• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

মুসলিম যুবকদের প্রতি বিশেষ উপদেশ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২১  

হে যুবক, তুমি কি ইসলামের সরল পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে চাও? মানব জাতিকে আলোর দিকে পথ দেখানোর স্বপ্ন দেখো? সর্বোপরি তুমি কি চাও যে তোমার রব তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হোন? তোমার জবাব যদি হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে তোমার করণীয় কী? এখানে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো—

গুনাহ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা : কোনো ভালো কাজ করার অভ্যাস গড়ার আগে গুনাহ বর্জনের অভ্যাস করো। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের যে বিষয় থেকে নিষেধ করলাম তা থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থেকো এবং যেসব বিষয়ের আদেশ করেছি তা যথাসম্ভব মেনে চলো।’ ( বুখারি ও মুসলিম)

দ্বিনকে জানা : তোমার দ্বিন সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বিন। এতে খেয়ালিপনা ও ধারণাপ্রসূত বিষয়ের কোনো স্থান নেই। তোমার দ্বিন ইসলাম শাশ্বত ধর্ম। এর মধ্যে কোনো ফাঁকফোকর নেই। দ্বিন ইসলাম একটি অনন্য ও সুদৃঢ় ধর্ম। তাই সূচনা থেকে দ্বিন শেখা শুরু করো; আকিদা, ফিকহ, উত্তম চরিত্র এবং লেদদেনের ব্যাপারে শিক্ষাগ্রহণ করো। রাসুল (সা.)-এর জীবনচরিত পড়ো, সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস অধ্যয়ন করো।

মসজিদের সঙ্গে হৃদয়কে বাঁধা : মসজিদ পৃথিবীতে আল্লাহর ঘর। মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়। সুতরাং তুমি কি চাও না যে প্রদিদিন অন্তত পাঁচবার তুমি আসমান ও জমিনের রব, সব বাদশাহর বাদশাহ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে? তোমার কি ইচ্ছা হয় না যে তোমার সব সমস্যা ও সংকট তাঁর কাছে বলবে? তাঁর কাছে তোমার প্রয়োজনের কথা বলবে?

তুমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায়ের অভ্যাস গড়ো, তাহলে এটা তোমার ইলম (জ্ঞান) অর্জনে উৎসাহ সৃষ্টি করবে এবং জীবন ক্রমেই সুন্দর থেকে সুন্দরতর হয়ে উঠবে।

সবার সেরা হয়ে ওঠা : যে মুসলিম যুবক উম্মাহকে পরিশুদ্ধ জীবনের পথ দেখাতে চায়, তার কর্তব্য হলো, বিশেষত পড়াশোনায় সে সবার সেরা হবে। কেননা কোনো জাতি শুধু চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা শিক্ষক খোঁজে না; তাদের জন্য প্রয়োজন হয় গবেষক চিকিৎসকের, উদ্ভাবক প্রকৌশলীর এবং বহুপ্রতিভাধর জ্ঞানী আলেমের।

আত্মীয়তার বন্ধন আঁকড়ে ধরা : একজন সচেতন যুবক হিসেবে তোমার অন্যতম গুণ হবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক আঁকড়ে ধরা। যার মনে আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনের প্রতি কল্যাণকামিতা নেই তার থেকে জাতি ও উম্মাহর জন্য ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। তোমার সবচেয়ে বড় আপনজন হলেন মাতা-পিতা। ভুলেও যেন তোমার মুখ থেকে তাদের উদ্দেশে ‘উফ’ শব্দটি বের না হয়, তোমার চোখ তাদের দিকে ক্রোধের দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে কিংবা কোনোভাবেই তারা যেন তোমার আচরণে অথবা ইশারা-ইঙ্গিতে কষ্ট অনুভব না করে।

উত্তম সঙ্গী নির্বাচন :  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ব্যক্তি তার সঙ্গীর দ্বিনদারির ওপর বিবেচিত হয়। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি যেন সঙ্গী নির্বাচনে খেয়াল রাখে।’ ( তিরমিজি ও আবু দাউদ)

কাজেই তুমি এমন বন্ধু নির্বাচন করো, যে তোমাকে বারবার আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তোমাকে একাকী থাকতে দেয় না। কেননা শয়তান একজনের সঙ্গে অবস্থান করে, একাধিক মানুষ থেকে দূরে থাকে।

