• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

বুড়িমারী স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ২৮ কোটি টাকা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। একসময় ভারতে পণ্য আমদানি-রফতানি হতো। বর্তমানে বন্দরটি কেবল পাথরনির্ভর। পাথর ছাড়া কোনো পণ্য আমদানি হয় না। এতে দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি। ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িমারী স্থলবন্দরে অসংখ্য পাথরবোঝাই ট্রাকের ভিড়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পাথর ছাড়া অন্য কোনো পণ্য চোখে পড়েনি। বুড়িমারী থেকে প্রায় আট কিলোমিটারজুড়ে মহাসড়কের পাশে পাথরের স্তূপ। পাথর ভাঙা মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ পাসপোর্টযাত্রী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ধুলাবালুতে ঢেকে গেছে স্থলবন্দর। ভারতের মালবোঝাই ট্রাকের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।
 
এ অবস্থায় বুড়িমারী স্থলবন্দরে গত ১৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, রাস্তার দূরত্ব, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনৈক্য, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকা এবং অতিরিক্ত পরিবহন খরচের কারণে এই পথে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর সূত্র জানায়, বুড়িমারী স্থলবন্দরে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৪ কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সেখানে অর্জিত হয়েছে ৭৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ১২ হাজার টাকা কম আয় হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সেখানে আয় হয়েছে ৪০ কোটি ৫৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নতুন অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা কম আয় হয়েছে। সবমিলে গত ১৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে ভুটান থেকে পণ্য আমদানির জন্য বুড়িমারী শুল্ক স্টেশন চালু করা হয়। পরবর্তীতে আমদানি ও রফতানি বৃদ্ধি পেলে শুল্ক স্টেশনটি স্থলবন্দরে রূপান্তর হয়। বিগত বছরগুলোতে এই পথে ভুটান থেকে পাথর ও কমলা ছাড়াও ভারত থেকে পাথর, কমলা, আপেল, কসমেটিকস, পেঁয়াজ, ভুট্টা, চাল, গম, প্লাইউড, রেজিনসহ উচ্চ শুল্কের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হতো।
 
অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে ঝুট, ওষুধ, কটন, প্রাণ-এর মালামালসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বন্দরটি হয়ে পড়েছে পাথরনির্ভর। দুই-একটি পণ্য ছাড়া উচ্চ শুল্কের কোনো পণ্য আসছে না বন্দর দিয়ে। ডুপ্লেক্স বুক, সিরামিকস, মার্বেল পাথর, মিক্সড কাপড়সহ কয়েকটি উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাজস্ব আয় কম হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট, খানাখন্দে ভরা সড়ক এবং রাস্তার দূরত্বের কারণে পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় আমদানিকারকরা এই পথে পণ্য আমদানিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধ, সড়ক প্রশস্তকরণসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে বন্দরে রাজস্ব আয় বাড়বে। এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড নেই। পৃথক কাস্টমস ভবন ও ইমিগ্রেশন ভবন নেই। বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনতে পৃথক পৃথক ভবন প্রয়োজন। বুড়িমারী স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক যাতায়াত করে বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায়। এসব ট্রাক রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বন্দর এলাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে করে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বন্দরের ব্যবসায়ীদের দাবি, এই বন্দরে একটি স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হোক।

বুড়িমারী স্থলবন্দর ট্রাক, ট্যাংক-লরি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, বুড়িমারী থেকে ১০০ কিলোমিটার মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল করতে পারে না। আমরা চারলাইন সড়কের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে জায়গা সংকট। সড়ক, বিদ্যুত ও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। বর্তমানে পাথর ছাড়া অন্য কোনো পণ্য বন্দরে প্রবেশ করছে না।

বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ মাহমুদ বলেন, নিরাপত্তা এবং পাসপোর্ট যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সুবিধার্থে পৃথক অফিসের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার সুমেন কান্তি চাকমা বলেন, বন্দর দিয়ে ৮০ শতাংশ পাথর আসে ভুটান থেকে। যার কোনো ডিউটি নেই। ২০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। পাথর ছাড়া অন্য কোনো পণ্য না আসায় রাজস্ব কমেছে।