• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

পুলিশ ফাঁড়িতে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় ফাঁড়ি ইনচার্জসহ ৬ পুলিশ ক্লোজ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৯  

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির হাজতে সামছুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি আটককৃত ব্যক্তি একজন মাদক ব্যবসায়ী। সে লজ্জায় পড়নের কাপড় গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃতের পরিবারের দাবি পুলিশ উৎকোচ না পেয়ে তাকে নির্যাতন চালিয়ে ফাঁড়ি হাজতে হত্যা করেছে। সে মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে।

মৃত্যুর ঘটনা গতকাল বুধবার সকালে এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে হাজারও নারী-পুরুষ দোষী পুলিশের শাস্তির দাবিতে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে ভেন্ডাবাড়ী-বড়দরগাহ সড়কটি উত্তেজিত জনতা অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন দোষী পুলিশদের বিচারের আশ্বাস দিলেও অনড় অবস্থায় থাকে জনতা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢিল ছুঁড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জনতাও ঢিল ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দেয়। পাল্টা-পাল্টি আক্রমনে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) হাফিজুর রহমানসহ ১২ পুলিশ ও পথচারী ভিক্ষুক আব্দুল কাদের, বড়দরগাহ্ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক, কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব আলীসহ অর্ধশতাধিক জনতা আহত হয়। এক পর্যায়ে অবস্থানরত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৩০/৩৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছে।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পীরগঞ্জের বড়দরগাহ্ নামক স্থান হতে মাদক ব্যবসার অভিযোগে সামছুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে আসে। পরদিন সকালে সামছুল ইসলামের লোকজন ভেন্ডাবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রে আসে। এসে জানতে পারে পুলিশ জানায়, সামছুল ইসলাম গভীর রাতে নিজের পরণের শাট গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এদিকে নিহতের স্ত্রী মমেনা বেগম, কন্যা সান্তনা ও বোন ফাতেমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান , সে মাদকাসক্ত নয় এবং মাদক ব্যবসার প্রশ্নই আসেনা। সে একজন পশু ব্যবসায়ী। রাত ১১টায় শেষ সাক্ষাতের সময় আমাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবী করে ফাঁড়ি ইনচার্জ। দাবীকৃত টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার বলেন, পুলিশ হেফাজতে মৃত ব্যক্তির এলাকায় মাদক সংশ্লিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। সে ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত অনেকেই বলেন, পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম পীরগঞ্জের ওসি সরেস চন্দ্রের মদদে দীর্ঘদিন যাবত ভেন্ডাবাড়ী ফাঁড়িতে আটক বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। শুধু অভিযোগের নামে বিভিন্ন মানুষকে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করলেও হাজতে লজ্জায় আসামীর আত্মহত্যার কথা জানান।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আক্রমণ করলে পুলিশ শর্টগান দিয়ে আনুমানিক ৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ঘটনা পর পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিএমএ মমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল ইসলাম পিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামিম দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেস্টা করে।

এদিকে বিকেলে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার ঘটনাস্থলে এসে প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যর তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে, আগামী ৩ দিনের মধ্য তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে।

ইতোমধ্যে ফাঁড়ি ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম, এসআই তাজউদ্দিন, পিএসআই মাহি আলম, এএসআই হরিকান্ত, কনস্টোবল আরিফুল ও ভুপেনসহ ৬জনকে ক্লোজ করা হয়েছে এবং গঙ্গাচড়া থানার ইনস্পেক্টর তদন্ত সুশান্ত সরকারকে সাময়িকভাবে ভেন্ডাবাড়ি ফাঁড়ি ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চোলাই মদ ব্যবসার মামলা হয়েছে এবং ইউডি মামলা করে লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।