• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

ফেসবুকের কল্যাণে অসুস্থ মাকে ফিরে পেল মেয়ে

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০১৯  

ফেসবুকে পোস্ট করা মায়ের ছবি দেখে হাসপাতালে ছুটে যান মেয়ে। মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। 

নদিয়ার কৃষ্ণনগরের এই ঘটনা শুনে সবাই ফেসবুকের উপকারিতার কথা আবারো একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন।

নদিয়ার কোতোয়ালি থানা এলাকার জাভার বাসিন্দা গীতা বিশ্বাস নামে ওই বৃদ্ধার বয়স ৭০ পেরিয়ে। বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি পথেঘাটে ঘুরে বেড়ান। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনও। কেউ খাবার দিলে খান, নইলে সারাদিন না খেয়েই কেটে যায়। অভিযোগ, ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি নাতনিরা জোট বেঁধে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আর তাতেই তার এমন অবস্থা। 

প্রতিবেশীরা বলছেন, একসময় গীতাদেবীর ছিল সুখের সংসার। স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সুখেই দিন কাটত। কিন্তু স্বামীর মৃ্ত্যুর পর তার জীবনে নেমে আসে কঠিন সময়। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর তৈরি করা ভিটে ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন। 

তাদের সঙ্গেই জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেয়ার ভাবনা ছিল গীতা দেবীর। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! বৃদ্ধা মা ছেলের কাছে বোধহয় একটু বোঝাই হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয় তাকে। এমন আঘাতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তাঘাটে ঘুরতে থাকেন গীতাদেবী। কেউ খাবার দিলে খান, নচেৎ অভুক্তই থাকেন দিনভর। ছেলে মায়ের কোনো খোঁজই নেন না বলে অভিযোগ। 

শনিবার রাতে কৃষ্ণনগর স্টেশন অ্যাপ্রোচ রোডের ধারে এমন উদভ্রান্ত-আলুথালু বেশেই পড়েছিলেন গীতাদেবী। শরীরে কোনো চলন ক্ষমতাই ছিল না। সেসময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ার যুবক সূর্য। পেশায় আইনজীবী সূর্যের সঙ্গে ছিলেন আরো দুজন। তাদের সবার নজর পড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধার ওপর। তারাই গীতাকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। 

সূর্য জানিয়েছেন, চেম্বার শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তার ধারে ওনাকে পড়ে থাকতে দেখি। এগিয়ে যাই, ডাকাডাকি করি। কিন্তু তার চোখেমুখে ছিল একরাশ আতঙ্কের ছাপ। এরপর পানি ও কিছু শুকনো খাবার দেয়ার পর কিছুটা সম্বিৎ ফেরে তার। তড়িঘড়ি খবর দেয়া হয় কোতোয়ালি থানার পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সহায়তায় শক্তিনগর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।

গোটা বিষয়টি ভিডিও করে রেখেছিলেন সূর্য। সেই ভিডিও সমেত পুরো ঘটনার বিবরণ লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। পরেরদিন সকালে তার বন্ধু জানান, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তার উদ্যোগ সার্থক। পোস্টের জবাব মিলেছে। 

গীতাদেবীর এক মেয়ে চায়না মণ্ডল পোস্টটি দেখে নিজের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান হাসপাতালে, মায়ের কাছে। 

চায়নার ছেলে জয়ন্তর কথায়, তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। মামা নানিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। বেশ কিছুদিন ধরে নানির কোনো খোঁজও পাইনি। ফেসবুকে নানির কথা জানতে পারি। জানার পরই শক্তিনগর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। 

হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়ার পর নানিকে আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। নানিকে ফেরত পেয়ে খুশি হয়েছেন আমার মা। আমরাও খুশি। 

ভবঘুরের জীবন থেকে বেরিয়ে বৃদ্ধা গীতাদেবী এবার মেয়ের কাছে শান্তিতে দিন কাটাবেন। তার এই পরিণতিতে খুশি সূর্যও। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফেসবুককে, এভাবে প্রিয়জনদের মিলিয়ে দেয়ার জন্য।