• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণে নামাজ পড়ো।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৪)

তাফসির : আগের আয়াতে নবী হিসেবে মুসা (আ.)-কে মনোনীত করার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে তাঁর দায়িত্বের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আসমানি সব ধর্ম মৌলিক তিনটি বিষয়ে এক ও অভিন্ন। এক. তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ। দুই. নবুয়ত ও রিসালত। তিন. আখিরাত তথা পরকালের বিশ্বাস। আগের আয়াতে মুসা (আ.)-এর নবী হওয়ার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে তাওহিদ তথা মহান আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, মুসা (আ.)-এর মূল দায়িত্ব হলো, মানুষকে তাওহিদমুখী করা। এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস এবং শুধু তাঁর উদ্দেশে ইবাদত করা জরুরি। এ আয়াতে মুসা (আ.)-কে আল্লাহর স্মরণে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। মুসা (আ.)-এর শরিয়তেও নামাজ বা সালাত ছিল, যদিও তার পদ্ধতি মুহাম্মদ (সা.)-এর শরিয়তের সঙ্গে মিল থাকা জরুরি নয়।

এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, সালাত করো, যাতে আমাকে স্মরণ করতে পারো। অর্থাৎ মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফিল না হয়ে যায়, সেটি নিশ্চিত করে সালাত। সালাত আল্লাহর সঙ্গে বান্দার বন্ধন রচনা করে।

হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) লিখেছেন : ‘পবিত্র কোরআনের এক আয়াত থেকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান দেওয়ার হেকমত, হাকিকত ও দার্শনিক ব্যাখ্যা জানা যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সন্ধ্যায় ও প্রভাতে এবং অপরাহ্নে ও জোহরের সময়। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সব প্রশংসা তো তাঁরই।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ১৭-১৮)

কোরআনের এই আয়াত থেকে স্পষ্ট জানা যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য নির্ধারিত সময়গুলোতে আসমান ও জমিনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও নতুন সময়ে নতুন করে আল্লাহর তাসবিহ ও প্রশংসাগীতি উপস্থাপনের সুযোগ মেলে। এই সময়গুলোতে পৃথিবীতে যে পরিবর্তন হয়, সেটা মানুষের দেহ-মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। যখন রাতের নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে প্রভাতের আলো ফোটে, তখন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ফজরের নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে প্রভুর প্রশংসা করে। দুপুরের দিকে মানবদেহে তন্দ্রাভাব জাগ্রত হয়। এটি মানুষকে বিস্মৃতিপরায়ণ করে তোলে। তাই এ সময় জোহরের নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ স্রষ্টাকে স্মরণ করে। আসরের সময় তেজদীপ্ত সূর্যের প্রখরতা কমে যায়। এটি সব কিছুর ক্ষয় ও লয়ের ইঙ্গিত দেয়। ইঙ্গিত দেয় এ কথার দিকেও যে মানুষের সব যোগ্যতা ও পূর্ণতা এভাবেই ধীরে ধীরে ধ্বংস ও বিনাশের দিকে এগিয়ে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর বান্দা আসরের নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে সিজদাবনত হয়ে যায়।

একটি নতুন দিন শুরু হয় নতুন স্বপ্ন নিয়ে। সন্ধ্যায় সে স্বপ্নময় দিনের সমাপ্তি ঘটে। সমাপ্তি ঘটে দিনের আলোরও। মানুষ আবারও অন্ধকারে নিপতিত হয়। তাই এ সময় মাগরিবের নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছে, যাতে দুনিয়ার জীবনে ‘দীর্ঘ আশা’ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। এশার সময় পৃথিবী নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়। অন্ধকার হাজারো বিপদ-আপদের প্রতীক। দুনিয়া ও আখিরাতের সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে আশু মুক্তির জন্য এশার নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ ইবাদতের বরকতে আপদ থেকে রক্ষা পায়।’ [আহকামে ইসলাম আকল কি নজর মে, আশরাফ আলী থানভি, পৃষ্ঠা-৭২-৭৬ (সংক্ষেপিত)]