• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

পর্দা ইসলামের ফরজ বিধান

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

পর্দা ইসলামের অন্যতম একটি বিধান। পর্দা পালনে নারী-পুরুষ উভয়েরই রয়েছে বিরাট সফলতা। পর্দা পালনের অনীহায় রয়েছে অসংখ্য ক্ষতি। আজকের সমাজে তা বিশ্লেষণ করে বোঝানোর প্রয়োজনে আছে বলে মনে করি না।

বর্তমান সমাজে দেখা যায়, অনেকে পর্দাকে প্রথা বলে। প্রথা হিসেবে চালিয়ে দেয়। কথায় কথায় বলে পর্দাপ্রথা নানী-দাদীদের যুগের বিষয়। বর্তমানে পর্দা নিষ্প্রয়োজন। তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, পর্দাপ্রথা নয়; সুস্পষ্ট বিধান। শরিয়তের বিধান। অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত ফরজ বিধান। নামাজ-রোজার মতো ফরজ বিধান। নামাজ-রোজাকে যেমন প্রথা বলা যাবে না, তেমনি পর্দাকেও প্রথা বলা যাবে না। 
প্রথা আর বিধানের মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রথা বলা হয় কোনো মানুষ বা কোনো সম্প্রদায় যা চালু করে, প্রচার করে, নীতি হিসেবে নির্ধারণ করে; যুগ-সমাজ যেটার প্রচলন ঘটায়। আর বিধান হলো ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ, যা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। কোনো বিধানকে প্রথা বললে সেটি হালকা ও গুরুত্বহীন মনে হয়। সুতরাং কোনোভাবে কোনো অবস্থাতেই বিধানকে প্রথা বলা যাবে না। 

পর্দা পালন আর না পালন নিজস্ব বিষয়। তবে অবজ্ঞা করে পর্দাকে প্রথা বলা মানানসই নয়, এটা নেহায়েত ভুল; মারাত্মক অন্যায়। বিধান রচনা বা তৈরির ক্ষমতা বান্দার নেই। করলেও তা কোনো না কোনো সময় প্রশ্নের সম্মুখীন বা অকেজো হয়ে পড়বে। বিধান রচনায় অনাগত ভবিষ্যতের বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়। আর বান্দার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইলম নেই। পক্ষান্তরে আল্লাহর ভবিষ্যতের ইলম আছে তিনি আলিমুল গায়েব। সুতরাং বিধান রচনার একচ্ছত্র অধিকার একমাত্র আল্লাহর। এ রকম আরো বহু দিক রয়েছে।

আমরা এখানে কোরআন ও হাদিস থেকে পর্দার গুরুত্ব ও বিধান হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরছি। আশা করি, সবাই পর্দা বিধান হওয়া ও তার গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন।

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বলেন- হে নবী! আপনি ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে, তাদের লজ্জাস্থানের সঠিক হেফাজত করে। সাধারণ প্রকাশমান ছাড়া তাদের রূপ-লাবণ্য আকর্ষণ প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের রূপ-লাবণ্য স্বীয় স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, নিজের দাসী, যৌনলুপ্ত পুরুষ এবং নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অনবগত বালক ছাড়া প্রকাশ না করে।

আল্লাহ অন্যত্রে বলেন-
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

অর্থাৎ বৃদ্ধ নারী যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের জন্য এটা অপরাধ নয় যে, তারা তাদের রূপ-লাবণ্য প্রকাশ না করে কাপড় খোলা রাখে। তবে এর থেকে বিরত থাকাই উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাত।

পর্দার ব্যাপারে সূরা আহযাবের ঘোষণা শুনুন-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا

অর্থাৎ, হে নবী! তোমার স্ত্রী, কন্যাদের ও মুসলিম রমণীদের বলো, তারা যেন তাদের জলবাব (চাদর বা ওড়না) কিয়দংশ নিজের ওপর টেনে দেয়। এতে করে এদের চেনা সহজতর হবে (এরা ভদ্র)। ফলে তাদের কেউ জ্বালাতন করবে না, ইভটিজিংয়ের শিকার হবে না।

শুধু নারীদেরকে লক্ষ করে আল্লাহ বলেন-
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

অর্থাৎ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করো। জাহেলি যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।

হাদিসে রাসূলেও পর্দা বিধান হওয়ার ব্যাপারে বহু হাদিস রয়েছে।

হজরত উমর (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আপনি আপনার স্ত্রীদের পর্দার কথা বলুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, তখন আল্লাহ পাক পর্দার আয়াত নাজিল করেন। (বুখারি, মুসলিম)

عن عبد الله : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال المرأة عورة فإذا خرجت استشرفها الشيطان

অর্থাৎ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী হলো পর্দানশীল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে। আর কোনো নারী যেন কোনো মাহরাম ছাড়া একাকী ভ্রমণ না করে। এ কথা শুনে এক সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। এ দিক দিয়ে আমার স্ত্রী হজের সফরে বের হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, যাও হজে তোমার স্ত্রীর সঙ্গে থাক।

উল্লিখিত কোরআন-হাদিসের আলোকে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পর্দা ইসলামের শাশ্বত বিধান, অকাট্য ও ফরজ বিধান, তাই কোনোভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। সহজ করে দেখারও কোনো বিষয় নয়। ‘প্রথা’ বলে খাটো করার সুযোগ নেই। তাই সবার উচিত পর্দাকে পর্দা হিসেবেই দেখা এবং বিধানরূপে রাখা।