সমকাল সম্পর্কে জানা : কোনো যুবক জাতির পরিবর্তন পরিকল্পনা করে অথচ তার কাছে সমকালের ধারণা নেই—এটা হতে পারে না। সচেতন যুবক সর্বদা সময় সম্পর্কে অবগত থাকে। তার দেশ, জাতি ও গোটা বিশ্বপরিস্থিতি খোলা বইয়ের মতো তার সামনে উন্মুক্ত থাকতে হবে। মুসলিমবিশ্বের প্রতিটি ঘটনার দিকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে। দেশ-বিদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখবে সে।

শরীরচর্চা করা : তোমাকে জানতে হবে, পত্রিকায় ক্রীড়াপাতা পড়া আর ক্রীড়াচর্চা করে উন্নত দেহ গঠন করা এবং শক্তিশালী হওয়া এক বিষয় নয়, এখানে বড় পার্থক্য আছে। একজন সচেতন যুবকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, সে সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী হবে। কেননা জাতি ও উম্মাহ তোমার বিবেক-বুদ্ধির মতো তোমার সুস্থ-সবল দেহের প্রতিও মুখাপেক্ষী।

দ্বিনের প্রতি অন্যকে আহ্বান : যখন তুমি পবিত্র এই দ্বিনের স্বাদ ও মিষ্টতা অনুভব করতে শিখবে এবং নিজের ওপর অর্পিত দ্বিনি দায়িত্বের গুরুত্ব বুঝতে পারবে, তখনই এই দ্বিনের দিকে অন্যকে আহ্বান করা তোমার কর্তব্য। এ কথা মনে রাখবে, তুমি দ্বিন বোঝার আগে এরাই তোমার সঙ্গী ছিল। এ জন্য দ্বিনের মিষ্টতার দিকে অন্যকে আহ্বান করো, তুমি যে উত্কৃষ্ট জীবন লাভ করেছ সে সম্পর্কে তাকেও অবগত করো। এতে সে যদি আমল করে, তাহলে তুমিও তার অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। আর তোমার অর্জিত সুখময় জীবনে এবং প্রতিদানে কোনো কমতি আসবে না; বরং তাদের আমলেও তুমি সমপরিমাণ প্রতিদান লাভ করবে। সুতরাং তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার সঙ্গীদের নেক আমলের প্রতিদান তুমি অর্জন করবে কি না? মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানায় এবং সৎকাজ করে। আর বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৩৩)

সময় নিয়ন্ত্রণ করা : উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো যদি কোনো পরিকল্পনা ও নিয়ম না মেনে করো, তাহলে কিছুতেই তা সম্পন্ন করতে পারবে না। তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তোমাকে অবশ্যই সুদৃঢ় পরিকল্পনা করতে হবে। মসজিদের জন্য কিছু সময়, চিন্তার জন্য কিছু সময়, ইসলামী বইপত্র অধ্যয়নের জন্য কিছু সময়, সাধারণ কিতাবাদির জন্য কিছু সময়, দেশ-বিদেশের খবরাখবর নেওয়ার জন্য কিছু সময়, আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কিছু সময়, খেলাধুলার জন্য কিছু সময় এবং বৈধ বিনোদনের জন্যও কিছু সময় তোমাকে নির্ধারণ করতে হবে।

এবং এ ক্ষেত্রে তোমাকে লক্ষ স্থির করে অগ্রসর হতে হবে। আগামী কয়েক ঘণ্টা তোমার কী কাজ, আগামীকাল তুমি কী করবে, আগামী মাস এবং আগামী বছর তোমার পরিকল্পনা কী এবং তোমার ভবিষ্যৎ জীবনের মূল লক্ষ্য কী—সেটাও তোমাকে স্থির করতে হবে। কেননা তোমার মালিকানাধীন সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হলো সময়। সুতরাং অত্যন্ত দামি এ সময়কে তুমি হেলাফেলায় অপচয় করতে পারো না। আর তোমার মূল সম্পদ হলো তোমার জীবন। অচিরেই একটু একটু করে তোমার এ মূল্যবান জীবনও ফুরিয়ে আসবে। এ জন্য সতর্ক হও এবং জীবনকে গড়ো। মহান আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম স্টোরি থেকে ড. রাগিব সারজানির আরবি প্রবন্ধ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন বেলায়েত হুসাইন