• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

দ্বীন ইসলামে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির পরিণাম

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০১৯  

দ্বীন ইসলাম সিরাতে মুস্তাকিম অর্থাৎ মধ্যপন্থা। এতে ইফরাত অর্থাৎ চরম আদর্শবাদ এবং তাফরিত অর্থাৎ অতিরিক্ত উদারতার কোনো স্থান নেই। 

ইফরাত ও তাফরিত উভয়ই দ্বীনের জন্য ক্ষতিকারক। তাফরিতপন্থীরা দ্বীন ইসলামকে কাটছাঁট করতে চেষ্টা করে। এমন কী কোনো কোনো সময় তাদের হাতে দ্বীন ইসলামের অবস্থা এতই বিপন্ন হয়ে পড়ে যে, দ্বীন ও গায়রে দ্বীনের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য আর বর্তমান থাকে না। 

বর্তমান যুগেও তাফরিতপন্থী এক শ্রেণির লোক দ্বীন ইসলামের দেহে মারাত্মক রকমের অপারেশন করতে চেষ্টা করছে এবং একে দ্বীনের তাজদিদ বা সংস্কার নামে অভিহিত করতে অপচেষ্টা করছে। প্রকৃত প্রস্তাবে এটা তাজদিদে দ্বীন নয় বরং তা তাহরিফে দ্বীন। দ্বীনের সংস্কার নয় বরং দ্বীনের বিকৃতি সাধন বই আর কিছু নয়। তাজদিদে দ্বীন উলামায়ে হক্কানি ও আউলিয়ায়ে কেরামের কাজ আর তাহরিফে দ্বীন দুশমন ধর্মদ্রোহীদের কাজ। ইফরাত বা চরম আদর্শবাদও দ্বীনের জন্য কম মারাত্মক নয়। ইফরাত বা চরম আদর্শবাদীরা দ্বীনের খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি এত গুরুত্বারোপ করে যে, এর পরিণাম কওম বা মিল্লাত এর জন্য অত্যন্ত মারাত্মক রূপ ধারণ করে।

রাজনৈতিক ব্যাপারে যারা চরমপন্থা অবলম্বন করে তারা সামান্য ব্যাপারকেও অত্যন্ত গুরুত্বের ব্যাপার বলে বিবেচনা করে। এমনকী দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও তারা সেই ক্ষুদ্র ও গৌণ বিষয়টিকে বর্জন করতে সম্মত হয় না। দ্বিতীয়ত: তাদের মধ্যে প্রায়ই বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির অভাব পরিলক্ষিত হয়, ফলে তাদের কর্মপন্থা প্রায় অবাস্তব বিধায় শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত হয়। তৃতীয়ত: রূখসত ওয়া মাসলেহাত বলে কোনো জিনিসকে স্বীকার করতে চায় না, ফলে তাদের পক্ষে তাদরিজি প্রোগ্রাম ক্রমানুক্রমিক কর্মপন্থা অবলম্বন করা সম্ভবপর হয় না। অথচ অনেক সময় তাদরিজি প্রোগ্রাম ক্রমানুক্রমিক কর্মপন্থা অবলম্বন করা ব্যতীত গত্যন্তর থাকে না।

জীবনের কাম্য কী? দুনিয়া না আখেরাত?
জীবনের কাম্য দুনিয়া না আখেরাত? এটা নির্ধারণের ব্যাপারে বিশ্বমানব প্রধানত পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম শ্রেণি যাদের কেবলমাত্র দুনিয়াই কাম্য। তারা আখেরাতকে বিশ্বাস করে না। দ্বিতীয় শ্রেণি যারা বাহ‌্যত পরকালকে অবিশ্বাস করে না সত্য কিন্তু দুনিয়াকে অগ্রগণ্য মনে করে। তৃতীয় শ্রেণি যাদের দুনিয়া ও আখেরাতই কাম্য। চতুর্থ শ্রেণি যাদের কেবলমাত্র আখিরাতই কাম্য, এমনকী প্রয়োজনাতিরিক্ত দুনিয়া পাইলেও গ্রহণ করেন না।

