• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

রংপুরে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে সচেতনতা বেড়েছে

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৯  

রংপুর নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়ার মোছা: মনো বেগম তার দেড় বছর বয়সের সন্তান মুক্তকে এ পর্যন্ত ৫ বার ভিটামিন এ ক্যাপুল খাওয়ান। তিনি এখনও নিয়মিত স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন- আর কখন খাওয়াতে হবে ভিটামিন ক্যাপসুল।

তিনি জানান, নিয়মিত ভিটামিন এ ক্যাপসুল না খাওয়ালে সন্তানের রোগ ছাড়ে না। সম্পুন্ন সুস্থ্য রাখতেই সন্তানকে এ ক্যাপসুল খাওয়ান। মনো বেগমের মত রংপুর নগরীর লাখো মা সচেতন হয়ে ওঠছেন। তারা রংপুর সিটি করপোশেনের প্রচারণা শোনা মাত্র অপেক্ষা করতে থাকেন সন্তানকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য।

অত্র ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম ফুলু জানান, ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ব্যাপারে ২ সপ্তাহ আগে সিটি করপোরেশন থেকে প্রচারণা চালানো হয়। তার পর ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রচারণা চলে। এসবের কারনে অভিভাবকরা আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখার ইন্সপেক্টর আব্দুল কাইয়ুম জানান, রসিক থেকে ব্যাপক প্রচারের কারনেই অভিভাবকরা সচেতন হয়ে ওঠছেন। এখন তারিখ ঘোষনা হলেই অনেক অভিভাবক খোঁজ খবর নেন।

২৭ নং ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য কর্মী শরিফা বেগম জানান, এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কয়েকদিন আগে থেকে অভিভাবক যোগাযোগ করেন। অত্র ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুণ অর রশিদ হারুণও জানালেন অভিভাবেকদের আগ্রহের কথা।

১৯ নং ওয়ার্ডের ফারহানা বিথি, গুলেজা বেগম ও লায়লা আক্তার জানান, সিটি ও ওয়ার্ড থেকে বেশি বেশি প্রচারণার কারনেই তারা আজ সচেতন।

২৩ নং ওয়ার্ডের জুম্মাপাড়া এলাকার রিক্সা চালক আলম ও তার স্ত্রী শামিমা আক্তারের ১ বছরের ছেলে ও ৩ বছরের মেয়ে সুস্থ সবল রয়েছে। কারন হিসেবে তারা জানান, নিয়মিত ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও টিকা দেয়ার কারনে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেকেন্দার আলী জানালেন, এ ব্যাপারে মেয়র মহোদয়ের প্রচেষ্টাই বেশি রয়েছে। আর ওয়ার্ড থেকে নিয়মমাফিক প্রচারণা চলেই।

২৪ নং ওয়ার্ডের দাসপাড়ার ঝর্ণা রায়, কাজলী রায়সহ আরো কয়েকজন এ ক্যাপসুলের ব্যাপারে রসিকের প্রচারণানর প্রশংসা করেন। সেই সাথে তারা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের প্রচারণার কথাও তুলে ধরেন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর মো: জামাল উদ্দিন জানালেন মেয়রের আন্তরিকতার কথা।

রংপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখার চিকিৎসক কামরুজ্জামান ইবনে তাজ জানান, রসিক থেকে কড়া নির্দেশাবলির কারনে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর সময় স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকলকে সচেতন থাকতে হয়। তিনি জানান, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারী জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন এর দ্বিতীয় রাউন্ডে ৩৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ও বাস স্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্বাস্থকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের মাধ্যমে শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এরমধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের ১টি করে নীল রঙের এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের লাল রঙের ক্যাপসুল ।

তিনি আরো জানান, ২২ জুন প্রথম রাউন্ডে সোয়া লাখেরও বেশি শিশুকে ৬৬৭ জন কর্মীর মাধ্যমে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় ৬-১১ মাস বয়সী ১৯ হাজার ২৮৩ ও ১ বছর থেকে ৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬ জন শিশুকে। এ সময় ২৫০ এর অধিক অস্থায়ী ও স্থায়ী এবং ৮টি ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রে করা হয়। এতে রসিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির ৭৭ জন সুপারভাইজারসহ মোট ৬৬৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী উপস্থিত থাকেন। ২১ নং ওয়ার্ডের সায়লা আক্তার জানান, ছেলের ভালোর জন্যই এখন ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানা জন্য রসিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারস্থ হন। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহাবুবার রহমান মঞ্জও মেয়রের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে জানান, যেহেতু জনগণ তাদেরকে নির্বাচিত করেছেন সেহেতু দায়িত্ববোধ থেকে তারা এ সেবার কাজ করে যান।

সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার জানান, ভিটামিন এ চোখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়া ভিটামিন এ দেহের বৃদ্ধি ও বাহ্যিক আবরণের কোষ, চর্ম, দাঁত ও অস্থির গঠন এবং নানা রকম সংক্রামক রোগ হতে শরীরকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিন এ এর অভাবে শরীরে প্রাপ্ত লৌহের স্বাভাবিক ব্যবহারে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রক্ত স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন এ এর অভাবে মানবদেহে রোগ দেখা দেয় প্রকটভাবে, বিশেষ করে ৯ মাস থেকে ৪ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে। ছেলেরাই মেয়েদের থেকে বেশি করে এ রোগে আক্রান্ত হয়। ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে রাতকানা হয়ে যাওয়া। এছাড়া ভিটামিন এ-এর অভাবে ঘা হয় এবং অস্থি-ঝিল্লির প্রদাহ ও ক্যারাটোম্যালেশিয়া রোগও হতে পারে।

যে সিটির এই ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য অভিভাবকরা সচেতন হয়ে ওঠছেন সেই সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন সরকারের সবচেয়ে সফল একটি উদ্যোগ। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে শিশুদের রক্ষা পাচ্ছে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও জটিলতা কমে। শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। তিনি আরো জানানা, ব্যাপক প্রচারণার কারনেই এ সফলতা আসছে। 

নিজ ওয়ার্ডের অভিভাবকদের সচেতনতার কথা জানিয়ে প্যানেল মেয়র মাহামুদুর রহমান টিটু জানান, রসিক থেকে এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ব্যাপারে প্রচারণার থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে কড়াভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনার দেয়া হয়। সঠিকভাবে এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় কিনা তার মনিটরিং করা হয় রসিক থেকে। অনিয়ম হলেই ব্যবস্থা নেয় হয়।