• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

বাজে ছবি ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’, বললেন হলের দর্শকরা!

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮  

আমির খান-অমিতাভ বচ্চন অভিনীত সিনেমা ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’। দিওয়ালি উপলক্ষ্যে মুক্তি পেয়ে এই ছবিটি এখন বেশ সমালোচনায় এসেছে। তার একটি কারণ হল, আমির খান এবং অমিতাভ বচ্চনের মতো তারকা এই সিনেমাতে অভিনয় করেছেন, তাও এই সিনেমা কী করে এত নিকৃষ্ট হতে পারে, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না তারা।

এরই মধ্যে রাজীব মাসান্দ থেকে শুরু করে তরণ আদর্শ, সবাই নিজেদের হতাশা ব্যাক্ত করেছেন ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’ নিয়ে। তারা কিন্তু ভদ্র ভাষায় সমালোচনা করছেন, কিন্ত যারা গাঁটের টাকা আর হাতের সময় খরচ করে সিনেমাটা দেখেছেন, সেই দর্শকেরা হল থেকে বেরুনোর পরে মোটামুটি গালাগাল দিয়েই ধুয়ে দিচ্ছেন সিনেমাটাকে!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অজস্র ট্রোলের শিকার হচ্ছে থাগস অফ হিন্দুস্তান, সিনেমার আয়েও প্রভাব পড়েছে ছবিটির।

কথিত আছে, সম্রাট শাহজাহানের অমর এক সৃষ্টি হিসেবে ধরা হয় তাজমহলকে। সেই তাজমহল বানানোর পরে শাহজাহান নাকি মূল কারিগরের হাত কেটে ফেলার আদেশ দিয়েছিলেন, যাতে তাজমহলের মতো সুন্দর নিদর্শন আর কেউ বানাতে না পারে!

‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’ দেখে কামাল আর খানও দাবী করেছেন, এরকম একটা ফালতু সিনেমা বানানোর জন্যে পরিচালক বিজয়কৃষ্ণ আচার্য্যের হাত দুটো কেটে ফেলে দেয়া হোক! বলে রাখা ভালো, থাগস অফ হিন্দুস্তানের কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং সংলাপ, সবকিছুই লিখেছেন বিজয়কৃষ্ণ।

নিজের ফেসবুক এবং টুইটার একাউন্টে পোস্ট দিয়ে থাগস অফ হিন্দুস্তানের ব্যাপারে তরণ আদর্শ লিখেছেন, ‘ডিজাপয়েন্টিং!’ রাজীব মাসান্দ এটাকে বলেছেন

লজিকলেস সিনেমা, সত্তর-আশির দশকে হলে এরকম কিছু মেনে নেয়া যেতো, এই ২০১৮ সালে সিনেমা হলে বসে এই অত্যাচার সহ্য করার মতো নয়।

অ্যাকশন সিনে ফাতিমা সানা শেখের প্রশংসা করেছেন রাজীব মাসান্দ, সঙ্গে এটাও বলেছেন, ইমোশনাল দৃশ্যগুলোতে তার অভিনয় ছিল পীড়াদায়ক। পুরো সিনেমায় মাত্র তিনটি দৃশ্যে অভিনয়ের জন্যে আসা ক্যাটরিনার নর্তকীর চরিত্রটাকে এক্সটেন্ডেড ক্যামিওর বেশি কিছু ভাবতে রাজী নন রাজীব মাসান্দ।

একটা জায়গায় সমালোচকেরা প্রায় সবাই একমত, এই বাজেটে, এমন তারকাদের নিয়ে অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু পরিচালক সেসবের কিছুই করতে পারেননি, করার চেষ্টাটাও দেখা যায়নি তার মধ্যে।

অমিতাভ আর আমিরের কেমিস্ট্রিকে দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তোলা যেতো সিনেমায়, গল্পের গাঁথুনীটা শক্ত করে চরিত্রগুলোকে দারুণভাবে সাজানো যেতো। অথচ ফিরিঙ্গি মাল্লার ছাড়া বাকী চরিত্রগুলোর দিকে পরিচালক সেভাবে দৃষ্টিই দেননি। সিনেমার প্রথম এক ঘন্টায় অমিতাভের গলায় তেমন কোন সংলাপই নেই!

