• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দেশে ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ’ চালুর তাগিদ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২০  

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমলেও লকডাউন শিথিল হয়েছে দেশে, প্রয়োজনে বের হওয়াও থেমে নেই। এখন কেউ বের হওয়ার সময় তার যদি ধারণা থাকে, যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কিছু সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগী থাকতে পারেন, তাহলে সতর্কতা থাকবে বেশি। আবার পথে কিংবা কোনো স্থানে কোভিড-১৯ রোগীর কাছাকাছি এলেও যদি সেই সতর্কবার্তা পাওয়া যায় হাতের মোবাইল ফোনটিতে, তাহলে সতর্ক হয়ে সংক্রমণ এড়ানো যায়।

ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আটকাতে স্মার্টফোন ডিভাইসের মাধ্যমে অ্যাপ ব্যবহার করছে বিভিন্ন দেশ। এই অ্যাপে আবার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন ঘটছে বলে অভিযোগ উঠলেও  তা এখনও নিয়মিত আলোচনা ও গবেষণার বিষয়।বাংলাদেশে লকডাউন শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের গতি বেড়ে যাওয়ায় সে ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের তাগিদ দিচ্ছেন তথ্য প্রযুক্তিবিদরা।

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতেই ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’য়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ আক্রান্ত ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে তাদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ করে ফেলা। তাতে রোগের বিস্তারও আটকে যাবে। বিষয়টি নিয়ে সোয়াজিল্যান্ডে  ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেজারমেন্ট (আইএইচএম) সাউদার্ন আফ্রিকার হেলথ ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক পুলক মাহমুদ বলেন, “আমাদের অ্যাপ নিয়ে ভাবতে হবে। আমি বেশিদিন ঘরে থাকতে পারবো না। আমাকে বের হতেই হবে।

“প্রাইভেসি বজায় রেখে আমি যদি দেখতে পারি, আমি যে মিটিংয়ে যাচ্ছি, ওখানে দুজন বা তিনজনের ইনফেকশন আছে বা ছিল, তাহলে আমি প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারব। এটা আমাকে সাহায্য করবে ডিসিশন মেকিংয়ের জন্য।” চীনে যেমন প্রথম হানা দিয়েছিল করোনাভাইরাস, তেমন চীনই সবার আগে লকডাউন তুলে নিতে শুরু করে। তবে এর মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু করে তারা।

এরপর একে একে দক্ষিণ কোরিয়া,  রাশিয়া,  ইসরায়েলও লোকেশন ম্যাপ, কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড  ফিচার দিয়ে নিজ নিজ দেশে অ্যাপ চালু করে।  ভারত সেদেশে চাকরিজীবীর জন্য সরকারের তৈরি করা ট্রেসিং অ্যাপ ‘বাধ্যতামূলকও করেছে। এদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে  দানা বেঁধে উঠেছে অ্যাপে গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কা। এই আশঙ্কা নিরসনে ‘গবেষণা ও সময় বিনিয়োগে’ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এখন মানুষের বেঁচে থাকাকে অগ্রাধিকার দিতে চান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ আল্লাইয়ার।

তিনি  বলেন, “সারাবিশ্ব যে অবস্থার মধ্যে আছে, তাতে আগে বাঁচতে হবে আমাদের। এটা শুধু একা আমার বাঁচা না, আশেপাশের সবাইকে নিয়েই বাঁচতে হবে। এই সময় কিছু প্রাইভেসি চিন্তা বাদ দিয়ে এরকম অ্যাপকে স্বাগত জানাতে হবে আমাদের।” টিকা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই মহামারী ঠেকাতে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই বলে মনে করেন আল্লাইয়ার।

অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবিকার চাকা ধীরে ধীরে সচল করতে দেশে ইতোমধ্যে অনেক দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এখনও চলমান থাকলেও সড়কে অন্যান্য গাড়ির ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। অনেক মানুষই কাজ ও আর্থিক লেনদেনে ঘরের বাইরে আসা শুরু করেছেন। লকডাউন কিছুটা শিথিলেই সড়কে এমন ভিড়লকডাউন কিছুটা শিথিলেই সড়কে এমন ভিড় এই পরিস্থিতিতে  ‘ম্যানুয়াল নয়’ বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করার যথার্থতা বোঝাতে  ডিআইইউর শিক্ষক আল্লাইয়ার বলেন, “দেশে যেভাবে লকডাউন শিথিল হয়ে আসছে, তাতে এই ধরনের প্রযুক্তি চালু করা দরকার।

