• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

নীলফামারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসাবে ঘোষণা পায় ৬ নম্বর সেক্টর। এই সেক্টরের উত্তরের জনপদের নীলফামারী আজ ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে নীলফামারীকে পাক হানাদারমুক্ত করেছিল। সেদিন সকালে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে উদিত হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা। সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে রাস্তায় নেমে আসেন মুক্তিকামী সকল শ্রেণি পেশার মানুষজন। বিজয়ের উল্লাস আর শ্লোগানে কম্পিত হতে থাকে আকাশ বাতাস।   

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নীলফামারী সদর ইউনিট কমান্ড এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। আজ শুক্রবার(১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন, সেখান থেকে একটি মুক্ত শোভাযাত্রা বের হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যালে পুস্পস্তবক অর্পণ ও চৌরঙ্গী মোড়ে স্বাধীনতা অম্লান স্মৃতি চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সকল কর্মসুচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হাফিজুর রহমান চৌধুরী। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এলিনা আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী টুলটুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গোলাম বিকরিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি হাফিজুর রশীদ, সদর উপজেলা আঃলীগের সভাপতি আবুজার রহমান, পৌর আঃলীগের সভাপতি মসফিকুর ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার প্রমুখ। জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।   

প্রসঙ্গগতঃ ১৯৭১ সালে ছয়টি থানা নিয়ে গঠিত নীলফামারী ছিল একটি মহকুমা। ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ১৭ মার্চ স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা মহকুমা অফিস চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫ মার্চের কালরাতের পর সংগ্রাম কমিটি ও ২৮ মার্চ জনসভা করার পর বেসরকারি হাইকমান্ড গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালনা করতে থাকে একের পর এক অভিযান। 

পাকি সেনা ও তাদের দোসরদের হাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথম শহীদ হন মাহাতাব বেগ। ২৪ মার্চ তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন। সেসময় তিনি পাকি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। ১২ এপ্রিল সৈয়দপুরের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ডাঃ জিকরুল হক সহ ১২জনকে পাকি সেনারা রংপুর সেনা নিবাসে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ২৯ এপ্রিল জলঢাকার কালিগঞ্জ গোলনায় পাকবাহিনী চালায় নৃশংস গণহত্যা। এদিন নিরাপদে চলে যাওয়ার পথে পাকি সেনারা  তিনশতাধীক নিরীহ মানুষকে কালিগঞ্জে জড়ো করে হত্যা করে। এরপর ১৩ জুন সৈয়দপুরে গোলাহাটে পাকি সেনারা ৪৪৮জন মারোয়ারী নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এর দুইদিন আগে সৈয়দপুর বাসবাড়িতে জয় বাংলা শ্লোগান ও নৌকার ছবি সহ পাউরুটি কারখানার মালিকের পরিবারের ১০সদস্যকে হত্যা করেছিল। সেই পরিবারের একজন সদস্য আব্দুর রশিদ ভাগ্যক্রমে বেঁচে রয়েছে। তিনি সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারেনি। এছাড়া নীলফামারী শহরে পাকিসেনারা হত্যা করে বজ্রনাথ ঘোষ (বোথা বাবু) ও তার দুই ছেলে স্বপন কুমার ঘোষ, তপন কুমার ঘোষ। আরো হত্যা করে হমিও চিকিৎসক ডাঃ বিষ্ণু, তার ভাই ব্যবসায়ী শম্ভু, এল,এম,এফ চিকিৎসক হেমন্ত, ব্যবসায়ী সালেহ উদ্দিন শাহ, ছাত্রলীগ সভাপতি মাহফুজার রহমান চৌধুরী দুলু। এরপর ডোমার ও ডিমলা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আসাদ সহ ৬জনকে হত্যা করে পাকিরা। ডোমারে মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল হক ধীরাজ ও মিজানুর রহমান মিজান হত্যার শিকার হয় পাকিদের হাতে। 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক জানান, ৬ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর ক্যাপ্টেন খাদেমুল বাশার। তার চৌকস নেতৃত্বে ছয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের আট জেলাকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম হানাদার মুক্ত করে মুক্তাঞ্চল ঘোষণ করতে সক্ষম হয়।

সুত্র মতে, ছয় নম্বরের কমান্ডার খাদেমুল বাশার ১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমার বাহিনীর প্রধান থাকাকালিন এক বিমান দূর্ঘটনায় নিহত হন। আমরা ছয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা আজও সেই বীর উত্তর খেতাম পাওয়া খাদেমুল বাশারকে ভুলতে পারিনা।

তিনি জানান, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নীলফামারীর চিলাহাটি স্থল বন্দরকে ৫ ডিসেম্বর, ডোমার উপজেলাকে ৬ ডিসেম্বর, ডিমলা উপজেলাকে ১১ ডিসেম্বর জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলাকে ১২ ডিসেম্বর ও নীলফামারী শহরকে ১৩ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত করি। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের অবাঙ্গালীদের কাছে মিনি পাকিস্তান হিসেবে খ্যাত সৈয়দপুর উপজেলাকে ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত করা হয়। সেদিন ভারতের মিত্র বাহিনীসহ মুক্তি বাহিনী ও স্থানীয়রা চারিদিক থেকে সৈয়দপুরে প্রবেশ করলে পাকি সেনারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।