারণভাবে রুজি রোজগার ব্যবসা বানিজ্য চাকরি বাকরি জীবন যাপনের অন্যান্য উপকরণ উদ্দেশ্য। সুতরাং ব্যবসায়, চাকুরি, কৃষি ইত্যাদি এসব আল্লাহ তায়ালার ফজলের অন্তর্ভুক্ত। এখন প্রশ্ন হতে পারে, চাকরি, ব্যবসায়, কৃষি এবং অন্যান্য জীবনোপকরণ আল্লাহ তায়ালার ফজল হয় কীভাবে? অথচ মানুষ মনে করে ব্যবসায় শুধু দুনিয়াবি কাজ এবং একটি বিশেষ রেওয়াতে তা পরিচালিত হয়। যেমন এক ব্যক্তি পন্যসামগ্রী নিয়ে বাজরে গিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে। বিক্রেতা এসে পছন্দসই পণ্য ক্রয় করে। এর ফলে বিক্রেতা লাভবান হয়। কিংবা কেউ চাকরিজীবী, সারা মাস চেষ্টা মেহনত করে, সময় ব্যয় করে। এরপর মাস শেষে বেতন পায়। কিংবা কেউ কৃষিজীবী জমি চাষাবাদ করে। বীজ বপন করে, পানি দেয়, প্রচুর খাটা খাটুনী করে তারপর কয়েক মাস পর ফসল ঘরে তোলে। সুতরাং এসবকিছুই মানুষের চেষ্টা মেহনতের ফলেই হাসিল হয়। এরপরও এগুলোকে কেন আল্লাহ তায়ালার ফজল বলা হবে?

মানুষ ধোঁকায় আছে? উল্লিখিত প্রশ্নের জবাব হলো, কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা এসব জিনিসকে ফজল আখ্যায়িত করে এক মহা বাস্তবতার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং অনেক বড় ধোঁকা থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছেন। কেননা মানুষ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পুঁজি খাটায়, দোকান নেয়, দোকানে পন্য সামগ্রী একত্র করে। দোকানের সামনে সাইন বোর্ড লাগায়। তারপর সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত দোকান খুলে বসে থাকে, এর ফলে মুনাফা অর্জিত হয়, আয় রোজগার বাড়ে, তাই মানুষ এই মনে করে ধোঁকায় পড়ে যায় যে, এসব কিছু আমার শ্রম প্রচেষ্টার ফসল, আমার হাতের কামাই। আমি যেহেতু পুঁজি খাটিয়েছি শ্রম ও সময় দিয়েছি, তাই আমার এই মুনাফা হাসিল হয়েছে, এই ধোঁকায় পড়ে থাকার কারণে মানুষ এসব বাহ্যিক উপায় উপকরণকে আয় রোজগারের আসল কারণ মনে করে বসে।

আল্লাহর ফজল ব্যতীত কিছুই হাসিল হয় না: কোরআনুল কারিমে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহর ওয়াস্তে এই ধোঁকায় পড় না। কেননা তোমাদের এই কামাই উপার্জনের পেছনে অবশ্যই তোমাদের শ্রম, সময়, পয়সা ও পুঁজি লাগিয়েছ ঠিক কিন্তু যদি তার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার ফজল অন্তর্ভুক্ত না হতো তা হলে তোমাদের হাজারও পয়সা পুঁজি হাজারও সময় শ্রম ব্যয় করা সত্তেও এক পয়সাও উপার্জন করতে পারতে না। তোমাদের দায়িত্ব কেবল দোকান খুলে বসা, তবে গ্রাহক আনা তোমাদের ইচ্ছাধীন না। তোমরা চাইলেই গ্রাহক আনতে পার না। বহু মানুষ দোকান খুলে পসরা সাজিয়ে বসে আছে। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বসেই থাকছে। কিন্তু কোনো গ্রাহক পাচ্ছে না। তা হলে দোকানে গ্রাহক কে পাঠায়? গ্রাহকের অন্তরে একথা কে ঢেলে দেয় যে, অমুকের দোকানে গিয়ে কেনা কাটা কর। অথচ একই পন্য অন্য দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। সে খানে কেন গ্রাহক যাচ্ছে না? তোমার দোকানে কেন আসছে? ব্যবসায়ের বাহ্যিক সব উপায় তুমি একত্র করেছ ঠিক। কিন্তু সেই বাহ্যিক উপায়ের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি করে তোমার জন্য মুনাফার মাধ্যম বানানোটাই আল্লাহ তায়ালার ফজল। আল্লাহ তায়ালার ফজল ছাড়া কিছুই হতে পারে না।