• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ঘরের উঠানে মাছের চাষ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ঘরের উঠানে চারটা পানির ট্যাংক। প্রতিটা ট্যাংকের উচ্চতা চার ফুটের মতো। প্রথমবার দেখে যে কারো খটকা লাগতে পারে। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই ট্যাংকগুলো কিসের? কি জন্যইবা তৈরি করা হয়েছে? একটু কৌতূহল নিয়ে ট্যাংকের নিকট এগিয়ে গেলেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে। তাহলে কি পুকুর ছাড়াও মাছ চাষ করা সম্ভব? কিন্তু কিভাবে? মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন উঁকি দেওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই পদ্বতির নাম রি-সার্কুলেটিং একুয়া কালচার সিস্টেম। যাকে সংক্ষেপে রাস পদ্বতি বলা হয়।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের তরুণ উদ্দ্যোক্তা কামরুজ্জামান কনক নিজ জমিতে রাস পদ্বতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। পেশায় তিনি একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হলেও, নিজ উদ্দ্যমে কিছু করার প্রচেষ্টা স্বরূপ, মাস তিনেক আগে গড়ে তুলেছেন এই ফিশ ফার্ম। নাম দিয়েছেন জামান একুয়া ফিশ ফার্ম। যা এরই মধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অনেক উদ্দ্যোক্তাই তার এই ফার্ম দেখতে ছুটে আসেন।

প্রাথমিকভাবে তিনি চারটি ট্যাংকে মাছ চাষ শুরু করেছেন। ১০,০০০ লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিটা ট্যাংকে প্রায় আট হাজার পিস মাছ উৎপাদন করছেন। তার এসব ট্যাংকে তেলাপিয়া, শিং ও পাবদা মাছ চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্বতিতে বছরে তিন থেকে চারবার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। যার ফলে, অল্পসময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তার এই ফার্ম দেখভাল করার জন্য সার্বক্ষণিক একজন লোক নিয়োজিত আছেন।

রাস পদ্বতিতে মাছ চাষের সাথে পুকুরের মাছ চাষের বিস্তর পার্থক্য। কেউ যদি পুকুরে মাছ চাষের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই পদ্বতিতে মাছ চাষ করতে চান, তবে তাকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নয়তো অতিরিক্ত খাবার প্রদান ও অব্যবস্থাপনার জন্য মাছ মরে যেতে পারে। তবে সৈয়দপুরের তরুণ উদ্দ্যোক্তা কামরুজ্জামান কনক, এই ফার্ম বাস্তবায়নের জন্য কোনপ্রকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। নিজের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞদের পরামর্শেই তিনি এই ফার্ম দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছেন।

রাস পদ্বতির মূল উদ্দেশ্য হলো অল্প ঘনত্বে অধিক মাছ উৎপাদন করা। এই পদ্বতিতে একই পানি পুনরায় বিভিন্ন ফিল্টার ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়ে মাছের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। যার ফলে পানি অপচয়ের সুযোগ নেই। এছাড়াও মাছের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য অবশ্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের সুব্যবস্থা রাখা অত্যাবশ্যক। মূলত চীনে এই রাস পদ্বতির উদ্ভাবন হলেও বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্বতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেরও বিভিন্ন জেলায়, বেশ কিছু উদ্দ্যোক্তা রাস পদ্বতিতে মাছ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। সৈয়দপুরে তথা নীলফামারী জেলার মধ্যে কামরুজ্জামানই প্রথম উদ্দ্যোক্তা, যিনি এই অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল পদ্বতিতে মাছ চাষ করছেন।

রাস পদ্বতিতে মাছ চাষের কারণ জানতে চাইলে সৈয়দপুরের তরুণ উদ্দ্যোক্তা কামরুজ্জামান কনক জানান, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে ক্ষেতের জমি অনেক কমে আসছে। যদি আমরা অধিক হারে পুকুর কাটি তাহলে আমাদের জমি অনেক কমে যাবে। তাই এই রাস পদ্ধতি বেছে নেওয়া। এই পদ্ধতিতে পুকুরের চেয়ে ৩০ গুন বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। অন্যদিকে পুকুরে যেখানে দুই কেজি খাবারে মাত্র এক কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়, সেখানে রাস পদ্ধতিতে মাত্র এক কেজি খাবারে দেড় কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।’

জামান একুয়া ফিস ফার্মের এই কর্ণধার আরো জানান, ‘রাস পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দেশি শিং, দেশি-বিদেশি মাগুর, পাবদা, টেংরা, তেলাপিয়া, চিংড়ি সহ নানান প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। তবে এই পদ্বতিতে প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ একটু বেশি। কিন্তু পরবর্তী ব্যবস্থাপনা ব্যয় সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী। সুদূরপ্রসারী চিন্তা করলে যা অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।’