• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
যুদ্ধের অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয় হলে বিশ্ব রক্ষা পেত- প্রধানমন্ত্রী দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানলে জনগণই বিএনপিকে প্রতিহত করবে’ লালমনিরহাটে হত্যা মামলায় বিএনপির দুই নেতা কারাগারে

মাছের নাম ‘বাংলাদেশিয়াস’-বৈশ্বিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২০  

একটি নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ শণাক্তকরণের মধ্য দিয়ে সামুদ্রিক মাছের বৈশ্বিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো বাংলাদেশ। গবেষকরা দেশের নামানুসারে মাছটির নাম দিয়েছেন ‘...বাংলাদেশিয়াস।’ আর স্থানীয় ভাষায় মাছটিকে বলা হচ্ছে ‘পেট্টলি’।
বাংলাদেশের কয়েকজন প্রাণী গবেষক বঙ্গোপসাগরে কোরাল মাছের প্রজাতি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ গবেষণার সময় নতুন এক প্রজাতির মাছ খুঁজে পান। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সামুদ্রিক মাছের তালিকায় যুক্ত হলো নতুন এক প্রজাতি।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনস থেকে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এদের দৈহিক গঠন ও বাহ্যিক আকৃতি এবং ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়। বাংলদেশের নামের সঙ্গে মিল রেখে মাছটির বৈজ্ঞানিক নামকরণ ‘পোমাসেন্ট্রাস বাংলাদেশিয়াস’ রাখা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায় বলে প্রজাতিটির ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে বেঙ্গল ডেমোইসেলি এবং সেন্টমার্টিনে বসবাসরত মানুষের কাছে মাছটির পরিচিতির ওপর মাছটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে পেট্টলি।
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৪২২ প্রজাতির ড্যামসেল মাছ শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রজাতিগুলো প্রবাল প্রাচীরের আশপাশে থাকে এবং সেখানেই বংশবিস্তার করে। এরা দৈর্ঘ্যে ১৫ সেন্টিমিটারের কম হয়, তবে কিছু প্রজাতি ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এরা অনেক চতুর এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের। এরা দেখেতে রঙিন ও আকর্ষণীয় হওয়ায় এদের অনেক প্রজাতি ১৪ ইঞ্চির নিচে অ্যাকুরিয়াম পেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।


সেন্ট মার্টিনস প্রবাল দ্বীপে বাংলাদেশের জলসীমায় ডিএনএ বার কোডিংয়ের মাধ্যমে কোরাল মাছের প্রজাতি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার সময় পোমাসেন্ট্রাস বাংলাদেশিয়াস প্রজাতিটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সহায়তায় ২০১৭ থেকে ২০১৮ সন প্রায় দুই বছর ধরে শেরে-বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের একোয়াটিক বায়োরিসোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির একদল গবেষক দ্বারা গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, একোয়াকালচার এবং মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন ও ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগ অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব। সহযোগী হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জায়িদুল ইসলাম, পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমিত কুমার নিয়োগী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার। এরা তিনজনই শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াটিক বায়োরিসোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহকারী গবেষক। গবেষণা প্রবন্ধটি ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী জার্নাল জ্যুট্যাক্সাতে ছাপা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, সেন্টমার্টিনে বায়োডাইভার্সিটি এনালাইসিসের সময় প্রবালের মধ্যে কোরাল মাছের মতো কিছু মাছ দেখতে পাই। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন গবেষণাগারে রেখে এদের দৈহিক গঠন, বাহ্যিক আকৃতি ও ডিএনএ বারকোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছটির যে রেজাল্ট পেয়েছি, তার সঙ্গে অন্য কোনো মাছের মিল নেই। অর্থাৎ মাছটি এর আগে কোথায়ও পাওয়া যায়নি। পরে বাংলাদেশের নামানুসারে আমরা নতুন মাছটির নামকরণ করি। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে ‘ইকোসিস্টেম বাউন্ডারি’ নির্ণয় করে এর যত্ন নিতে হবে এবং গবেষণার জন্য আধুনিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ পেলে আরও ভালো ভালো গবেষণা বিশ্বকে উপহার দেওয়া যেত।