• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

প্রিয়নবী (সা.) এর ‘মোহরে নবুয়ত’

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮  

সব মানুষের মাঝেই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানার প্রবল আগ্রহ সদা বিরাজমান।

সে কারণেই প্রিয়নবীর দৈহিক গঠনের বর্ণনার পর আজ তুলে ধরা হলো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র ‘মোহরে নবুয়ত তথা নবুয়তের সীলমোহর’-এর বর্ণনা।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব মানবতার জন্য ন্যায় ও আদর্শের স্বীকৃত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সব মানুষের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। হাজারো ছন্দ-কবিতায় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাঁর আশেকরা।

প্রিয়নবীর মোহরে নবুয়ত কী? কোথায় ছিল তা? দেখতেই বা তা কেমন ছিল? সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যারা সেটি দেখেছে, তাদের বর্ণনায় তুলে ধরা হলো সে বর্ণনা-

মোহরে নবুয়ত:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি গোশতের টুকরা। এটি হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তের নিদর্শন। আর প্রিয়নবী (সা.) এর পবিত্র শরীরে এ নিদর্শন বা চিহ্ন থাকার কথা পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থেই বর্ণনা করা হয়েছিল।

> হজরত সায়িব ইবনে ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন। এরপর তিনি (বর্ণনাকারীর খালা) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের (সুস্থতার) জন্য দোয়া করলেন।

অতঃপর তিনি ওজু করলেন। আমি তাঁর ওজুর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দু’কাঁধের মধ্যস্থ ‘মোহরে নবুয়ত’-এর দিকে আমার দৃষ্টি পড়ে যায়। যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, শামায়েলে তিরমিজি)

> হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুয়ত দেখেছি। আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে হিব্বান, মিশকাত)

> হজরত আবু যায়েদ আমর বিন আখতাব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু যায়েদ! আমার কছে এসো এবং আমার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাও। তখন আমি তাঁর পিঠে হাত বুলাতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমার আঙ্গুলগুলো মোহরে নবুওয়াতের ওপর লেগে গেল। বর্ণনাকারী আমর বিন আখতাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, ‘খাতাম’ (মোহরে নবুওয়াত) কী জিনিস? তিনি বললেন, এক গুচ্ছ কেশ।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেম, শামায়েলে তিরমিজি)

সাহাবাগণ কি মোহরে নবুয়ত স্পর্শ বা চুম্বন করতে পারনে?

> দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবি হজরত রুমায়সা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর ওফাতের দিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তার মৃত্যুতে রহমান (আল্লাহ তা’আলা) এর আরশ কেঁপে উঠেছিল। রুমায়সা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ উক্তি করেন তখন আমি তাঁর এত কাছে ছিলাম যে, ইচ্ছে করলে তাঁর মোহরে নবুওয়াত চুম্বন করতে পারতাম।’ (মুসনাদে আহমাদ, শামায়েলে তিরমিজি)

মোহরে নবুয়ত দেখেই ঈমান এনেছিলেন হজরত সালমান ফারসি:

> হজরত আবু বুরায়দা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি পাত্রে কিছু কাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে রাখলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সাদাকা?) তিনি বললেন, এগুলো আপনার ও আপনার সাথীদের জন্য সাদাকা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এগুলো তুলে নাও। আমরা সাদাকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন।

পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করলেন।

তখন তিনি বললেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা হাত প্রসারিত কর (হাদিয়া গ্রহণ কর)।

অতঃপর সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলেন; অতঃপর ঈমান আনলেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, শামায়েলে তিরমিজি, মুসনাদে বাযযার)

তিলকে পরিবেষ্টিত ছিল মোহরে নবুয়ত:

> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সারজিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর সাহাবিগণের মাঝে ঘুরছিলেন। এক পর্যায়ে আমি তাঁর পিছু ধরলাম। তিনি আমার মনোবাঞ্ছনা বুঝতে পেরে পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেন। তখন আমি তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পাই। আর তা ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায় এবং এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক শোভা পাচ্ছিল।

অতঃপর আমি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।

তখন তিনি বললেন, তোমাকেও ক্ষমা করুন। তারপর লোকে আমাকে বলতে লাগল, তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার মাগফিরাত কামনা করেছেন।

তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি তোমাদের জন্যও দু’আ করেছেন। এরপর তিনি এ আয়াত (সূরা মুহাম্মদ-এর ১৯নং আয়াত) তিলাওয়াত করেন-

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ

(হে রাসূল!) আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।’ (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, মারেফাতুস সাহাবা, শামায়েলে তিরমিজি)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহরে নবুয়ত ছিল আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত নবুয়তের সীলমোহর। যা তিনি প্রিয়নবীকে নবুয়তের নিদর্শন স্বরূপ দান করেছিলেন। যা ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত। সাহাবায়ে কেরামও তা বর্ণনা করেন এবং পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবেও তা বর্ণনা করা হয়েছিল।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোহরে নবুয়তের বর্ণনায় রাসূলের প্রেমে আত্মহারা পাগলপারা আশেকরা হৃদয় দিয়ে প্রিয়নবীর মোহরে নবুয়তকে উপলব্দি করবে। স্বপ্নযোগে প্রিয়নবীর মোহরে নবুয়ত স্পর্শ বা চুম্বন করতে চাইবে। যে চুম্বন বা স্পর্শে তৃপ্ত হবে আশেকে রাসূলদের হৃদয় ও মন। সুনিশ্চিত হবে জান্নাতের ঠিকানা।

মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদিকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর একান্ত সান্নিধ্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। পরকালে প্রিয়নবীর সুপারিশ লাভের মাধ্যমে চিরস্থায়ী সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আল্রাহুম্মা আমিন।