• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিশ্ব ইজতেমার পটভূমি

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২০  

তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ‘বিশ্ব ইজতেমা’। যা বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ‘ইজতেমা’ আরবি শব্দ যার অর্থ সম্মিলন, সভা বা সমাবেশ। ‘বিশ্ব ইজতেমা’ শব্দটি বাংলা ও আরবি শব্দের সম্মিলনে সৃষ্ট।
 
তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণ করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর এই সমাবেশ নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের তৎকালীন হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা হয়, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ওই বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেয়ায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। 

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান অবধি ‘বিশ্ব ইজতেমা’ টঙ্গীর কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ তীরের উত্তর-পূর্ব তীরসংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু মিলিয়ে রাজউকের হুকুমে প্রাপ্ত ১৬০ একর জায়গার বিশাল খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-শহর-বন্দর থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি দেশের তাবলিগি দ্বীনদার মুসলমান বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন। 

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামী দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমারও আয়োজন করেন। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। পুরো সমাবেশের আয়োজনই করে থাকেন একঝাঁক ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক। যারা আর্থিক, শারীরিক সহায়তা দিয়ে প্রথম থেকে শেষতক এই সমাবেশকে সফল করতে সচেষ্ট থাকেন।

পুরো সমাবেশস্থলটি একটি উন্মুক্ত মাঠ, যা বাঁশের খুঁটির ওপর চট লাগিয়ে ছাউনি দিয়ে সমাবেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুধু বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সমাবেশস্থলটি প্রথমে খিত্তা এবং পরে খুঁটি নম্বর দিয়ে ভাগ করা হয়। অংশগ্রহণকারীগণ খিত্তা নম্বর ও খুঁটি নম্বর দিয়ে নিজেদের অবস্থান শনাক্ত করেন। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাওয়ারি মাঠের বিভিন্ন অংশ ভাগ করা থাকে। বিদেশি মেহমানদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা বেষ্টনীসমৃদ্ধ এলাকা থাকে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরাই কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, কোনো সশস্ত্র বাহিনীর অনুপ্রবেশের অধিকার দেয়া হয় না।

সাধারণত তাবলিগ জামাতের অংশগ্রহণকারীরা সর্বনিম্ন তিন দিন আল্লাহর পথে কাটানোর নিয়ত বা মনোবাঞ্চা পোষণ করেন। সে হিসেবেই প্রতিবছরই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী। 

সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুক্রবার আম বয়ান ও বাদ জুমা থেকে বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এ বছর ১০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। 

প্রতিবছরই এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশ্ব ইজতেমা প্রতিবছর দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয় কাকরাইল মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় এবং তিনদিন করে আলাদা সময়ে মোট ছয়দিন এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ আম বয়ান বা উন্মুক্ত বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় এবং আখেরি মোনাজাত বা সমাপনী প্রার্থনার মাধ্যমে শেষ হয়।

এ বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ তীরে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্বের তিন দিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের ইতজেমা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম পর্বের শেষ দিন ১২ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্বের শেষ দিন ১৯ জানুয়ারি উভয় পর্বে মুসলিম জাহানের সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ইনশাআল্লাহ!