ভিএফএক্স নিয়েও হতাশ তারা, গ্রাফিক্সের কাজগুলো অনেক বেশি কার্টুনিশ লেগেছে সবার কাছেই। আর ইংরেজ সেনাপতিদের মুখে একটানা হিন্দি ডায়লগ শোনার ব্যাপারটাও মেনে নেয়ার মতো নয় মোটেও।

‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’র চিত্রনাট্য নাকি লেখা হয়েছে ‘কনফেশন অফ এ থাগ’ বই অবলম্বনে, বইয়ের সঙ্গে চিত্রনাট্যের দূর দূরান্তের কোনো সম্পর্কও পাওয়া যায়নি। এখানে বরং আড়াইশো কোটি রূপি বাজেট দিয়ে দুই চামচ স্টারডমের সঙ্গে বেখাপ্পা একটা গল্প আর এক চিমটি দেশপ্রেম মিশিয়ে দর্শককে জোর করে গেলানোর একটা চেষ্টা করা হয়েছে।

রাজীব মাসান্দ তো বলেই দিয়েছেন, থাগসের এত দামী দামী জাহাজগুলো যাত্রা শুরু করার আগেই আইসবার্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে গেছে!

সমালোচকদের কথা না হয় নাই বলি, তারা সিনেমার ভুল-ত্রুটি খোঁজার কাজেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। যাদের জন্যে সিনেমাটা বানানো, সেই দর্শকেরা কি বলছেন ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’ নিয়ে?

বিনোদনের আশায় যারা সিনেমা হলে যান, তারা কতটুকু বিনোদন পেলেন? বেশিরভাগ দর্শকের একটাই কথা, এরকম জঘন্য সিনেমা তারা জীবনেও দেখেননি! এর আগে এই সিনেমার তুলনা করা হয়েছিল ‘বাহুবলী’র সঙ্গে, সেটা শুনে হল থেকে বেরিয়ে আসা এক দর্শক তো হেসেই গড়িয়ে পড়লেন।

থাগসে অভিনয় করাটাকে আমিরের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত বলেও দাবী করছেন তিনি! সিনেমাটি মুক্তির আগে ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’র সঙ্গে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’-এর তুলনা ওঠা নিয়ে আমির খান বলেছিলেন, থাগস দেখার পরে দর্শক জ্যাক স্প্যারো(জনি ডেপ অভিনীত চরিত্র) কে ভুলে যাবেন।

বাস্তবতা হচ্ছে, দর্শক এখন ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’ আর আমিরের ফিরিঙ্গি মাল্লার চরিত্রটাকেই মনে রাখতে চাইছেন না। অনেকে তো ফিরিঙ্গি মাল্লারকে ঠাট্টা করছেন, গরীবের জ্যাক স্প্যারো বলে! কেউ বলছেন, অর্জুন কাপুরের সিনেমাও নাকি এত বোরিং হয় না!

বলিউডে এ বছরের সবচেয়ে বাজে সিনেমার তালিকায় সবার ওপরে নাম ছিল ‘রেস-থ্রি’ এবং ‘নমস্তে ইংল্যান্ডের’, এই দুই সিনেমার সঙ্গে শীর্ষস্থান দখল নিয়ে এখন থাগসের তীব্র লড়াই হবে বলেই ঠাট্টা করে বলছেন অনেকে।

তবে এতসব নেগেটিভ রিভিউ এবং সমালোচনার পরেও প্রথম দিনে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’, ভেঙে দিয়েছে হিন্দি সিনেমার প্রথম দিনে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড। সব কিছু মিলিয়ে (হিন্দি+তামিল+তেলুগু) সিনেমাটা প্রথম দিনে ভারত থেকে আয় করেছে ৫২ কোটি রূপিরও বেশি। আর এই রেকর্ডটা হয়েছে মূলত লোকজন আগে থেকে অগ্রিম টিকেট কেটে রাখার কারণে।

তবে ওয়ার্ড অফ মাউথ খারাপ হবার কারণে দ্বিতীয় দিনেই সেই অঙ্কটা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কমে। লোকজন তো বলাবলি করছে, ঘরে বসে স্টার গোল্ডে বিশ বছর আগের ‘ইশক’ দেখো, তবুও টাকা খরচ করে ‘থাগস অফ হিন্দুস্তান’ দেখতে যেও না!