• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

নীলফামারীতে পাক সেনাদের কিভাবে পরাস্ত করেছিল জাতির সূর্য সন্তানরা

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮  

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি জেলা নীলফামারী। ১৯৭১ সালে ৬ থানা নিয়ে নীলফামারী ছিল একটি মহকুমা শহর। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নীলফামারী জেলা ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন খাদেমুল বাশার। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানকার অগণিত ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম শুরু করে।

মিটিং, মিছিল ও সভা সমাবেশ হতে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং শুরু হয় প্রতিরোধ। মহকুমা শহরে রক্ষিত অস্ত্রাগার হতে অস্ত্র সংগ্রহ করে ট্রেনিং শুরু হয়।

নীলফামারী মহকুমার অন্তর্গত একটি থানা সৈয়দপুর । সেখানে সিংহ ভাগ অবাঙ্গালীর আবাসস্থল। সেখানে একটি সেনাবাহিনীর বিশাল ক্যান্টনমেন্ট আছে। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রতিরোধ শুরু হলে অবাঙ্গালীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙ্গালীদের উপর। তারা নীলফামারী মহকুমার সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা জলঢাকা ও জেলা সদরে অগণিত বাঙ্গালীদের হত্যা করে, বাঙ্গালী নিধনের প্রতিবাদে গোটা জেলার মুক্তিকামী মানুষ প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।

প্রতিশোধের তাগিদে বিভিন্ন সীমান্ত থেকে বাঙ্গালী ইপিআর-এর সদস্যরা নীলফামারী শহরে সমবেত হতে থাকে। সংগে যোগ দেয় আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

৫ই এপ্রিল ইপিআর, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ হাজার হাজার জনতা ছুরি,বল্লম,বন্দুক, লাঠি নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমনের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে। পাক সেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য সৈয়দপুর হতে নীলফামারী পর্যন্ত রাস্তার দুই পার্শ্বে বাংকার করে ইপিআর, পুলিশ ও আনসার সদস্যগণ অপেক্ষা করে। ৭ই এপ্রিল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাক সেনারা ট্যাংক, কামান ও ভারী অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে নীলফামারী শহরের দিকে আসতে থাকে। পাক সেনারা আসার পথে শতশত বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়।

পাকসেনারা নীলফামারী শহরের দিকে আসতে থাকলে প্রতিরোধের বুহ্য ভেঙ্গে গেলে ইপিআর, পুলিশ ও আনসার সহ সাধারণ ছাত্র-জনতা সীমান্তের দিকে সরে যায়।পরবর্তী পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে স্বশস্ত্র ট্রেনিং নেওয়ার পর ৬নং সেক্টরের অধীন পাকসেনাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমন শুরু করে এবং পাক সেনাদের পরাস্ত করতে শুরু করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাক সেনারা পিছু হটতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ১২ ডিসেম্বর রাতে পাক-হানাদার বাহিনী নীলফামারী শহর ছেড়ে আশ্রয় নেয় সৈয়দপুর সেনানিবাসে এবং নীলফামারী শহর মুক্ত হয় । ১৩ই ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নীলফামারী শহরে আনন্দ মিছিল করে। এবং চৌরঙ্গী মোড়ে বাংলাদেশের স্বাধীন বাংলার মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করে। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে নীলফামারীর অনেকে শহীদ হয়েছেন। এ জেলায় রয়েছে ২৫টি বধ্যভূমি।সেদিন থেকে প্রতি বছর ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী পাক হানাদার-মুক্ত দিবস পালন করা হয়।