• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

দেশপ্রেমের অনন্য ভাস্কর্য ‘বিদ্যার্ঘ’

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০১৮  

প্রায় ৫ ফিট দৈর্ঘের দু’জন মুক্তিযোদ্ধা সগর্বে দাঁড়িয়ে আছেন। একজনের হাতে বন্দুক এবং অন্যজনের হাতে কলম। বন্দুকের চেয়ে কলম বড়- তা বোঝানোর জন্য কলমটি বন্দুকের চেয়ে উপরে। একজন দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আরেকজন কলম হাতে লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এই দুই যোদ্ধার দেখা মিলবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে। ঠিকই ধরেছেন, ভাস্কর্য-‘বিদ্যার্ঘ’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল বুদ্ধিজীবী স্বাধীনতার যুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন তাদের স্মৃতিকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে রক্ষিত করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাবিবুর রহমান হলে এটি নির্মাণ করেন।

দু’জন যোদ্ধার নিচে একটি সাদা রংয়ের আবক্ষ ভাস্কর্য। এটি শহীদ হবিবুর রহমানের। ১৯৭১ সালে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ঘাটি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যা করেছিলো তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে। এরপর শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনেই নির্মাণ করা হয় বিদ্যার্ঘ ভাস্কর্যটি।

ভাস্কর্যটির স্থপতি শিল্পী শাওন সগীর সাগর। এটি উদ্বোধন করা হয় ২০১১ সালের ২৬ মার্চ।

ভাস্কর্যটি একটি ষষ্ঠভূজের উপর নির্মিত। কালো রংয়ের ষষ্ঠভূজটিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রথম ভূজটিতে গ্রাম ও শহরের মানুষের একসঙ্গে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয়টিতে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় ভূজটিতে স্থান পেয়েছে ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এতে দেশ থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দেয়ার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে চতুর্থ ভূজটিতে। পঞ্চম ভূজে স্থান পেয়েছে কাঙ্খিত বিজয়। যাদের আত্মত্যাগে বিজয় অর্জিত হয়েছে তাদের সম্মানে সারাদেশে অসংখ্য শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ষষ্ঠ ভূজটিতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের একটি ইতিহাস গ্রন্থ। গ্রন্থটি এমনভাবে তৈরি যাতে বুঝা যায়, এতে অনেক পৃষ্ঠা রয়েছে যা বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামকে নির্দেশ করে। গ্রন্থটির এক পৃষ্ঠায় লেখা আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপর পৃষ্ঠায় লেখা শহীদ হবিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা- কর্মচারীর আত্মদানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রন্থটির ঠিক উপরে রয়েছে একটি সূর্য- যা বাঙালি জাতিকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি এবং আলো দিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের মাঝখানে লেখা বিদ্যার্ঘ শব্দটি জ্ঞানের আলোকে বোঝানো হয়েছে।

ষষ্ঠভূজটি পোড়ামাটির তৈরি। লাল রংয়ের বেষ্টনি দিয়ে পুরো ষষ্ঠভূজকে আবদ্ধ করা হয়েছে। লাল রংয়ের বেষ্টনি দিয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হলের বাইরের দেয়ালের লাল রং বোঝানো হয়েছে। বেষ্টনির মাঝে রয়েছে সবুজ ঘাস যা দেশের লাল সবুজের পতাকা নির্দেশ করছে।

শিকল দ্বারা ষষ্ঠভূজটিকে ঘিরে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। বাঁকানো শিকলগুলো এমনভাবে তৈরি যেনো একজন আরেকজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো দেশের নতুন প্রজন্ম যারা দেশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমুন্তত রাখতে বদ্ধপরিকর।