পঞ্চম শ্রেণি যাদের আখিরাত কাম্য তবে দুনিয়াকে অর্জন করেন না। অবশ্য দুনিয়াকে কাম্য হিসেবে নয় বরং আখিরাতের সহায়ক ও পরিপূরক হিসেবে গ্রহণ করেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভ্রান্তি সুনিশ্চিত। তৃতীয় শ্রেণির বিভ্রান্তি মুক্তি নিশ্চিত নয়। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বিভ্রান্তি-মুক্তি নিশ্চিত। তবে চতুর্থ শ্রেণির পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের খেদমত আঞ্জাম দেয়া সম্ভবপর হয় না। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর বদদীন ও বেদীনদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়ে পড়ে। অথচ ব্যক্তিগত জীবনের ন্যায় সমাজ ও রাষ্ট্রকে ও ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেবলমাত্র পঞ্চম শ্রেণি একাধারে নিজেদের জীবন সামগ্রিকভাবে ইসলামের আদর্শে গড়ে তুলতে এবং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্রের সঠিক খেদমত আঞ্জাম দিতে সমর্থ হন। সুতরাং আমাদের ব্যক্তিগত জীবন গঠন এবং অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতির ব্যাপারে পঞ্চম শ্রেণির অনুকরণ ও অনুসরণ করা আবশ্যক।

সালফে সালেহিনের ইত্তেবা:
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, ওয়া আইম্মায়ে তরিকত প্রভৃতি আমাদের সালফে সালেহিন। সালফে সালেহিন আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় । হজরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, ‘আমার সাহাবাগণ নক্ষত্র সদৃশ। তাদের মধ্য থেকে যারই অনুসরণ করো না কেন হেদায়েত পাবে’।

মোটকথা সালফে-সালেহিনের এত্তেবা আমাদের জন্য অপরিহার্য। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সূরা ফাতিহায় এরূপ দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন। ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সিরাতুল মুস্তাকিম অর্থাৎ আপনার নিয়ামতপ্রাপ্ত নেক বান্দাদের পথে পরিচালিত করুন।’ এই নেয়ামতপ্রাপ্ত নেককার বান্দাদের পরিচয় নিম্নলিখিত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা নবীয়্যিন, সিদ্দিকীন, শহিদান ও সালেহিনের প্রতি নিয়ামত বখশিশ করেছেন।’ অতএব, কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফের ব্যাখ্যা দিতে হলে আমাদের অবশ্যই সালফে-সালেহিনের আনুগত্য করতে হবে। অন্যথায় গোমরাহীর পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘আমার জীবন যার হাতে সেই সত্তার কসম, হাউজে কাউসারের পানপাত্রগুলো অন্ধকার রাতের আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। জান্নাতের পাত্র, যে তা থেকে পান করবে পরে সে আর পিপাসার্ত হবে না। জান্নাত থেকে দু’টি নালা দিয়ে এতে পানি প্রবাহিত হবে।’ (আহমাদ, মুসলিম ও নাসায়ি)।

যারা এ পানির ভাগ্যবান পানকারী হবে:
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নতের অনুসারী, তাঁর পথ ও মতের ধারক বাহকরাই তাঁর কাছে হাউজের পাশে অবস্থান গ্রহণের সুযোগ পাবে। আর তারা, যারা কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা কবিরা গোনাহ তা থেকে বিরত থাকলে আমি তোমাদের ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।’ (সূরা নিসা : ৩১)।

হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করানোর আরো কারণের মধ্যে রয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ করা।

আমল এবং এর প্রতিদানের মাঝে একটা সুন্দর মিল রয়েছে। যে দুনিয়ায় নবীর (সা.) শরিয়তের অনুসরণ করবে, তাঁর পথ ও মতকে আঁকড়ে ধরবে এবং এর ওপরই মৃত্যুবরণ করবে, সে তার আমলের প্রতিদান হিসেবে হাউজে কাউসারে উপনীত হবে। আর যে দ্বীনের মাঝে পরিবর্তন করবে, বেদাত করবে সে সত্যবিমুখ হওয়ার করণে বাধাগ্রস্ত ও বিরত হবে।

হাউজে কাউসারের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। যে হাউজে কাউসারের প্রতি ঈমান রাখবেন না তার ঈমান থাকবে না।