• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে চীনা রাষ্ট্রদূতের দুই প্রস্তাব

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

মিয়ানমারে অত্যাচার, নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল গঠন করে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে সেদেশে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন কক্সবাজার সফররত চীনের প্রতিনিধিরা।

সোমবার টেকনাফে শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন চীনা প্রতিনিধিদল। পরে শালবাগান ক্যাম্পে সিআইসি কার্যালয়ে চীনা প্রতিনিধিদল ওই ক্যাম্পে ২০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল সেদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিলে রোহিঙ্গা নেতারা সম্মতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তাদের দুটি প্রস্তাব দেন।

বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারে নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া ভিটে-মাটি ফেরত দেয়া হলে এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে স্বেচ্ছায় সেখানে ফিরে যাবেন তারা। চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের কাছে এসব বিষয় নিশ্চিতে সহায়তার দাবি জানান রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমারে ফিরে যেতে কী সমস্যা- চীনের প্রতিনিধি দলের প্রধানের এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সে দেশে সংঘাত লেগে আছে। এখনো যেসব রোহিঙ্গা সে দেশে রয়েছে তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। এ ছাড়া ২০১২ সালে আকিয়াবে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে কয়েক মাসের জন্য একটি জায়গায় জড়ো করে রাখলেও এখন পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে তারা। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা স্বদেশে গিয়ে বিপদে পড়তে চান না। 

কী করলে মিয়ানমারে যাবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা হোসেন ও জসিম বলেন, আমাদের তিনটি দাবি পূরণ করলে কালই স্বেচ্ছায় নিজ দেশে চলে যাবো। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও কেড়ে নেয়া জমি ফেরত দিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানতে চান বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল সেদেশে পাঠালে যাবেন কিনা; এ প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা যাবেন বলে সম্মতি দেন।

এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি প্রস্তাব দেন। একটি হলো- রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সবাইকে জনপ্রতি দুটি করে মোবাইল সেট দেয়া হবে। একটি নিজে সেদেশে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন, অন্যটি এখানে পরিবারের কাছে রাখবেন। যদি মিয়ানমারে পরিস্থিতি ভালো হয়, মোবাইলে সে দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাবেন। আরেকটি হলো- প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়ে অবস্থা দেখে ঘুরে চলে আসবেন। যদি সেখানের অবস্থা ভালো দেখে আসেন তাহলে পরিবার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত যাবেন।

এদিকে মতবিনিময় শেষে শালবন শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তিনটি ঘরে যান চীনের প্রতিনিধিরা। তারা রোহিঙ্গাদের ঘর ঘুরে দেখেন, পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কিছু স্কুল ব্যাগ ও ফুটবল তুলে দেন।

এর আগে সকালে চীনের রাষ্ট্রদূত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় প্রত্যাবাসন বিষয়ে লি জিমিং জানতে চাইলে জবাবে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ সময় প্রত্যাবাসন জেটি ঘাটে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনে ওই এলাকার ছবি তোলেন চীনের রাষ্ট্রদূত।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত), নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইনচার্জ (সিআইসি) আব্দুল হান্নান, জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।