• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

দুর্নীতি করেও এখনও স্বপদে বহাল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ২০ কর্মকর্তা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৯  

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত কয়লাখনির ২০ কর্মকর্তা। তবুও স্বপদে বহাল থেকেই চাকরি করছেন তারা।

সেই সময় সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বর্তমানে কয়লাখনিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করছেন অভিযুক্ত সেই ২০ কর্মকর্তা। বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত হচ্ছেন কয়লাখনিতে কর্মরত সেই মামলার স্বাক্ষী জুনিয়র কর্মকর্তা/কর্মচারীরা।  

এদিকে দুদকের চার্জশিটভুক্ত (অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত) কর্মকর্তরা স্বপদে বহাল থেকে  চাকরি করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে খনির অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।

তারা জানান, কয়লা গায়েবের ঘটনায় অভিযুক্তরা স্বপদে বহাল থেকে চাকরি করায় খনির আরো বড় রকমের ক্ষতিসাধন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রাম সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা মশিউর রহমান বুলবুল জানান, দুদকের তদন্তে ও অভিযোগপত্রে যারা অভিযুক্ত তারা স্বপদে বহাল থাকায় কয়লা গায়েবের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের এখন পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ জন্য তিনি মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইনানুগভাবে তাদের পদচ্যুতের দাবি জানান।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, যে সব সাংবাদিকরা কয়লা গায়েবের ঘটনায় একাধিক সংবাদ পরিবেশন করেছেন তাদের কয়লাখনিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের হাতে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে গিয়ে দেখা যায়, খনির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাছান ইমাম সাজু। তিনি দুদকের দেয়া অভিযোগপত্রের অভিযুক্ত আসামি। একইভাবে দায়িত্বে রয়েছেন দুদকের অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক জোবায়ের হোসেন, ব্যবস্থাপক শোয়েবুর রহমান, অশোক কুমার হাওলাদার, আরিফুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান, মোর্শেদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, জাহেদুর রহমান, সত্যেদ্রনাথ বর্মন, সহকারী ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান।

তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বে স্বপদে বহাল রয়েছেন। এছাড়া জামিনে মুক্ত হওয়া মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়া, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, অন্যত্র বদলি তারাও সেখানে চাকরি করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, খনির নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করর্পোরেশন  (পেট্রোবাংলা) সেখানে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিবে সেই মোতাবেক কাজ করা হবে।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, মামলায় অনেক বড় বড় কর্মকর্তার নাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ প্রয়োজন। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে সেখান থেকে মতামত আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে গত ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা।

কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর খনির কয়লা ইর্য়াডে কয়লা না থাকায় জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে তোলপাড় শুরু হলে কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।

পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করে চলতি বছরের গত ২৪ জুলাই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ জন কর্মকর্তা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর চলতি বছরের গত ১৬ অক্টোবর খনির সাবেক সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) অভিযুক্ত ২৩ জন কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।  সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহম্মেদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী ও সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খাদেমুল ইসলামের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে, বাকি ২০ কর্মকর্তাকে জামিন দেয় আদালত। জামিনে মুক্ত হয়ে এই ২০ কর্মকর্তার মধ্যে ১৩ জন কর্মকর্তা জামিনে মুক্ত হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে স্বপদে থেকে বহাল রয়েছেন। বাকি সাতজন কর্মকর্তা চাকরি করছেন দেশের অন্যান্য স্থানে।