• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ভাষা সৈনিক ও একজন মুক্তিযোদ্ধার আর্তনাদ!

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ করে হয়তো ভুলই করেছেন তিনি। নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে জীবনযাপন করলে, এই অসহায় দিন দেখতে হতো না আজকে। একজন ভাষাসৈনিকের এই দুরাবস্থা হতো না। মানুষটা কাউকে দেখলে মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। 

গত বছর ব্রেন স্ট্রোক করার পর তার ডান পাশ অবশ হয়ে যায়। এতে ডান হাত ও পা বিকল হয়ে যায়। স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না এখন, কথা জড়িয়ে যায়। শুনলে মনে হয় আবোল তাবোল কী যেন বকছেন। অথচ ভুগছেন হার্টের রোগসহ নানা শারীরিক সমস্যায়। সারাদিন নিজের ভাঙা ঘরে শুয়েই দিন কাটে তার। এমন অসহায় অবস্থাতেই দিন কাটছে এই বীরপুরুষের। বর্তমানে এমনই সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ভাষাসৈনিক খন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ।   

বয়স ৯০ ছুঁয়েছে, অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় যে ভাতা পাচ্ছেন সেটা দিয়ে কোনো মতে দুই বেলা খেয়ে বেঁচে আছেন। আজীবন মানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন নিজেই। বেলাশেষে এখন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন সেই মানবতা। ভাষা আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়, দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এমন দেশপ্রেমিকের দিন কাটছে অর্থভাবে বিনা চিকিৎসায়। 

তার জীবন সঙ্গিনী সুরাইয়া মালেক স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। সারা জীবন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা আব্দুল মালেকের সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই নেই। মুক্তাগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল কাশেমের ভাষ্যমতে, ভাষাসৈনিক আব্দুল মালেক একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জীবনভর মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। অর্থ সম্পদ কিছুই সঞ্চয় করতে পারেননি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাসে একজন ভাষা সৈনিক ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। কতটা কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে বাংলা বর্ণমালা আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত, স্বীকৃত। সেই বর্ণমালাকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করালেন যারা, তারা নিজেরাই এখন অসহায়ত্বের ছোবলে মাথা নুইয়ে জীবনযাপন করছেন। মারা যাওয়ার পর হয়তো তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। অনেক দুঃখ প্রকাশ করা হবে। তাতে শ্রদ্ধেয় আব্দুল মালেকের কিইবা আসবে যাবে? বেঁচে থাকতেই উনি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। মৃত্যুর পর পাওয়া সম্মান দিয়ে কী করবেন?