• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

যাদের ভাগ্যে মিলবে হাউজে কাউসার ও নবীজী (সা.) এর শাফায়াত

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮  

হাশরের ময়দান। সকল মানুষের হিসাব নিকাশের দিন। পিপাসা কাতর থাকবে মানুষ। কলিজা পুড়ে যাবে, তৃষ্ণায় জ্বলে যাবে অন্তর। এমন পিপাসার্ত মানুষ আর কখনো হয়নি।

সে সময় উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য হাউজে কাউসার নিয়ে হাজির হবেন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর জন্য এ এক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা। উম্মতদের হাউজে কাউসারের পানি পান করারনোর জন্য ডাকবেন প্রিয়নবী (সা.)। হাশরের মাঠে, কেয়ামত দিবসে হিসাবের সময় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতরা হাউজে কাউসারের পানি পান করবেন। সে দিনটি কাফেরদের কাছে ৫০ হাজার বছরের পরিমাণ দীর্ঘ হবে, আর মোমিনদের জন্য আল্লাহ তায়ালা তা সহজ করে দেবেন। সেদিনের নেয়ামত হাউজে কাউসারের পানির গুণাগুণ অনেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে সূরা কাউসারে স্পষ্ট করে এ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার বন্ধুকে হাউজে কাউসারের সম্মান দান করেছেন বলে ঘোষণা করেন। সূরা আল কাউসারে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।’

আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর হাউজ তার শরিয়তের মতোই বিশাল, সর্বাধিক উম্মতে ঘেরা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আমার হাউজ আইলা ও আদান (দুটি স্থানের নাম) এর দূরত্ব থেকেও বিস্তৃত ও দীর্ঘ। এর পানি দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং বরফের চেয়েও ঠান্ডা। আর এর পানপাত্র তারকার সংখ্যার চেয়েও অধিক।’ (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এর পানি মেশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধি।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার জীবন যার হাতে সেই সত্তার কসম, হাউজে কাউসারের পানপাত্রগুলো অন্ধকার রাতের আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। জান্নাতের পাত্র, যে তা থেকে পান করবে পরে সে আর পিপাসার্ত হবে না। জান্নাত থেকে দুইটি নালা দিয়ে এতে পানি প্রবাহিত হবে।’ (আহমাদ, মুসলিম ও নাসায়ি)

যারা এ পানির ভাগ্যবান পানকারী হবে:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসারী, তাঁর পথ ও মতের ধারক বাহকরাই তাঁর কাছে হাউজের পাশে অবস্থান গ্রহণের সুযোগ পাবে। আর তারা, যারা কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা কবিরা গোনাহ তা থেকে বিরত থাকলে আমি তোমাদের ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব।’ (সূরা নিসা : ৩১)

হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করার আরও কারণের মধ্যে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ শরিফ পাঠ করা।

আমল এবং এর প্রতিদানের মাঝে একটা সুন্দর মিল রয়েছে। যে দুনিয়ায় নবীর শরিয়তের অনুসরণ করবে, তাঁর পথ ও মতকে আঁকড়ে ধরবে এবং এর ওপরই মৃত্যুবরণ করবে, সে তার আমলের প্রতিদান হিসেবে হাউজে কাউসারে উপনীত হবে। আর যে দ্বীনের মাঝে পরিবর্তন করবে, বেদাত করবে সে সত্যবিমুখ হওয়ার করণে বাধাগ্রস্ত ও বঞ্চিত হবে।

হাউজে কাউসারের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। যে হাউজে কাউসারের প্রতি ঈমান রাখবেন না তার ঈমান থাকবে না।

যাদের ভাগ্যে নবীজির শাফায়াত:

হাশরের ময়দান। হিসাব নিকাশের পালা শেষ। কারও জন্য জান্নাতের ফয়সালা কারও জন্য জাহান্নাম। কেউ অল্পকিছু আমলের জন্য আটকে আছেন। কারওবা রহমতের প্রত্যাশা। একটুখানি সুপারিশের জন্য বান্দারা দৌড়াদৌড়ি করবেন নবীদের দ্বারে দ্বারে। সেদিন কারও সাহস হবে না আল্লাহর দরবারে সুপারিশের হাত বাড়াতে। একমাত্র নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তখন আল্লাহর আরশের নিচে এসে সিজদায় পড়ে কান্নাকাটি করতে থাকব। অতপর আল্লাহর তরফ থেকে বলা হবে, আপনি মাথা উঠান, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠাবেন এবং বলবেন, হে প্রভু! তুমি আমার উম্মতদের ক্ষমা কর। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আমার প্রিয়নবী! আমার নিরাপরাধ বান্দাদের বেহেশতের ডান দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছে করলে প্রবেশ করাতে পারেন।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, আমি এক দাওয়াতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কিয়ামতের দিন সকলের সর্দার হব। সে কঠিন দিনে কষ্ট সইতে না পেরে মানুষ অস্থির হয়ে যাবে এবং কার দ্বারা সুপারিশ করলে আল্লাহ কবুল করবেন এমন খোঁজ করতে থাকবে। তারা অন্যান্য নবীগণের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষে সমস্ত লোক হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলবে আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, আমাদের কষ্ট তো আপনি দেখেছেন, এখন দরবারে এলাহীতে আমাদের জন্য সুপারিশ করুণ যাতে আমাদেরকে পরিত্রাণ দেওয়া হয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে থেকে এক দূত এসে জানালেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে দুটি প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছেন। এ দুটির মধ্যে থেকে যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দুটি হলো, আমার অর্ধেক উম্মতকে বিনা হিসেবে বেহেশত দেওয়া হবে অথবা আমি যেকোনো উম্মতের জন্য আমার ইচ্ছেমত সুপারিশ করতে পারব। আমি সুপারিশ করার ক্ষমতাটাকেই গ্রহণ করেছি। কাজেই আমি মুশরিক ব্যতীত সকলের জন্য শাফায়াত করব।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদেরকেই একটি বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন। তা এটাই যে, তাদের একটি দোয়া অবশ্যই কবুল করা হবে। সকল নবীই প্রয়োজন মোতাবেক এক একটি জিনিস চেয়ে নিয়েছেন এবং তারা সকলেই পার্থিব জিনিস চেয়েছেন। কিন্তু আমাদের নবীজি বলেন, ‘আমি এ সুযোগ পৃথিবীতে গ্রহণ করিনি। রোজ হাশরে আমি আমার প্রাপ্য আদায় করব এবং তা হবে আমার উম্মতের নাজাতের জন্য সুপারিশ করা।’

যাদের জন্য হবে সুপারিশ:

হাশরের ময়দানে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে অতি শিগগিরই হিসাব-নিকাশের কাজ শুরু করার জন্য সকল নবীদের কাছে যেতে শুরু করবে। কিন্তু সকলেই অপরাগতা প্রকাশ করার পর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হবে এবং তিনি পৃথিবীর সকল মানবজাতির জন্য সুপারিশ করবেন।

দ্বিতীয় সুপারিশ হবে প্রথম পর্যায়ের মুমিনদের হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বেহেশতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য। এটাও শেষ নবীই করবেন।

তৃতীয় সুপারিশ হবে যারা নিজ অপকর্মের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়ে পড়েছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। এ সুপারিশ নবীজি করবেন এবং ওলামা, শুহাদা এবং অন্যান্য মুমুমিনরাও করবেন।

চতুর্থ সুপারিশ হবে ওই সকল গোনাহগারদের জন্য যাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করা হয়েছে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রার্থণা করা হবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং ফেরেশতারা এজন্য সুপারিশ করবেন।

পঞ্চম সুপারিশ করা হবে যাদেরকে বেহেশতে দাখিল করা হয়েছে তাদের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

যারা সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবে:

কিয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফাআত থেকে বঞ্চিত হবে যারা প্রকাশ্য শিরক ও কুফরীর গুনাহে লিপ্ত ছিল এবং এরই ওপর মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কাফের এবং যারা মুশরিক, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ী ভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।’ (সূরা: বাযয়্যিনাহ, আয়াত: ৬)

যারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে তাদের কোনো রক্ষাকারী বা সাহায্যকারী নেই। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে যার ওপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছে, তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে’? (সূরা: যুমার, আয়াত: ১৯)

এতে বুঝা যায়, এসব জাহান্নামীদের জন্য কোনো শাফাআতকারী নেই। নেই কোনো রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে কোনো শাফাআত গ্রহণও করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং সুপারিশকারীদের শাফাআত তাদের কোনো উপকারে আসবে না’। তিনি আরও বলেন, ‘যালিমদের জন্য কোনো বন্ধু নেই এবং এমন কোনো শাফাআতকারী নেই যার শাফাআত গ্রাহ্য হবে।’ (সূরা: গাফির, আয়াত: ১৮)

এ ছাড়া যারা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিকৃতি এনেছে অথবা এর মধ্যে পরিবর্তন করেছে তাদের অবস্থাও সম্পূর্ণ আশংকাজনক। কারণ, তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এই বলে তাড়িয়ে দেবেন: ‘তারা দূর হও, ধ্বংস হও যারা আমার পর (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন বা রদবদল করেছে।’ (বুখারী, মুসলিম)

তাই আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর দ্বীনের অপব্যাখ্যা করা যাবে না, সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবেই তা গ্রহণ করতে হবে।

বস্তুত: তাওহীদ হচ্ছে মানুষের চিরমুক্তির সুনিশ্চিত সনদ আর শিরক হচ্ছে ধ্বংসের মূল। তাই তাওহীদবাদী ঈমানদার লোক মহাপাপী হলেও মুক্তি পাবে। আর মুশরিক মহাজ্ঞানী ও গুণধর হলেও অমার্জনীয় অপরাধী। এজন্য ইসলামের নবী বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এই শাফাআত ইনশাআল্লাহ সে ব্যক্তি লাভ করবে যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক না করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। (বুখারী, মুসলিম)