“এখন স্মার্টফোনের ব্যবহার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও করছে। ইন্টারনেটও ব্যবহার করছে। আমি মনে করি সরকার চাইলেই এটা করতে পারে, আগামির জন্য প্রস্তুত হতে।” তবে দেশে নিজের সংক্রমণের তথ্য লুকিয়ে রাখার প্রবণতা ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ অ্যাপের মূল উদ্দেশ্য সফল হতে দেবে না বলেও মনে করছেন তিনি। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮  মার্চ। দুই মাসের মধ্যেই সামাজিক সংক্রমণের আকার নেয় এই ছোঁয়াচে রোগটি। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে উপসর্গ লুকিয়ে রাখছেন; এমনকি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও জানা গেছে।  এই মুহূর্তে জাপানে রয়েছেন ট্যাপওয়ার সলিউশনস লিমিটেডের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা নিটন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও জনসমাগম নজরে রাখতে  প্রাযুক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রযুক্তি খুবই কার্যকর। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে কি না তা বুঝতেও প্রযুক্তির ভালো প্রয়োগ সম্ভব। “প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং খুবই কার্যকর। এমনকি লকডাউন উঠে গেলে ক্রস বর্ডার চলাচলের সময়ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং প্রয়োজন।”

দেশে গত এপ্রিলে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখতে ‘স্টে হেম, স্টে সেফ’ স্লোগানে ‘নিরাপদ’ মোবাইল অ্যাপ চালু করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। ওই মাসেই  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী মহামারী নভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলা ওয়েব পোর্টাল কোভিড১৯ ট্র্যাকার ডটগভ ডটকম। ওয়েবভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এই পোর্টালে সেসব তথ্য ম্যাপের মাধ্যমে দেখায়।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মী দেখাচ্ছেন ডাউনলোড করা অ্যাপযুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মী দেখাচ্ছেন ডাউনলোড করা অ্যাপ
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সরকারের কাছে এই বিশেষ সময়ে আরো প্রত্যাশা রেখে আইএইচএম সাউদার্ন আফ্রিকার পুলক মাহমুদ এই পোর্টাল নিয়ে বলেন, “এটা জাস্ট একটা ইনফরমেশন দিচ্ছে।…এটাকে শুধু একটা ড্যাশবোর্ড বলা যায়।” “এখানে কোনো কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং হচ্ছে না। এটা একটা ভিজুয়াল। সরকারের দিক থেকে একটা ইনিশিনিয়েটিভ, কোন জেলা কী অবস্থায় আছে এবং সংশ্লিষ্ট জেলায় লোকজন অন্তত যেন নিজেরা ঠিকঠাক মত চলাফেরা করে, সোশাল ডিসট্যান্স মেনে চলে”, বললেন নিটন কামরুজ্জামান। 

ডিআইইউর শিক্ষক আল্লাইয়ার মনে করছেন, সাধারণ মানুষ এই ম্যাপ দেখে সহজেই পরিস্থিতি আঁচ করতে পারবেন। তিনি বলেন, “এমন একটা ম্যাপ দেখলে পুরো দেশের সার্বিক অবস্থাটা বোঝার মতো মানসিকতা তৈরি হয়।” এ সময় ‘বিগ ডেটা’ ব্যবহার করার পরামর্শও দেন তিনি। “এতে প্রণোদনা ও জরুরি সেবা বন্টন সহজে করা সম্ভব হতো। একই সঙ্গে কোন এলাকা, কোন জনগোষ্ঠীকে আগে লকডাউন করা দরকার সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সরকার। কোন জায়গায় বেশি ডাক্তার দরকার, কোন জায়গায় হাসপাতাল দরকার, কত বেডের দরকার, বা পিপিই যদি দিতে চাই… এসব কিছু”, বলেন আল্লাইয়ার। 

তার ভ্যাষ্যে, “আমি জেনেছি, এই কোভিড-১৯ প্রতি শীত কালে আবারো দেখা দিতে পারে বিশ্বে। একটা সময় ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তখন এটা মামুলি একটা অবস্থায় চলে যাবে। তার আগ পর্যন্ত প্রযুক্তিবিদদেরও এগিয়ে আসতে হবে, ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে।”