• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

নীলফামারীর রামগঞ্জ ট্র্যাজেডির ৬ বছর আজ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯  

দুই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে আজও কেঁদে চলেছেন সন্তনহারা মা মেরিনা বেগম। তার দুই ছেলে সহ ৫জনকে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেখে যেতে চান। 

৬ বছর আগে ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই দিনে নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জে জামায়াত শিবির ও বিএনপির হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পরিদর্শনে যান নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। ওই বিকালে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে নুরের গাড়ী বহরে হামলা চালিয়েছিল জামায়াত শিবির ও বিএনপি। নুর প্রাণে বেঁচে গেলেও ওইদিন চার আওয়ামী লীগ নেতা ও এক পথচারী সহ ৫ জন নিহত হন। নিহতরা হলেন, টুপামারী ইউনিয়নের কৃষকলীগের সভাপতি খোরশেদ চৌধুরী, দুই ভাই ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ শাহ ও ছাত্রলীগ কর্মী মুরাদ শাহ ও আওয়ামী লীগ কর্মী লেবু মিয়া। এ সময় পথচারী বাঁশ বিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিকও রক্ষা পায়নি হামলাকারীদের হাত থেকে। 

সেই হৃদয় বিদারক ট্রাজেডির ৬ বছর পুর্তিতে আজ শনিবার(১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহতদের মাগফিরাত কামনা করে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।এসব কর্মসূচীতে অংশ নেবেন জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। 

এই মামলার ২০৬ জন আসামির মধ্যে আজও অধরা সাতজন। আবার দুজন বাদে অন্য আসামিরা আছে জামিনে। মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠনের অপেক্ষায় পড়ে আছে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ সময়েও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াত নেতা কাদের মোলার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এ রাতে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করেন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। ১৪ ডিসেম্বর সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা শহরে ফেরার পথে বিকেলে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন। হামলায় সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মীকে হত্যা করেন ধারালো অস্ত্রধারী জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, নৃশংস, আলোচিত ওই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার কোনো অগ্রগতি নেই ছয় বছরেও। আসামিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে দম্ভে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর সাত আসামি এখনো অধরা। 

মামলার বাদী নীলফামারী সদর থানার ওসি বাবুল আকতার বর্তমানে বদলি জনিত কারণে চট্টগ্রামে আছেন। মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ (প্রধান আসামি) ১৪ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করি। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১১ মার্চ ২০৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজার রহমান। মামলাটি নীলফামারী জজ আদালতে বিচারাধীন। এখনো সাক্ষ্য শুরু হয়নি।
নীলফামারী জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অক্ষয় কুমার রায় বলেন, মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ গঠনের অপেক্ষায় আছে। ওই আদালতে প্রায় দেড় বছর ধরে বিচারক না থাকায় মামলাটির অগ্রগতি হচ্ছে না। ২০৬ আসামির মধ্যে সাতজন এখনো পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন, দুজন মারা গেছেন। 

ফরহাদ শাহ ও  মুরাদ শাহ এর মা মেরিনা বেগম দুই ছেলেকে হারিয়ে আজও কেঁদে চলেছেন। তিনি হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চান।  

নিহত মুরাদ ও ফরহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ওই বাড়িতে চলছে মৃত্যুবার্ষিকীর প্রস্তুতি। এই দুই ভাইয়ের মা মেরিনা বেগম দুই ছেলের শোকে এখনও কাতর। দুই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে চলছে তার আহাজারী। 

টুপামারী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল দ্রুত সময়ে বিচার সম্পাদনের। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও সেটির উলেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা হতাশ। নারকীয় ওই হত্যা ও হামলার ঘটনায় জড়িতরা দম্ভে ঘুরে বেড়াচ্ছে চোখের সামনে।   

সেদিন নুরের ওপর হামলার নেপথ্যের কারণ হিসাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মমতাজুল হক মনে করেন নুর ভাই একজন বরেন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। দেশ বিদেশে তার প্রচুর খ্যাতি-সুনাম। মৌলবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসাবে আসাদুজ্জামান নুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। 
২০০১ সাল থেকে তিনি নীলফামারী সদর আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসাবে বিজয়ী হয়ে আসছেন। প্রতিটি নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দি ছিল জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। নুর অসহায় মানুষজনের বিপদে আপদে সহযোগীতার হাত অনেক লম্বা। প্রতিমাসে বিনা মুল্যে স্বাস্থ্য সেবার ক্যা¤প চালিয়ে আসছেন জেলা সদরের ১৫টি ইউনিয়নে। রাজধানীর নামীদামী চিকিৎসকরা আসাদুজ্জামান নুরের ডাকে সাড়া দিয়ে নীলফামারী এসে বিনামূল্যে এই  ক্যাম্প পরিচালনা করে দুস্থ্য অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র সহ বিনামুল্যে ঔষধ সরবরাহ করেন। এর পাশাপাশি যাদের থাকার ঘর নেই তাদের ঘর বানিয়ে দিচ্ছিন। অসংখ্য বেকার যুবক যুবতী প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে প্রদান করেছেন এবং করছেন রিক্সা,ভ্যান,হুইলচেয়ার । এ ছাড়া প্রতি বছর শীতবস্ত্র বিতরন অব্যাহত রেখেছেন। এমন একজন জনপ্রিয় ব্যাক্তি নুরকে পথের কাটা হিসাবে সরিয়ে দিতে এবং আসনটি দখলে নিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নীলফামারীর রামগঞ্জহাট এলাকায় তার গাড়ীর বহরে হামলা চালা বিএনপি ও জামায়াত শিবির নেতা কর্মীরা।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান বলেন, নুর ভাই আমাদের তথা নীলফামারী সহ গোটা দেশ এমন কি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিস্তৃত এক সু-নাম ধন্য ব্যাক্তি। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ওরা। তিনি বলেন এ ঘটনায় সারা দেশে ক্ষোভ,নিন্দা সহ প্রতিবাদের ঝড় উঠে দেশজুড়ে। চলছে দেশজুড়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ। আসাদুজ্জামান নুর কে পথের কাটা মনে করেই হত্যার উদ্যেশে এই হামলা চালানো হয়। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে প্রাণ হারায় নীলফামারীর চার আওয়ামী লীগ নেতা সহ ৫জন। 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, জেলা সদরের পলাশবাড়ী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, মালামাল লুট এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী জামায়াত-শিবির চক্র। এ কারণে নুর ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালায় চক্রটি।