• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

মানবকল্যাণে ইসলামী অর্থনীতির

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

ইসলামী অর্থনীতি একটি বৈশ্বিক ও বৈপ্লবিক দর্শনের ধারক। পৃথিবীর অন্যান্য অর্থনৈতিক দর্শনের মতো তা নিছক জাগতিক কল্যাণ ও সাফল্যের চিন্তায় আবদ্ধ নয়। ইসলাম মানুষের আত্মিক, ধর্মীয়, চারিত্রিক, রাজনৈতিক ও প্রাত্যহিক জীবনধারা অর্থাৎ পার্থিব ও অপার্থিব সব ধরনের কল্যাণ, অগ্রগতি, পথনির্দেশের পতাকাবাহী। একই ইসলাম একটি উদার ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সাময়িক কল্যাণের পরিবর্তে স্থায়ী কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়। ইসলামী অর্থনীতিতেও সামগ্রিক এই কল্যাণচিন্তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন রয়েছে।

ইসলামী অর্থনীতিতে মূল্যবোধ

ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাস অনুসারে মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। সুতরাং তার জন্য আবশ্যক হলো মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে আল্লাহর যথার্থ প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যেখানে আইনদাতা হবেন মহান আল্লাহ। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তা বাস্তবায়ন করবে মাত্র। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে একজন মুমিন বিশ্বাস করে যদি মানুষ তার যাপিত জীবনে আল্লাহর আনুগত্যে সে নিষ্ঠা ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হয় তবে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ইসলামে সম্পদের মালিকানা

মুমিন বিশ্বাস করে, সৃষ্টি জগতের সমুদয় সম্পদের স্রষ্টা, মালিক ও নিয়ন্ত্রক। পৃথিবীতে মানুষ শুধু তার তত্ত্বাবধায়ক। ফলে মানুষের দায়িত্ব স্রষ্টার নির্দেশনা অনুসারে তা ব্যবহার করা। ইসলামী অর্থনীতির এই মালিকানা দর্শন মানুষকে আর্থিক স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্য থেকে রক্ষা করতে পারে। সম্পদের কল্যাণকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। বিপরীতে মানুষ যদি সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিকানায় বিশ্বাসী হয়, তবে সে সম্পদ ব্যবহারে অবশ্যই স্বেচ্ছাচারী হবে এবং সম্পদ ব্যয়ে কল্যাণচিন্তা তার কাছে গুরুত্ব হারাবে।

অর্থনীতিতে স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ

ইসলাম জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো অর্থনীতিতেও স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণের প্রবক্তা। নিয়ন্ত্রণ দ্বারা আল্লাহর নিরঙ্কুশ আনুগত্য উদ্দেশ্য এবং স্বাধীনতা দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যায় নিয়ন্ত্রণ ও আরোপ থেকে মুক্ত থাকা উদ্দেশ্য। ইসলামী নির্দেশনা হলো, ব্যক্তি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং আল্লাহর আইন তাকে অন্যায় নিয়ন্ত্রণ থেকে রক্ষা করবে। যেমন ব্যক্তি বৈধ পথে যত খুশি সম্পদ অর্জন করবে, কিন্তু আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সে জাকাত দেবে, দরিদ্র প্রতিবেশীর কল্যাণে কাজ করবে, দ্বিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করবে।

অর্থনীতিতে কল্যাণ চিন্তার প্রয়োজনীয়তা

অর্থনীতিতে কল্যাণ চিন্তা ও ভারসাম্য না থাকলে জাতীয় জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) অর্থনীতিতে ‘কল্যাণচিন্তা ও পরিচ্ছন্নতা’র প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, রোম ও পারস্যের মানুষরা পরকালীন জীবন ভুলে গিয়েছিল। তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পার্থিব ভোগ-বিলাস। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভেতর বিলাসিতার প্রতি আসক্তি বাড়তে থাকে এবং প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। ফলে দেশের মানুষের দৃষ্টি বিলাস সামগ্রীতে আবদ্ধ হয় এবং কর্মশক্তি সেখানে নিযুক্ত হয়। কৃষি ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনে অনীহা ও অনাগ্রহ তৈরি হয়। কিছুকাল পর সামগ্রিক জীবন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সামগ্রিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং মানুষের ভেতর ব্যাপক হতাশা তৈরি হয়।

