• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

লালমনিরহাটে সাধ্যের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার সূতিকাগার `ফাকল`

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০১৯  

লালমনিরহাট জেলার হাজার হাজার পরিবার তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙ্গনের কারণে বসত বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অভিজাত পরিবারের অনেক সন্তান আজ দিন মজুরের কাজ করছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের সন্তানেরা অর্থাভাবে উন্নত পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে সাধ্যের মধ্যে উন্নত পরিবেশে সুশিক্ষা নিশ্চিত করে সগৌরবে এগিয়ে চলছে লালমনিরহাটের ফাকল পুলিশ লাইনস স্কুল ও কলেজ।

জানা যায়, নিত্য অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলার চরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের জন্য ২০০৫ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার মেজবাহ উদ্দিন ফাকল পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

মাত্র ১৩ জন শিক্ষক ও মাত্র ৩'শত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে এক হাজার ১৩২ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছেন ৩২ জন। স্বল্প সময়ে সাফল্যে জেলার শীর্ষে থাকা ফাকল প্রাথমিক শাখা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক তথা কলেজ শাখায় উন্নীত হয়েছে।

বর্তমান পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক ২০১৬ সালে এ জেলায় যোগদান করেই একাদশ শ্রেণির ক্লাস চালু করেন। সেই সাথে তিনি সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যে ও ব্যাক্তিগত তহবিলে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার বর্গফুটের তিন-তলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করেন। বর্তমানে নতুন ভবনেই চলছে পাঠদান।

ফাকলে শ্রেণীকক্ষ ছাড়াও লাইব্রেরি, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শিক্ষকদের কমনরুম, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অফিস কক্ষ, ডিজিটাল ওয়াশরুম, জিমনেশিয়াম, সেমিনার কক্ষ ও অভিভাবকদের বসার স্থানও নির্মাণ করা হয়। শ্রেণিকক্ষসহ পুরো প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং করা হয়।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সফটওয়ারের মাধ্যমে শিক্ষামূলক তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইডি কার্ড প্রদর্শন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়ক পাঠদানের ব্যবস্থা থাকায় গৃহশিক্ষকের প্রয়োজন হয় না।

ফাকলে ২০১৮ সালের এসএসসি, জেএসসি ও পিএসসিতে শতভাগ পাস করে। গত কয়েক বছর ধরে ফলাফলে জেলার শীর্ষে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু একাডেমিক শিক্ষায় নয়, খেলাধূলাসহ নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সাফল্য নিয়ে আসছে ফাকল।

অভিভাবক ও স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ লাইন স্কুলটি আধুনিক এবং মানসম্মত স্কুল হিসেবে সাস্প্রতিক সময়ে জেলায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করে চলেছে। এটি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষার্থীদের পরবর্তীকালে আরও উন্নত, দক্ষ এবং ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থী হতে সহায়তা করছে।

ফাকল পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক পরিবেশে পাঠদান আবশ্যক। যেখানে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে শিক্ষকদের পাঠদান গ্রহণ করবে। আমরা সাধ্যের মধ্যে সেই উন্নত পরিবেশ দেয়ার চেষ্টা করছি।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, সকলের সাধ্যের মধ্যে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় সকল পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের ফাকলে পাঠাচ্ছেন। শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই নয়, প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সকল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে ফাকল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে জেলার সকল শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবকদের সহায়তা কামনা করে তিনি বলেন, ফাকল এখন তিস্তা ও ধরলা পাড়ের অবহেলিত জনপদে আধুনিক শিক্ষার সূতিকাগার।