• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বাজেট বাস্তবায়নে এবারও ব্যর্থ হব না- প্রধানমন্ত্রী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০  

প্রস্তাবিত বাজেটকে কেউ কেউ উচ্চাভিলাষী বললেও অতীতের মতো এই বাজেট বাস্তবায়নেও সফল হবেন বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে আমরা অতীতে কখনো ব্যর্থ হইনি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হব না।’ সোমবার একাদশ জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে সামনে যে সংকটই আসুক না কেন, তা শক্তভাবে মোকাবেলা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। 

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আমরা হতাশায় ভুগি না। আমরা সব সময় একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনো কখনো সেই পরিকল্পনা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনর্নির্ধারণ করতে হয়। সে কারণেই আজকে বাজেট ঠিক রেখেছি এবং প্রণয়নও করেছি। আশা করি, এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।’

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারিকালের এই বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলছেন, বাজেট একটু বেশি আশাবাদী বা উচ্চাভিলাষী। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে সব সময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। আজকে কভিড-১৯-এর জন্য সব কিছু স্থবির। তবে আমরা আশাবাদী যে এ অবস্থা থাকবে না। এর থেকে উত্তরণ ঘটবে। আজকে যদি হঠাৎ সে অবস্থার উত্তরণ ঘটে যায়, তাহলে আগামীতে আমরা কী করব, সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপটা আমরা নিয়েছি।’

দেশে করোনাকালেও খাদ্যসংকট হবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবেলা করবে এবং দেশের কোনো মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না। কারণ আমাদের খাদ্য চাহিদা তিন কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। ২৫ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই উৎপাদন আমরা অব্যাহত রাখব। কাজেই আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।’

করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশে যেন খাদ্যসংকট না হয়, সে জন্য এক ইঞ্চি কৃষিজমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেই নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে। তাই দেশ ও জাতি একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী একই সমস্যা। তবে দেশের সব ধরনের মানুষ যাতে উপকৃত হয়, এ জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ জন্য ইতিমধ্যে ১৯টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪.৯ শতাংশ সংকুচিত হবে মর্মে প্রাক্কলন করেছে। তা ছাড়া করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ১৩-২০ শতাংশ হ্রাস, বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লাখ কর্মীর পূর্ণকালীন চাকরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫-১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিট্যান্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে মর্মে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।’

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৬ দিন সারা দেশে সাধারণ ছুটি ছিল। সে প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কভিড-১৯-এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫.২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। আশা করা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২১ অথর্বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। একই সঙ্গে নিম্ন মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের যাবতীয় ব্যবস্থা সংসদে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। মহামারির এই সময়ে সরকারি ছুটির মধ্যেও যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাজেট প্রণয়ণ করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই সংকট মোকাবেলায় সরকারঘোষিত প্রণোদনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সবার আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে তিনি বলেন, ‘এই প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারির হাত থেকে দেশবাসী ও বিশ্ববাসী যেন মুক্তি পায়। চিকিৎসাধীনরা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।’

করোনা মোকাবেলায় আরো চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরো দুই হাজার চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আরো চার হাজার নার্স নিয়োগ দেব। সেই নির্দেশ আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ইতিমধ্যে দিয়েছি। শিগগিরই এই নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে তিন হাজার টেকনিশিয়ানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় উপনেতার বক্তৃতার সঙ্গে একমত পোষণ করে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা কী করে হয়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে বিরোধী দলের উপনেতা ঠিকই বলেছেন, থাকা-খাওয়া বাবদ মেডিক্যাল কলেজের হিসাব অনুযায়ী ২০ কোটি টাকা ব্যয় একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তবে এটা আমরা তদন্ত করে দেখছি, এত অস্বাভাবিক কেন হবে। এখানে কোনো অনিয়ম হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতির মূল উৎপাটন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাউকে ছাড় দেব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘যন্ত্রপাতি, টেস্ট কিট, সরঞ্জামাদি কেনাসহ চিকিৎসা সুবিধা আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুততম সময়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরো একটি প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে করোনা মোকাবেলায় আমাদের সামর্থ্য আরো বাড়বে।’

সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কম জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সময়ে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি দুই হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে পাঁচ লাখ এক হাজার ৬৪৪ জন। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৫.০১ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। এক হাজার ৭৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছে। ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়েছে। আক্রান্তের তুলনায় দেশে মৃত্যুর হার ১.২৬ শতাংশ। যেখানে ভারতে ৩.০৮, পাকিস্তানে ২.০৩, যুক্তরাজ্যে ১৪.০৩ ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। দেশে করোনাভাইরাসজনিত মৃত্যুর হার কম হলেও কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়।’

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কিভাবে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং সেই সঙ্গে অপরকে সুরক্ষা দেওয়া—এটা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আশা করি, সবাই এটা পালন করবেন।’