• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

প্রশাসনকে পরোয়া করছে না ফরেভার লিভিং প্রোডাক্টস

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

রাজধানীর কাওরান বাজারের ইটিভির গলিতে ঢুকলেই চোখে পড়ে ফরেভার লিভিং প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ৪০ থেকে ৫০ জন ডিস্ট্রিবিউটর। তারা তাদের পণ্যের গুনাগুন সম্পর্কে বলছেন ক্রেতাদের সঙ্গে। তাদের বেশিরভাগেরই হাতে কোম্পানির লোগোসহ নন ওভেন টিস্যু ব্যাগ ভর্তি পণ্য। পণ্যগুলো বিক্রি করছে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের (বহুস্তর বিপনন) মাধ্যমে। ডাইরেক্ট সেলিং বা সরাসরি কেনার সুযোগ নেই। কিডনী, চর্ম থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের বিবিধ যৌনরোগ সারিয়ে তুলছেন এসব ডিস্ট্রিবিউটররা। কোন পণ্য ত্বকে মাখলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এসবের চিকিৎসাও দিয়ে ফেলেন নিমিষেই। সেই সঙ্গে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি করলে খুব দ্রুতই ধনী হতে পারবে-এমন আশ্বাসও দেন ফরেভারের কর্মীরা।

প্রশ্ন করলে তাদের উত্তর। কে বলছে এমএলএম অবৈধ? আমাদের হাইকোর্টের অনুমতি আছে। তাই এই পণ্য বিক্রি করা আমাদের নিষেধ নেই।

একই চিত্র জাহাঙ্গীর টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ফরেভারের প্রধান কার্যালয়ে। বেশ সুসজ্জিত ও পরিপাটি। সেখানে চলছে ফরেভার লিভিং প্রোডাক্টস বাংলাদেশ কোম্পানির পণ্যের গুনাগুন ও তাদের বিভিন্ন প্যাকেজের ট্রেনিং। সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন পণ্য। অনেকেই নতুন আসা লোকজনকে এমএলএম বোঝাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের সমাগম এখানে। প্রশিক্ষক আর ডিস্ট্রিবিউটরদের চটকদার কথায় অত্যন্ত চড়া দামের পণ্য কিনে সদস্য হচ্ছেন তারা।

যারা এ কোম্পানির ফুড সাপ্লিমেন্ট (সম্পূরক খাদ্য) অথবা হার্বাল পণ্যের মাধ্যমে মানবদেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করছে তাদের একজনেরও পুষ্টি বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর পেশাগত ডিগ্রি নেই। নেই কোনো অভিজ্ঞতা। এর ফলে প্রতারিত হচ্ছে মানুষ।

এদিকে, পানীয়,পুষ্টি, মধু পণ্য, ব্যক্তিগত পরিচর্যা, ত্বক পরিচর্যা (ত্বক ও শরীর) ও সোনিয়া ক্যাটাগরিতে বিক্রি করা বেশির ভাগ পণ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। যেমন তাদের বিক্রি করা ফরেভার ব্রাইট টুথজেল। বিএসটিআই সূত্রে জানা যায়, এই টুথজেলের কোনো অনুমতি নেই। তবে কোম্পানিটি দেদারছে বিএসটিআইয়ের সিল ব্যবহার করছে টুথজেলের টিউবের গায়ে।

 

1.প্রশাসনকে পরোয়া করছে না ফরেভার

অন্যদিকে, এ কোম্পানির বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। অনেক পণ্যের উৎপাদনের তারিখও উল্লেখ নেই।

 

2.প্রশাসনকে পরোয়া করছে না ফরেভার

প্রসঙ্গত, যুবক, ডেসটিনি-২০০০ কেলেঙ্কারির পর এমএলএম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকারের তৎপরতা শুরু হয়। ২০১২ সালে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের অনিয়ম-দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর সরকার ২০১৩ সালের অক্টোবরে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের অধীনে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে করা হয় বিধিমালা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট এমএলএম ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুনরায় এক নির্দেশনা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (স্মারক নম্বর-বাম/টি,ও-১/MLM/২০১০(অংশ)/৩৮৩)।

3.প্রশাসনকে পরোয়া করছে না ফরেভার

এর আগে সংসদে এবং সংসদের বাইরেও বেশ কয়েকদফা এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধের কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

আইন আমাদের সুযোগ দিচ্ছে: এ বিষয়ে ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয় ফরেভার লিভিং প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজার অপারেশন মো.নাজমুস সাদাতের। তিনি বলেন, আমরা এমএলএম পদ্ধতিতেই এ দেশে ব্যবসা করছি। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। আইনের ফাঁক-ফোকরকে কাজে লাগিয়েই ব্যবসা করছেন? -এমন প্রশ্নের জবাবে সাদাত বলেন ‘বিষয়টা এমন নয়, আইনই আমাদের এ সুযোগ করে দিয়েছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে, এখন কিভাবে ফরেভার ব্যবসা করছে? তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরা শিগগিরই শুনানির জন্য চেষ্টা করবো।

প্রশিক্ষকদের যে স্বাস্থ্য বা পুষ্টি বিজ্ঞান বিষয়ে পেশাগত ডিগ্রি নেই সে বিষয়টিও স্বীকার করেন নাজমুস সাদাত। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, ফরেভারের সাবেক কান্ট্রি সেলস ম্যানেজার এম বদরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে তো এমএলএম নিষিদ্ধ। ফরেভার কোম্পানি লিখিত দিতে পারবে না, যে তাদের ব্যবসা করার অনুমতি রয়েছে- যোগ করেন বদরুল। তাহলে আপনার সময়ে কিভাবে ব্যবসা করেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চুক্তিভিত্তিক পণ্য বিক্রয়ের কাজ করেছি, পার্মানেন্ট স্টাফ না।