• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিশ্বব্যাপী ইভিএমের প্রচলন

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

দেশে দেশে ইভিএম

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইভিএম পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতি প্রথম চালু হয় যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ সালে। এর ৪ বছরের মধ্যেই ৭টি রাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

আইনগতভাবে আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, কাজাখস্তান, পেরু, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলায় চালু রয়েছে ইভিএম প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি। এছাড়া আর্জেন্টিনা, ইতালি, মেক্সিকো, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশে এখনো এই ব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

আবার এটাও ঠিক যে বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর প্রায় ৮৫ ভাগ দেশেই এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। এর পেছনে মেশিন যতটা না দায়ী ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক ও অন্যান্য কিছু সমস্যা।

যেসব প্রতিষ্ঠান ইভিএম তৈরি করে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইভিএম মেশিন তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশেও তৈরি হয়। পাইল্যাব বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইভিএম মেশিন তৈরি করে থাকে। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপকরণ ইভিএম প্রস্তুতকারী দেশসমূহের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা নিম্নে দেয়া হলো-

১. ভারত ইলেকট্রনিকস্‌ লিমিটেড, ভারত

২. ডোমিনয়ন ভোটিং সিস্টেমস্‌, কানাডা

৩. ইলেকট্রনিকস্‌ কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড, ভারত

৪. ইএসএন্ডএস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৫. হার্ট ইন্টারসিভিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৬. নেড্যাপ, নেদারল্যান্ডস

৭. প্রিমিয়ার ইলেকশন সল্যুশনস্‌, (সাবেক ডাইবোল্ড ইলেকশন সিস্টেমস্‌) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৮. সিকোইয়া ভোটিং সিস্টেমস্‌, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

৯. ভোটেক্স বা টিএম টেকনোলোজিস্‌ ইলেকশনস্‌ ইনকর্পোরেট, কানাডা

১০. এছাড়াও আকুপোল, এডভান্সড্‌ ভোটিং সল্যুশনস্‌, মাইক্রোভোট, স্মার্টম্যাটিক, ইউনিল্যাক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রস্তুতকারক হিসেবে খ্যাত।

বাংলাদেশে ইভিএমের জানা-অজানা

২০০৭ সালে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদের নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করা হয়। ছোট নির্বাচনে সফলতার পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ প্রকল্প জমা দেন উদ্ভাবক, বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এস এম লুৎফল কবির এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাইল্যাব বাংলাদেশ। তখন ছবি সংবলিত ভোটার তালিকার কাজ চলার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমকে সামনে রেখে ১৩০টি ইভিএম তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি ইভিএম চট্টগ্রামে আনা হয়। তবে ১৪ ভোট কেন্দ্রের ৭৯টি বুথে ৭৯টি ও প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি অতিরিক্ত হিসাবে মোট ৯৩টি ইভিএম স্থাপন করা হয়।

২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে সফলতা আসে। সেখানে মোট ২৫ হাজার ২৩৮ জন ভোটার ইভিএমে ভোট প্রদান করেন। দ্রুত ভোট গ্রহণ ও দ্রুত ফলাফল ঘোষণায় ইভিএম পদ্ধতির সফল কার্যকারিতার প্রমাণ মেলে।

এ নির্বাচনে ভোট গণনার ক্ষেত্রে অন্য ওয়ার্ডগুলোতে যেখানে তিন থেকে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে, এ ক্ষেত্রে জামাল খান ওয়ার্ডে এক ঘণ্টার মধ্যেই ফল ঘোষণা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে জাতীয় নির্বাচনের মত বৃহৎ পরিসরে কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে যে কোন দলের জন্যই এ পদ্ধতি হবে অনেক বেশি হতাশাজনক।

ইভিএমের আরও কিছু অজানা তথ্য

ইভিএমের একটি ব্যালট ইউনিটে ১২ জন প্রার্থীর জন্য ব্যবস্থা থাকে। চাইলে এর সঙ্গে আলাদা আরো পাঁচটি ব্যালট ইউনিট যোগ করে মোট ৬০ জন প্রার্থীর ভোট নেয়া সম্ভব। কোথাও ১২ জনের কম প্রার্থী থাকলে ফাঁকা প্রতীকের সুইচগুলো থাকবে অকার্যকর।

ব্যালট ইউনিট অথবা কন্ট্রোল ইউনিট বিকল হলে কি করা যাবে এ কথা মাথায় রেখে প্রতিটি কেন্দ্রে একটি অতিরিক্ত ইভিএম দেয়া হবে। প্রদত্ত ভোটের হিসাব কন্ট্রোল ইউনিটে সংরক্ষিত থাকে, তাই কোনো ব্যালট ইউনিট বিকল হলে ভালো ইউনিট দিয়ে সেটিকে প্রতিস্থাপন করলেই চলবে।

কন্ট্রোল ইউনিটও অনুরূপভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিকল কন্ট্রোল ইউনিটে সংগৃহীত ভোট নষ্ট হবে না। নতুন কন্ট্রোল ইউনিটের ফলাফলের সঙ্গে বিকল কন্ট্রোল ইউনিটের ফলাফল যোগ করে ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় সারা দিনের ভোট প্রদান শেষ হলে মেশিন অতি দ্রুত জানিয়ে দেবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন।

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি চাপলে ব্যালটে সাজানো প্রথম প্রার্থীর প্রতীকের নাম ও প্রাপ্ত মোট ভোট কন্ট্রোল ইউনিটের ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। একই সুইচ দ্বিতীয়বার চাপলে দ্বিতীয় প্রার্থীর, এভাবে একে একে সব প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোট দেখা যাবে।

পূর্ব থেকে সরবরাহ করা একটি ফরমে প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাগুলো লিখে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে দেবেন। প্রতিটি বুথের ফলাফল একীভূত করে প্রিজাইডিং অফিসার অন্য একটি ফরমে তুলে স্বাক্ষর করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে তা পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।