• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

লালমনিরহাটে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলায় এটি পঞ্চম বারের মতো বন্যা। এ আকস্মিক বর্নার জন্য ত্রাণ ও পূর্নবাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে লালমনিরহাট জেলায় এবার কবলিতদের সুরক্ষায় ১১৫ মেটন জিআর চাল ও ৮১০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।

ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপদসীমা হলো ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। কিন্তু সেই বিপদসীমা অতিক্রম করে বর্তমানে ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার থেকে আরো ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তথা ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহিত হচ্ছে বলে রেকর্ড করেছে পাউবো। এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পানি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ওইদিন রাত ১২টায় তিস্তা ব্যারাজের উজানে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার তথা ৫২ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহিত হয়েছে বলে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী এএসএম আমিনুর রশীদ নিশ্চিত করেছেন। এতে উজানের ঢল ও প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদী বিধৌত তীরবর্তী এলাকা সমূহে তীব্র বন্যার সৃষ্টি হয়।

এদিকে তিস্তা নদীর ফ্লাশ ফ্লাড হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সবজি ক্ষেত ও বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে দাবী করেন লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ। তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তথ্য আসার পর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানানো সম্ভব হবে।  

বুধবার দিনগত সন্ধ্যায় হঠাৎই তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়তে থাকে। বিকাল তিনটায় বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় বেড়ে উল্টো বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানিপ্রবাহ হতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত ১২টায় বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বৃহস্পিতবার সকাল ৬টার পর থেকে পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত ১৫ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ কমে গিয়ে বর্তমানে বিপদসীমার ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী(পানি পরিমাপক) এএসএম আমিনুর রশীদ বলেন, ভারতের সিকিম, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং সহ আশপাশে ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি এ পানিপ্রবাহ দ্রুত কমে যাবে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর ভারতের গজল ডোবা ব্যারাজের উজানে পানিপ্রবাহের সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। এর উপর নির্ভর করছে পানিপ্রবাহ কী অবস্থায় থাকবে। তবে পানিপ্রবাহ কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন দোলন বলেন, মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবর্ধন সহ অন্যান্য এলাকার পানিবন্দী পরিবার গুলোর মাঝে চতর্থ দফার বন্যায় ২০ মে.টন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। এখন পঞ্চম দফায় এসব পরিবারের মাঝে আরো ২৫ মে.টন জিআর চাল ও ৩শ প্যাকেট শুকনা খাবার সকাল থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আবু জাফর স্যার, জনপ্রতিনিধি ও আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত থেকে এসব ত্রাণ সামগ্রী প্রকৃত বানভাসী ও নদী ভাঙনের শিকার পরিবার গুলোর মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এটি চলমান থাকবে।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার পানিবৃদ্ধি পেয়ে আকর্ষিক বন্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দী পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় পঞ্চম ফেজের বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১১৫ মে.টন জিআর চাল ও ৮১০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চরগোবর্ধন এলাকার পানিবন্দী পরিবার গুলোর মাঝে ৩শ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২৫ মেট্রিকটন জিআর (ত্রাণ) চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।  

ত্রাণ পেয়ে ত্রাণ পেয়ে শাহিনুর রহমান(৬০) নামের এক বৃদ্ধ বলেন- এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সহায়তা করা হয়। সরকারের পক্ষে অনেকেই আমাদের সহযোগীতা করেছেন। এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলেও সরকার সবসময় আমাদের খোঁজ খবর রেখেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও ত্রাণ বিতরণ করছেন। ফলে অনেক ক্ষতির মধ্যেও কিছুটা স্বস্তির মধ্যে রয়েছি। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।