• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিধি বহির্ভূত ভাবে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ছাড় দিয়েছেন শিক্ষা অফিসার

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৯  

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সকালে যা বিধি বহির্ভূত, বিকালে তা বিধি সম্মত হয়ে যায়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবু ছালেহ সরকারের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত ভাবে এমনই একটি মাইনর মেরামত ও রাজস্ব মেরামত খাতের ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে স্কুল উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে উপজেলার ৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রুটিন মেইনটেন্যান্স, মাইনর মেরামত, রাজস্ব মেরামত, প্রাক প্রাথমিক, ওয়াস ব্লক মেরামত ও স্লিপ গ্রান্ডের টাকা মিলে সর্বমোট ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময় উপজেলা প্রাথমিক অফিসার পদে দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি বরাদ্দের অর্থ ৯৩টি স্কুলের বিপরীতে বিভাজন করে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় পাশ করান। এই বিভাজনে দেখা যায় ৯৩টি স্কুলের মধ্যে রমনা ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে মাইনর মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা এবং রাজস্ব মেরামতের জন্য আরও দেড় লাখ টাকা বরাদ্দসহ প্রাক প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা,এবং স্লিপ গ্রান্ড বাবদ ৭০ হাজার টাকা মিলে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ বাকী ৯২ টি স্কুলের বিভাজন তালিকায় দেখা যায় যে, যে সকল স্কুলের বিপরীতে মাইনর মেরামতের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেই স্কুলের বিপরীতে রাজস্ব বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

বিভাজনের পর স্কুল প্রতি মোট বরাদ্দের টাকা ভুয়া ভাউচার দিয়ে রাজস্ব অফিস থেকে উত্তোলন করে মাইনর ও রাজস্ব মেরামতের টাকা অফিস এ্যাকাউন্টে নেওয়া হয় এবং অন্যান্য খাতের টাকা সংশ্লিষ্ট স্কুলের এ্যাকাউন্টে ট্র্যান্সফার করা হয়। মাইনর ও রাজস্ব মেরামতের স্কুল প্রতি বরাদ্দের অর্ধেক টাকা মেরামতের জন্য প্রথম পর্যায়ে ছাড় দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ের ছাড়কৃত টাকার কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে পরবর্তী বাকী টাকা ছাড় দেওয়ার কথা। এরই মধ্যে তৎকালীন শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অন্যত্র বদলী হয়ে যান। সম্প্রতি মো. আবু ছালেহ সরকার উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে যোগদান করেন।

নাবযোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার মো. আবু ছালেহ সরকার স্কুল প্রতি আর্থিক বরাদ্দের বিভাজনটি দেখেন এবং বিভিন্ন স্কুলের কাজ সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. শাখাওয়াৎ হোসেন ও মো. জাহেদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে পরিদর্শন শেষে রমনা ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাইনর মেরামত ও রাজস্ব মেরামত খাতের বাকী টাকা ছাড় না দিয়ে, আটকিয়ে রাখেন। এদিকে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার কাজ শেষ হয়েছে এবং পাওনাদারগণ টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে জানালে, শিক্ষা অফিসার বাকী টাকা প্রদানে বিধিগত সমস্যা আছে মর্মে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। বিষয়টি স্থানীয় শিক্ষক নেতাদের কানে গেলে, তারাও উক্ত টাকা ছাড় দেওয়ার জন্য শিক্ষা অফিসারকে অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষা অফিসার তাদেরকে জানান, বিধিগত ভাবে ছাড় দিতে হলে, হয় রাজস্ব, নয় তো মাইনর মেরামতের যে কোন একটি বরাদ্দের টাকা ছাড় দেওয়া যাবে। শিক্ষক নেতারা ও প্রধান শিক্ষক এটা মানতে রাজী না হওয়ায়, তিনি স্কুল পরিদর্শন করে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ অন্তে সিদ্ধান্ত নিবেন মর্মে তাদেরকে সাফ জানিয়ে দেন।

এদিকে শিক্ষকরা বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে জানালে, থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। এ প্রতিনিধি গত ৩০ অক্টোবর শিক্ষা অফিসার মো. আবু ছালেহ সরকারের মুখোমুখি হলে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও অডিট শাখার পরিপত্র (যার স্মারক নং-৩৮.০০৬.০২০.০৭.০০.০৪৫.২০০৯-১৩৮ তারিখ ২০ মে ২০১৩খ্রিষ্টাব্দ ,বাংলা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০বঙ্গাব্দ) দেখিয়ে বলেন, এই পরিপত্রের শর্তাবলী অর্থ বরাদ্দের নীতিমালার ৮ নং নির্দেশনায় বলা হয়েছে “উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মেরামত কাজ চলছে অথবা মেরামতের জন্য তালিকা ভুক্ত এমন কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়/ প্রতিষ্ঠান বরাবরে রাজস্ব খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণের সময় দ্বৈততা পরিহারের লক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠান মেরামত/সংস্কার/অবকাঠামো নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত নয় মর্মে উল্লেখ করতে হবে।” এই নীতি মালা অনুযায়ী পূর্বের শিক্ষা অফিসার মাইনর মেরামত ও রাজস্ব মেরামতের টাকা একই প্রতিষ্ঠানে দিতে পারেন না বলে তিনি জানান। সে কারণেই তিনি বাকী টাকা ছাড় দিচ্ছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে ছাড় দেওয়া গেলে, তিনি উক্ত বরাদ্দের টাকা ছাড় দেবেন বলে জানান। অথচ অজ্ঞাত কারণে, বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর তিনি একই সাথে মাইনর মেরামত ও রাজস্ব মেরামতের বরাদ্দের চেকে স্বাক্ষর করে রমনা ১ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. নাজমা বেগমের সাথে মোবাইলে কথা বললে, তিনি ৩১ অক্টোবর বিকালে দুটি খাতেরই চেক পেয়েছেন মর্মে জানান।

শিক্ষা অফিসার আবু ছালেহ সরকারের নিকট মোবাইলে যোগাযোগ করতে গেলে, তিনি কোন নীতিমালা ও বিধিমালা মোতাবেক চেক হস্তান্তর করলেন জানতে চাইলে তিনি এর কোন যুক্তি সংগত উত্তর দিতে পারেননি।