• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

থমকে গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজয়রথ!

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮  

লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতেই থমকে গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজয়রথ! ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম এতটা বড় ধাক্কা খেলেন মোদি। আর যা কিনা আসলো বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে।

হিন্দি-বলয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে এবারই প্রথম পরাজিত করেছেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতি পদে নাম ঘোষণার ঠিক এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনেই রাহুলের অবিস্মরণীয় এই বিজয়।

তবে নির্বাচনে পরাজয় হলেও ভালো ফল করায় কংগ্রেস থেকে শুরু করে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি।

এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, জয় ও পরাজয় জীবনেরই অংশ। আজকের ফল আমাদের আরো বেশি করে উন্নয়নের কাজ করতে প্রেরণা দেবে।

লোকসভার আগে মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, তেলঙ্গানা, রাজস্থান এবং ছত্রিশগড়- এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে ধরা হয় সেমিফাইনাল। এদিন কংগ্রেস অবশ্য মিজোরামে ক্ষমতা হারিয়েছে। তেলঙ্গানাতেও চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে তাদের জোট কাজে আসেনি।

বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ভোট এগিয়ে আনার চালেই সেখানে সফল হন চন্দ্রশেখর রাও। কিন্তু গোটা দেশের চোখ আজ যে দিকে ছিল, সেই হিন্দি বলয়ের রাজস্থান এবং ছত্রিশগড়ে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস। যদিও মাত্র দু’টি আসনের জন্য রাজস্থানে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না।

আর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মধ্যপ্রদেশে রাত পর্যন্ত ম্যাজিক সংখ্যার নিচেই থেকেছে দু’দল। সেখানেও সরকার গড়া নিয়ে নিশ্চিত কংগ্রেস। কারণ অখিলেশ-মায়াবতীর দল সেখানে যে সংখ্যক আসন পেয়েছে, তা সরকার গড়ার অন্যতম চাবি হয়ে উঠেছে।

গতকাল পর্যন্ত মোদির প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ বড়মুখ করে বলছিলেন, সব রাজ্যেই জিতবে বিজেপি। সকালে সংসদে গেলেও ভোটের ফল স্পষ্ট হওয়ার পরে তাকে আর দেখা যায়নি। রাতে টুইট করে তেলঙ্গানায় জয়ের জন্য চন্দ্রশেখর রাওকে ধন্যবাদ জানালেও তিন রাজ্যের হার নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি বিজেপি সভাপতি!

এদিকে সারাদিন চুপ থেকে রাতে টুইট করে মোদি বললেন, হারজিত থাকেই। কংগ্রেসকে অভিনন্দন। সেই সঙ্গে তেলঙ্গানা ও মিজোরামের কথা উল্লেখ করে মোদী নিজেদের এমন দুর্দিনেও কংগ্রেসকে তাদের ব্যর্থতার কথা মনে করিয়ে দিলেন।

খোদ হিন্দি বলয়ে বিজেপির এমন হাল কেন?

এমন প্রশ্নে দলের নেতারা বলছেন, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্রিশগড়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিল। মানুষ বদলও চাইছিলেন। বেকার ও কৃষকদের অসন্তোষ ভীত নড়িয়ে দিয়েছিল। সেই রোষেই উড়ে গেলেন ছত্রিশগড়ের রমন সিংহ। মধ্যপ্রদেশেও তার ছাপ পড়েছে। তবে সেখানে অনেকটাই সামলানো গেছে শিবরাজ সিংহ চৌহানের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং সাংগঠনিক শক্তির মাধ্যমে।

রাজস্থানে গত দু’দশক ধরে এমনিতেই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হচ্ছে। তার উপরে ছিল ‘মহারানি’ বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। শেষ মুহূর্তে গেরুয়া বাহিনী এবং মোদি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেও হার সামাল দিতে ব্যর্থ হন।

ফলে তিন রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর এখন বিজেপির কপালে ভাঁজ। কারণ তেলঙ্গানা বা মিজোরামেও তাদের লাভ হয়নি। এক সময়কার জোটসঙ্গী এমএনএফ মিজোরামে জেতার আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা বিজেপির হাত ধরবে না। তেলঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও একই কথা জানিয়েছেন। ফলে বিজেপির মধ্যে এখন নানা প্রশ্ন। এই ফল কি মোদীর বিরুদ্ধে জনমত, নাকি অন্য কিছু!

রাজনৈতিক অঙ্গণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন বলা হচ্ছে, মোদির প্রধান প্রতিপক্ষ এখন রাহুল গান্ধী।

মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের রাহুল বলেন, ২০১৯-এ আর ফিরছেন না মোদি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছেই শিখেছি, কী করা উচিত নয়।

এ প্রেক্ষিতে লোকসভায় কী হবে- এমন প্রশ্নে রাহুল বলছেন, আসল কথাটি হল, কৃষক-যুবকদের ক্ষোভ ধরতেই পারেননি মোদি। উল্টো নোটবন্দি, জিএসটি করে আমজনতার হাল আরো বেহাল করেছেন তিনি। এই ফল সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন।

মোদির পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে রাহুল আরো বলেন, মোটা দাগে কয়েকটি কারণে পরাজয় হয়েছে মোদির। প্রথমত, ভারতের হৃৎস্পন্দন শুনতে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির মতো বিষয়কে সামনে রেখে ক্ষমতায় এসেছেন মোদি। এতে মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। তারা বুঝে ফেলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত। তৃতীয়ত, ২০১৪-তে মানুষ বিশাল সুযোগ দিয়েছিলেন মোদিকে। অথচ তিনি যুবক-কৃষক বা দেশের কথা শুনলেনই না। চতুর্থত, তার ঔদ্ধত্য এসে গিয়েছে। আমি তার থেকেই শিখেছি, মানুষের কথা শুনে কাজ করতে, বিনয়ী হতে। পঞ্চমত, একুশ শতকের দিশা দেখাতে পারবেন না মোদি। আমরা কোনো আক্রমণ না করেই তা দেব।

‘মোদির জন্য সত্যিই খারাপ লাগে’- এমন মন্তব্য করে রাহুল আরো বলেন, মাকে বলছিলাম, ২০১৪ সালের ভোট আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। নরেন্দ্র মোদিও শিখিয়েছেন- কী করতে নেই। প্রধানমন্ত্রী এখন পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। বিরোধীদের জবাব দেবেন কী! সেই চাপই তো নিতে পারছেন না, জবাবও দিতে পারছেন না।