• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

পঞ্চগড়ে পাথর শ্রমিকদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশের সংঘর্ষ: নিহত ১

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২০  

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  এ ঘটনায় এক পাথর শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ ও র‌্যাবের ১১ সদস্যসহ কমপক্ষে ৩০ জন । আহতরা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জুমারউদ্দিনের (৫৫) বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের গনাগছ গ্রামে। তিনি দেবারুর ছেলে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. সিরাজউদ্দোলা পলিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার শরীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তবে কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না।

মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে ভজনপুর বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে রাখে স্থানীয় জনতা। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরোধের পর দুপুর আড়াইটার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, মূলত বোমা মেশিন চক্রের সদস্য ও সুবিধাভোগীরা শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। তারা লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলা করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এমনকি আহত পুলিশদের হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। তারা পুলিশের বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করে। এতে পুলিশ ও র‌্যাবের ১১ জন সদস্য আহত হন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

আহতরা হলো- নীলফামারী র‌্যাব-১৩ এর ডিএডি আবু বক্কর, র‌্যাবব সদস্য ফেরদৌস রনি ও সাইদুল ইসলাম, পুলিশের নায়েক মেহেদী হাসান (২৬), কনস্টেবল জয়ন্ত কুমার (২১) ও ইমতিয়াজ (২১), তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মূর্খাগছ এলাকার অটোভ্যান চালক মোনাজুল (৩০), নিজবাড়ি এলাকার মাহবুব (৩০), কাউরগছ এলাকার নাজমুল হক (৪০), তেঁতুলিয়ার সিপাই পাড়া এলাকার জুমের আলী (২৫), আজিবউদ্দিন (৩৫), শহিদুল (৪০) ও ভোম্বল (৪৫) ও করিমুল (৫২)। গুরুতর আহত  আজিবউদ্দিন (৩৫), শহিদুল (৪০), ভোম্বল (৪৫) ও করিমুলকে (৫২) রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

 পুলিশ, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন হয়ে আসছিল। এর ফলে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী যোগদানের পর থেকে সব ধরনের পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেন। প্রায় ৫ মাস ধরে এই পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। শনিবার রাতে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় তেঁতুলিয়ার ভজনপুর এলাকার পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবিতে সংশ্লিষ্ট দুয়েকটি সংগঠন ও ড্রেজার মালিকদের উস্কানিতে রবিবার সকাল থেকে ভজনপুর বাজারে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক। এ সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে ওই এলাকায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়। পাথর শ্রমিকরা সকাল ১০টায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের ভজনপুরে সড়ক অবরোধ করে। তারা লাঠিসোটা নিয়ে পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় পুলিশ অবরোধকারীদের বাধা দিলে পাথর শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পাথর শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোকছেদ আলী বলেন, ‘রাবার বুলেট নিক্ষেপের কথা শুনেছি।’