ইসলামী অর্থনীতিতে মানবকল্যাণ

ইসলাম অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে কিছু মূলনীতি গ্রহণ করেছে। তা হলো—

১. ন্যায়পরায়ণ : ইসলামী অর্থনীতি ন্যায়পরায়ণ হবে। যেখানে শক্তি, ক্ষমতা, আয়তনে বড় অর্থনৈতিক পক্ষগুলো ছোট ছোট পক্ষের ওপর অবিচার করে না। যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার বৈধ মালিকানাধীন সম্পদ স্বাধীনভাবে ব্যয় করার অধিকার পায়।

২. কল্যাণকর : সমাজের একাংশ ও বিশেষ শ্রেণি গোষ্ঠী নয়, সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করাই ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম লক্ষ্য। শুধু সক্ষম মানুষদের নয়; বরং দুর্বল, অসহায় ও অক্ষম মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় ইসলামী অর্থনীতি।

৩. ভারসাম্যপূর্ণ : ইসলামী অর্থনীতি ভারসাম্যপূর্ণ আর্থিক জীবনের নির্দেশনা দেয়। যেখানে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, কোনো একটি পক্ষের পরিবর্তে সব মানুষের এবং জীবনের একটি দিকের পরিবর্তে সামগ্রিক চিন্তা গুরুত্ব লাভ করে।

৪. পবিত্রতা : ইসলাম আর্থিক জীবনেও পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হওয়ার ও থাকার নির্দেশ দেয়। ফলে সুদ, জুয়া, হারাম পণ্য, পতিতাবৃত্তিসহ অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন নিষিদ্ধ।

৫. বাস্তবায়নযোগ্য : ইসলামী অর্থনীতি কোনো তাত্ত্বিক দর্শন নয়, এটি জীবনঘনিষ্ঠ ও বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। শুধু বাস্তবায়নযোগ্য এমন নয়, মুমিন তার আর্থিক জীবনে ইসলামী নির্দেশনা মানতে বাধ্য। ফলে ইসলামী অর্থনীতির কল্যাণ প্রায়োগিক।

৬. অগ্রাধিকার : ইসলামী পণ্য উৎপাদনে অগ্রাধিকারের প্রবক্তা। অর্থাৎ যে পণ্যের প্রয়োজনীয়তা যত বেশি, সে পণ্য উৎপাদনে তত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। সম্পদ ও কর্মশক্তির প্রয়োগও প্রয়োজনের আলোকে করা হবে।

৭. নৈতিকতা : ইসলামী অর্থনীতিতে অনৈতিকতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু আর্থিকভাবে কোনো কিছু লাভজনক হলেও তা যদি মানুষ ও মানবতার জন্য ক্ষতিকর হয়, ইসলাম তা উৎপাদন ও সরবারহ করার অনুমতি দেয় না।

৮. পরকালীন জবাবদিহি : ইসলামী বিশ্বাস অনুসারী মানুষের আর্থিক জীবনের সঙ্গে পরকালীন মুক্তির প্রশ্ন জড়িত। মানুষের সম্পদ অর্জন ও ব্যয় উভয়টি পরকালীন জবাবদিহির আওতাভুক্ত। ফলে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে কোনোভাবে জবাবদিহি এড়িয়ে গেলেও পরকালীন জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

এসব মূলনীতিতে সামগ্রিক মানবচিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। আল্লাহ সবাইকে কল্যাণের পথে চালিত করুন। আমিন।