• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

মহামারির ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২০  

হামারি নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। আসুন এমন কঠিন পরিস্হিতিতে আমরা আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্হা গ্রহন করি। এবং সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার কাছে রোনাজারির মাধ্যমে সাহায্য ভিক্ষা করতে থাকি।

মহামারির এ সময়ে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয়:

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ মাঝে মাঝে তাঁর বান্দাদের ভয়, মুসিবত ও বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এ ধরনের সময়ে মুমিনরা হা-হুতাশ করে না। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। 

পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৫)।

পবিত্র কোরআন থেকে উল্লিখিত আয়াতটির আলোকে আমরা বুঝতে পারি, এখনই মোক্ষম সময় ধৈর্য ধারণ করার। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করতে হবে। কারণ, আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কেউ কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারে না। 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর সাক্ষাৎ অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয় আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সূরা: আনকাবুত, আয়াত: ২৩)।

কিছুদিন পর পর নতুন নতুন রোগব্যাধি ও ভাইরাস এসে আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা যত উন্নতিই করি, মহান আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এ কারণেই আমাদের উচিত, আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং সব পাপ থেকে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অর্জনের পরও যদি বিপদের সম্মুখীন হয়, সেটাও মহান আল্লাহ তার জন্য কল্যাণকর করে দেন। 

সুহায়ব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকর-গুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম, হাদিস: ৭৩৯০)।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে আমাদের সর্বপ্রথম এটা চিহ্নিত করতে হবে যে এই রোগগুলো কেন হয়। এবং তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আধ্যাত্মিক দিক থেকে চিন্তা করলে পৃথিবীতে নতুন নতুন রোগব্যাধি, বিপদাপদ আসার কারণ মানুষের গুনাহ। 

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)।

করোনা ভাইরাসও এমন একটি ভাইরাস, যা এর আগে আর কখনোই পৃথিবীতে দেখা যায়নি। তবে ২০০২ সালে চীনে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে সংক্রমিত হয়েছিল ৮ হাজার ৯৮ জন। মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো হলো কাশি, জ্বর, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, নিউমোনিয়া।

তাই এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত, অশ্লীলতা ত্যাগ করা। ঘরে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত করা। বেশি বেশি সদকা করা, সব সময় পবিত্র থাকা, পরিচ্ছন্ন থাকা। নামাজের মাধ্যমে বেশি বেশি বিপদ থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’ (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৪৫)।

পাশাপাশি এ বিপদের মুহূর্তে আমরা বেশি বেশি সদকা করতে পারি। কারণ, সদকার মাধ্যমে বিপদ দূর হয়ে যায়। মানুষের হায়াতে বরকত হয়, অপমৃত্যু কমে ও অহংকার অহমিকতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। (আত্তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/৬৫)।

এ ছাড়া মহামারির সময় আল্লাহর রাসূল, মহামারি আক্রান্ত এলাকায় যাতায়াত করতে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা করোনা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে যাতায়াত বন্ধ রাখতে পারি। বিনা প্রয়োজনে জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি। রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সেখান থেকে চলে এসো না, অন্যদিকে কোনো এলাকায় মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত এলাকায় যাতায়াত থেকে বিরত থাকতে। পাশাপাশি জনসমাগম হয় এমন জায়গা এড়িয়ে চলতে। তাই আমাদেরও উচিত যতটুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা।

এছাড়া এ সময় ডাক্তাররা সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। ইসলাম এ বিষয়টির প্রতি সব সময় জোর দিয়ে থাকে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম, হাদিস: ৪২২)।

তাছাড়া আরো বহু হাদিসে সার্বক্ষণিক ওজু অবস্থায় থাকার প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। আমরা যদি ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী বেশি বেশি সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি ঘন ঘন ওজু করি, তাহলে একদিকে যেমন ওজুর ফজিলত পাওয়া যাবে, অন্যদিকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার পদক্ষেপ গ্রহণ হবে।

এছাড়া ওজুর মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভূত হয়, ফলে হতাশা দূর হয়ে যায়। ওজু আমাদের মুখের তৈলাক্ততা দূর করে। ওজুর মাধ্যমে মুখে জমে থাকা ছত্রাকগুলো দূর হয়ে যায়। ফলে ঘুমানোর আগে ওজু আমাদের ত্বকের জন্যও ভালো। বিউটি এক্সপার্টরা ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ওজুর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস থেকে হেফাজত করুন এবং পৃথিবী থেকে দূর করে দিন। আমিন।